বগুড়া প্রতিনিধি:
কলেজে কর্মচারী নিয়োগের নামে ৮৪ লক্ষ টাকা বাণিজ্যের অন্যতম মূলহোতা বগুড়া নন্দীগ্রামের নিমাইদিঘী আদর্শ কলেজের অধ্যক্ষ ওসমান গণির পদত্যাগের দাবিতে উত্তাল অবস্থা বিরাজ করছে কলেজ ক্যাম্পাসে। রবিবার সকাল থেকেই শত শত শিক্ষার্থী অধ্যক্ষের পদত্যাগ ও সর্বশেষ ৫ জন কর্মচারীর অবৈধ নিয়োগ বাতিলের দাবিতে কলেজ ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ সমাবেশ করেন।
অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে দুর্নীতির নানা অভিযোগ তুলে শিক্ষার্থীরা বলেন, আওয়ামী সরকারের সময় কলেজের তৎকালীন ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি আওয়ামী লীগ নেতা মায়ার ছত্রছায়ায় অধ্যক্ষ ওসমান গনি পুরো কলেজে দুর্নীতির মহোৎসব চালিয়েছেন। সভাপতি মায়া ও অধ্যক্ষের যোগসাজসে কর্মচারী নিয়োগের নামে অবৈধ প্রক্রিয়ায় আত্মসাৎ করা হয়েছে ৮৪ লক্ষ টাকা। যা নিয়ে দেশ টিভিতে অনুসন্ধানী একটি প্রতিবেদনও প্রচার হয়েছিলো। শুধু তাই নয় বাস কেনার নামে টাকা তছরুপ, উন্নয়নের নামে অর্থ আত্মসাৎ, দিনের পর দিন কলেজে অনুপস্থিত থেকেও প্রতিমাসে নিয়মিত বেতন উত্তোলন, বিনা রশিদে শিক্ষার্থীদের থেকে জোরপূর্বক বাড়তি টাকা আদায়েরও একাধিক অভিযোগ রয়েছে দুর্নীতিবাজ এই অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে।
প্রতিষ্ঠানটির অভিভাবক সদস্যরা বলেন, ক্ষমতার দম্ভে আওয়ামী লীগের ছত্রছায়ায় তৎকালীন সভাপতি ও অধ্যক্ষ মিলে বছরের পর বছর কোটি কোটি টাকা আত্মসাৎ করলেও আজ পর্যন্ত তারা কোনো ন্যায়বিচার দেখতে পাননি। সর্বশেষ নিয়োগের নামে যে ৮৪ লক্ষ টাকা আত্মসাৎ এর ঘটনা ঘটে তা নিয়েও তারা শিক্ষা বোর্ড, জেলা প্রশাসকের কার্যালয় ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে লিখিতভাবে অভিযোগ দিলেও কোন ব্যবস্থাই নেয়নি সংশ্লিষ্ট প্রশাসন। যার ফলে দিনের পর দিন দুর্নীতির অন্ধকারে ছেয়ে গেছে নিমাইদিঘী আদর্শ কলেজ যে কারণে আজও বঞ্চিত ও অবহেলার শীর্ষে রয়েছে এই প্রতিষ্ঠানটি। শুধুমাত্র অধ্যক্ষের গাফিলতির কারণে আজও এই প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের নেই নিজস্ব কোন পোশাক কিংবা পরিচয় পত্র। আর পড়াশোনার মানও গিয়ে ঠেকেছে তলানিতে।
অভিযোগের সত্যতা মিলে প্রতিষ্ঠানটির শিক্ষকদের কথাতেও। অধ্যক্ষের দুর্নীতির প্রসঙ্গে শিক্ষকদের পক্ষে সহকারি অধ্যাপক আব্দুল মান্নান ও রফিকুল ইসলাম বলেন, সর্বশেষ অবৈধ প্রক্রিয়ায় হওয়া নিয়োগ বাণিজ্যের পর থেকেই নিমাইদিঘী আদর্শ কলেজে চলছে আলোচনা ও সমালোচনার ঝড়। শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে দীর্ঘদিন থেকেই কলেজে অনুপস্থিত রয়েছে অভিযুক্ত অধ্যক্ষ ওসমান গনি। আর দাবি পুরণ না হওয়ায় শিক্ষার্থীদের এই আন্দোলনের কারণে কলেজের পরিবেশও নষ্ট হচ্ছে। তাই শিক্ষকদের পক্ষেও দ্রুততম সময়ে এই সমস্যার সুষ্ঠু সমাধানের দাবি জানান তারা।
আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা বলছেন, সারাদেশের প্রতিটি স্থানে শুরু হয়েছে সংস্কার, শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে পদত্যাগ করতে বাধ্য হয়েছে দেশের অনেক দুর্নীতিবাজ প্রতিষ্ঠান প্রধান। তাহলে আওয়ামী লীগের ছত্রছায়ায় বছরের পর বছর দুর্নীতি করে আসা নিমাইদিঘী আদর্শ কলেজের অধ্যক্ষ ওসমান গনির বিরুদ্ধে কোন অজানা কারণে এখনো ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে না তাতে হতাশা প্রকাশ করেন তারা। পাশাপাশি আগামী ৩দিনের মধ্যে অধ্যক্ষ পদত্যাগ না করলে আরো কঠোর আন্দোলনে নামবেন মর্মে হুঁশিয়ারি দেন আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা।