// মাজহার মান্নান , কবি ও কলামিস্ট
জনতার চাওয়াকে উপেক্ষা করে বিশ্বে কোন সরকার টিকে গেছে এমন ইতিহাস আমার জানা নেই। বিশ্বে সকল স্বৈরাচারের পতন হয়েছে জনরোষের মুখে। জনরোষ তৈরি হতে হয়তো সময় লাগে, কিন্তু সেটা হতে বাধ্য স্বৈরাচার হটাতে। কিভাবে লেখা শুরু করবো, কোথা থেকে শুরু করবো তা বুঝে উঠতে পারছি না। তবে কোটা আন্দোলন থেকেই শুরু করতে চাই। সাদা চোখে কোটা আন্দোলন ছাত্রদের একটি অধিকার আদায়ের আন্দোলন মনে হলেও এর প্রেক্ষাপট এক জটিল সমীকরনের ইতিহাসকেই ইঙ্গিত করে। কোটা আন্দোলন নতুন কোন আন্দোলন নয়, এর আগেও সেটা হয়েছে। জুলাই – ২০২৪ এর কোটা আন্দোলনটি চরম বৈষম্যের আর নিপীড়নের বিরুদ্ধে সোচ্চার হওয়ার এক নতুন গল্প। আর সেই গল্পটি জনতার হৃদয়কে স্পর্শ করতে সক্ষম হয়েছে। কোটা আন্দোলন শুরু করে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা, বিশেষ করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে এটি প্রথম শুরু হয়। ধীরে ধীরে এটি দেশের অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ে ছড়িয়ে পড়ে। সাধারন শিক্ষার্থীরা এই আন্দোলনে শামিল হয়। প্রশ্ন হল দেশে সরকারি চাকুরির সুযোগ কতজন পান? তাছাড়া সবাই কি সরকারি চাকুরির স্বপ্ন নিয়ে পড়াশোনা করে? সেটাও ঠিক না। কিন্তু সুযোগের অধিকারটা থাকাই বড় কথা। সাধারন শিক্ষার্থীরা কি শুধু তাদের একটি অধিকার নিয়ে রাস্তায় নেমেছিলো? মোটেও না। সাদাচোখে হয়তো সেটা মনে হতে পারে। কিন্তু গভীরে ডুব দিলে বুঝা যায় প্রকৃত ক্ষতটা কোথায়। দেশের প্রতিটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের হলগুলি ছাত্রলীগের দখলে ছিল। সাধারন শিক্ষার্থীরা ছাত্রলীগের কাছে এতটাই জিম্মি হয়ে পড়েছিলো যে তারা ভয়ে কোন কথা বলতে পারতো না। নির্যাতনের সীমা ছাড়িয়ে গিয়েছিলো সাধারন শিক্ষার্থীদের উপর। যারা শিক্ষার্থীদেরকে রক্ষা করবে তারাও ছিল দলীয় নোংরা রাজনীতি একনিষ্ঠ সমর্থক। আমি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনের কথা বলছি। প্রতিটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় দলীয় নগ্ন রাজনীতির আখড়ায় পরিনত হয়েছিলো। শিক্ষার্থীরা কতটা নির্যাতনের শিকার ছিল ছাত্রলীগ কর্তৃক সেটার প্রমাণ আমরা দেখেছি ঢাকা, রাজশাহী, জাহাঙ্গীরনগর, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় সহ অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ে। বুয়েটের মত প্রতিষ্ঠানে আবরার হত্যাকান্ড হল। প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগ দানবের ভূমিকায় অবতীর্ণ হল। শিক্ষার্থীদের মাঝে তৈরি হল পুঞ্জিভূত ক্ষোভ। যে ক্ষোভের প্রকাশ আমরা দেখলাম কোটা আন্দোলনের সময়। ছাত্রলীগ নেতা কর্মীদেরকে হল থেকে সাধারন শিক্ষার্থীরা বিতারিত করলো। এখানেই কি শেষ? সাধারন শিক্ষার্থীরা খুব ভাল করেই জানতো যে ছাত্রলীগ যদি আবার সুযোগ পায় হলে ফেরার তবে তাদেরকে কচুকাটা করবে। চরম প্রতিশোধ নিবে। তাই তারা তাদের আন্দোলনকে জোরদার করতে অনুপ্রাণিত হল।
সাধারন শিক্ষার্থীদের আন্দোলনকে সরকার কোন ধর্তব্যের মধ্যেই নিল না। কেনই বা নিবে? ১৫ বছের সরকার যে শক্তি অর্জন করেছে সেটা দিয়ে এরকম দু চার দশটি আন্দোলন ধুলিৎসাত করে দেয়া কোন ব্যাপারই না। সরকারের আত্মবিশ্বাস ছিল তুঙ্গে। কেননা এ ধরনের বহু আন্দোলন সরকার শক্ত হাতে দমন করতে সক্ষম হয়েছে। শাপলা চত্বরের লাখো মানুষের হেফাজতের তীব্র আন্দোলনকে একরাতের মধ্যে কুপোকাত করে ফেলেছিল। তখনও হতাহত কম হয় নি। কিন্তু সরকারের পেট সেটা গিলে ফেলতে পেরেছিলো। ২০১৮ তে ছাত্রদের অনেক বড় আন্দোলন হয়েছিলো সড়ক দুর্ঘটনাকে কেন্দ্র করে। সেটাকেও সরকার ছাত্রলীল ও পুলিশ দিয়ে দমন করেছিলো। ২০২৪ এর নির্বাচনের আগে বিএনপির মহাসমাবেশে জড়ো হওয়া লক্ষ নেতাকর্মীকে বল প্রয়োগ করে দমিয়ে দিয়েছিলো। এরকম আরও অনেকগুলি আন্দোলনকে সরকারি পেট হজম করে ফেলেছিল। বিরোধী দলগুলির নেতাকর্মীদের মেরুদন্ড ভেঙ্গে দেয়া হয়েছিলো যেন সোজা হয়ে দাঁড়াতে না পারে। লাঠিলীগ এবং হেলমেটলীগ নামক বাহিনী তৈরি করা হয়েছিলো সেসব আন্দোলন দমাতে। তাই কোটা আন্দোলনকে দমাতে সরকারের আর কি বা লাগে! দমনবাহিনীকে মাঠে নামিয়ে দিলেই এসব আন্দোলনের কবর রচনা হবে। দমনবাহিনীরা বরাবরের মতই মাঠে নেমে পড়লো আন্দোলন দমন করতে। তারা এতটাই মরিয়া ছিল যে আবু সাঈদের মত নিরীহ ছাত্রকে পাখির মত গুলি করে মারলো। কিন্তু তারা কি ভেবেছিলো সাঈদের হত্যা পুরো জাতির বিবেককে নাড়া দিবে? পুরো ছাত্র সমাজকে আরো ক্ষেপিয়ে তুলবে? তারা সেটা একবারও ভাবে নি। যদি ভাবতো তবে তারা থেমে যেতো। তারা থেমে যাওয়ার বদলে আরো আগ্রাসী হয়ে উঠে। আর এই আগ্রাসনের নিষ্ঠুর, নির্মম আর হৃদয়বিদারক পরিনতি জাতি দেখলো ১৮ জুলাইয়ে। বহু শিক্ষার্থীকে হত্যা করা হল। এত হত্যার পরেও সরকার নমনীয় হল না। বি এন পি – জামাতের ট্যাবলেট খাওয়াতে চাইলো জনগণকে। কিন্তু জনগণ ঐ ট্যাবলেট রাজনীতি বুঝে। এত মায়ের বুক খালি করে আরামে গদি চালিয়ে যাবেন তাতো হতে পারে না। শিক্ষার্থীরা তাদের বন্ধুদেরকে হারিয়ে হতবিহবল হয়ে পড়েছিলো কিন্তু আন্দোলনের স্প্রিট একবিন্দুও কমেনি বরং সেটা দ্বিগুন হল। শিক্ষার্থীদের রক্ত জাতির বিবেককে এতটাই স্পর্শ করেছিলো যে তারা দলে দলে ছাত্র আন্দোলনে শরীক হল। আর সরকার পতনে এমন সুযোগ বিরোধী শিবির হাতছাড়া করবে না এটা সবাই বুঝে। তারা সর্বশক্তি নিয়ে মাঠে নেমে পড়লো। কিন্তু এই আন্দোলনকে জামাত বি এন পির তকমা লাগিয়ে ভিন্ন খাতে নেয়া গেল না। কারন সব শ্রেণি পেশার মানুষ এটাতে ছিল। স্বৈরাচার সরকারের ধরনই হল বল প্রয়োগে টিকে থাকা। আর সেই নকশা অনুযায়ী সরকার দলীয় নেতাকর্মীদের উসকে দিল আন্দোলন দমন করতে। এটা যে মহা ভুল ছিল সেটাও তারা বুঝতে অক্ষম ছিল। পরিনতি কি হল? দেশ অগ্নিগর্ভে রূপ নিল। শতাধিক নিহত হল একদিনে। জনক্ষোভ এতটাই বিস্তরন হল যে লাখো লাখো ছাত্র জনতা কারফিউ ভঙ্গ করে গণভবনের দিকে আসতে লাগলো। এত দাম্ভিক, এত শক্তিশালী, এত অনড় সরকার প্রধানকে দেশ পালাতে হল। তার এই পলায়ন কি দলের জন্য লজ্জার নয়? নিজের দলকে ধ্বংসের মুখে দিয়ে তিনি পালালেন। যুদ্ধ ময়দান থেকে কাপুরুষরাই পালিয়ে থাকে। যার বাবা দেশ স্বাধীনে নেতৃত্ব দিলেন তিনি এভাবে পালিয়ে গেলেন? এরশাদ, খালেদা জিয়া জেল খাটলেন। তারাতো দেশ ছেড়ে পালান নি। আপনাকে পালাতে হল কেন? কি এমন করেছেন যে পালাতে হল। কেন নিজের মুখের লাগাম টানতে পারেন নি। কেন এত দাম্ভিক হলেন। ডক্টর ইউনুস আমাদের বড় গর্বের প্রতীক। তাকে গরীবের রক্তচোষা, সুদখোর বললেন। এমন কি পদ্মার পানিতে ফেলে দিতে চাইলেন। কেন করলেন এমনটি? আপনার বাবা মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্ব দিয়েছে। কেন তাকে ছোট করলেন? কিসের অভাব ছিল আপনার? এত জিদ কেন আপনার? কেন জনগনের আস্থার প্রতীক হতে পারলেন না? নিষ্পাপ শিক্ষার্থীদেরকে কেন রাজাকার বলতে গেলেন? মুখ ফসকে হয়ে গেলে সরি বললে কি ক্ষতি ছিল? সব কিছুতে জামাত- বিএনপির গন্ধ কেন খুঁজতে গেলেন? কেন কমন সাইকোলজি বুঝতে পারলেন না? অযোগ্য মন্ত্রীদের কেন সরাতে পারলেন না? এত উন্নয়নের পরেও জনগণ কেন ক্ষিপ্ত হল? কেন পরাশক্তিকে ম্যানেজ করতে পারলেন না? কেন ৯ দফা মেনে নিয়ে শক্ত পদক্ষেপ নিতে পারলেন না?
হাসিনা সরকারের উন্নয়ন সংগীত মানুষ আর শুনতে চাইছিলো না। মানুষ চায় তার অধিকার। কথা বলার অধিকার। জনগণের ভোটে নির্বাচিত হয়ে যে সরকার ক্ষমতায় এলো তারাই ধীরে ধীরে জনগণের বাক স্বাধীনতাকে কেড়ে নিতে শুরু করলো। খাঁচায় বন্ধি পাখিকে যতই খাবার আর আরাম আয়েশ দেয়া হোক না কেন, সে সেটাতে স্বস্তি পায় না। কারন উড়ার স্বধীনতাই তার আসল স্বস্তি। মানুষ কি চায় সেটা হাসিনা সরকার বুঝতে ব্যর্থ হল, অথবা বুঝেও স্বৈরাচারী পন্থায় দেশ চালানোর সিদ্ধান্ত নিল। এত ঐতিহ্যবাহী দল ভুল করে স্বৈরাচার হবে এটা ভাবার কোন অবকাশ নেই। পাক্কা পরিকল্পনা করেই আগাচ্ছিলো সরকার। কিন্তু জনগণের প্রাণ কেড়ে নিয়ে কি সেটা সম্ভব? কেউ কি কখনো পেরেছে? হিটলার, মুসোলিনি, সাদ্দাম, গাদ্দাফির মত মহাশক্তিধর শাসকরা কি পেরেছে? পারে নাই। কেন সরকার সেই পথে হাটলো? সে ব্যাখ্যা দিতে গেলে বহু সময়ের প্রয়োজন। সেদিকে আমি যাবো না। মানুষ কেন এত ক্ষেপে গেলো হাসিনা সরকারের প্রতি সেটাই কিছুটা বলতে চাই। হাসিনা সরকার তার শাসন ক্ষমতা দীর্ঘায়িত করার জন্য জনগনের ভোটের অধিকার কেড়ে নিলো। প্রহসনের নির্বাচন জাতি দেখতে দেখতে ক্লান্ত হয়ে পড়লো। উপরের যতই গণতন্ত্রের ঢোল বাজাক, মানুষ কিন্তু তার অধিকার বুঝে। এরপরে এলো বাকস্বধীনতার উপর হস্তক্ষেপ। আইসিটি নামক একটি কালো আইন করে কণ্ঠ রোধের মিশন শুরু হল। কতজন যে জেলে গেলো তার ইয়ত্তা নেই। বিচার বিভাগের উপর তাদের বদ নজর পড়লো। বিচার বিভাগ স্বাধীন এমন উচ্চাংগ সংগীত বাজানো হলেও জনতার বুঝতে বাকি রইলো না যে তলে তলে সেটার সমাধি রচিত হচ্ছে। এসকে সিনহাকে কিভাবে বিদায় করা হল তা জাতির বুঝতে বাকি রইলো না। মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে টার্মকার্ড বানিয়ে সব কিছুর ধবল ওয়াস চলতে লাগলো। নির্বাচন কমিশনকে দাস কমিশনে পরিনত করা হল। ঠুটোজগন্নাথ হয়ে সরকারের গোলামি করতে লাগলো নির্বাচন কমিশন। গলাচেপে ধরা হল গনমাধ্যমের। নিরপেক্ষ সাংবাদিকতা প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়লো। দু চার জন সত্য প্রকাশের চেষ্টা করলে তাদের নানাভাবে হেনস্থা হতে হল। বিদ্যাপীঠগুলিকে দলীয় রাজনীতির আখরায় পরিনত করা হল এবং পড়া লেখার কবর রচিত হল। মন্ত্রী এমপিদের অহংকার এতটাই বেড়েছিলো যে আমজনতাকে তারা ছাড়পোকা ভাবতে শুরু করেছিলো। দেশ থেকে পাচার হতে লাগলো হাজার হাজার কোটি টাকা। দেশের সংবিধানকে কেটেছিঁড়ে এমন সার্জারি করা হল যে সরকার যত যুগ খুশি তত যুগ ক্ষমতায় টিকে থাকতে পারবে। প্রশাসনে নিয়োগ সহ সর্ব স্তরের নিয়োগকে এমন দলীয়করন করা হল যে নিজ দলের বাইরে আর কারও চাকুরি পাবার অধিকার ও সুযোগ রইলো না। দুর্নীতি বাড়তে বাড়তে সেটা সীমা অতিক্রম করলো। প্রধানমন্ত্রীর পিয়নও চারশো কোটি টাকার মালিক হয়ে গেলো। প্রধানমন্ত্রী সেটা কিছুটা গর্বের সাথেই উচ্চারন করলো বলে মনে হল। পাঠ্যপুস্তকে একটি নির্দিষ্ট দল ও নির্দিষ্ট ব্যক্তির ইতিহাস পড়তে পড়তে শিক্ষার্থীরা ক্লান্ত হয়ে পড়ছিলো। দ্রব্যমূল্যের লাগামহীন উর্ধ্বগতি সাধারন মানুষকে খুব অস্বস্তিতে ফেলে দিচ্ছিলো। এছাড়াও গুম, খুন, চাঁদাবাজি, লুট এমন পর্যায়ে চলে যাচ্ছিলো যে মানুষের ধৈর্য্যের বাঁধ ভেঙ্গে যায়। গুমের নজীরতো আয়না ঘরই দিয়ে দিলো। কতটা নির্মন হলে এমনটি করা যায়!
সব শ্রেণি পেশার মানুষের পুঞ্জিভূত ক্ষোভের চুড়ান্ত পরিনতি স্বৈরাচারের পতন। ছাত্র জনতার গণঅভ্যুত্থানে এই পতন সম্ভব হয়। এই পতনের তিনদিন পর অন্তবর্তীকালীন সরকার গঠিত হয়েছে। দেশে এখনো নানা স্থানে নৈরাজ্য চলছে। প্রতিশোধের মরন নেশায় একটি গোষ্টি এই নৈরাজ্য ঘটিয়ে যাচ্ছে বলে মনে হয়। নয়া সরকারের মূল চ্যালেঞ্জ হবে এই নৈরাজ্য কঠোর হস্তে বন্ধ করা। বিগত সরকারের ১৫ বছরের সাজানো প্রশাসনকে রদবদল করে সঠিক জায়গায় নিয়ে আসাও নয়া সরকারের বড় চ্যালেঞ্জ। নয়া সরকারের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হল বিচার বিভাগে আমূল সংস্কার করে একটি স্বাধীন ও নিরপেক্ষ বিচার ব্যবস্থার প্রবর্তন করা। কবরে থাকা নির্বাচন কমিশনকে আবার জীবিত করতে হবে। এটি অনেক বড় চ্যালেঞ্জের একটি কাজ। বিভিন্ন থানায় আক্রমন হওয়ার পর পুলিশের মনোবল ভেঙ্গে পড়েছে। তাদের মনোবল চাঙ্গা করে জনসেবক পুলিশ হিসাবে তাদেরকে তৈরি করতে হবে। দুর্নীতি দমন কমিশনে বড় ধরনের সংস্কার প্রয়োজন। একটি স্বাধীন ও নিরপেক্ষ দুর্নীতি দমন কমিশন নিশ্চিত করতে হবে। মানুষকে তার ভোটের অধিকার ফিরিয়ে দেয়ার কাজটি নয়া সরকারকেই করতে হবে। শিক্ষা ব্যবস্থার নাজুক অবস্থা। এখানে হাত দিতেই হবে। বড় মাত্রার পরিবর্তন আনতে হবে। ক্যান্সারে আক্রান্ত দেহকে কেমো দিয়ে বাঁচাতে হবে। কিন্তু কাজগুলি কি এতই সহজ? রাতারাতি সব হয়ে যাবে? যুগের পর যুগের জঞ্জাল পরিস্কার করা কি এত সহজ হবে? মোটেও না। এই চ্যালেঞ্জ সমুহ মোকাবিলা করতে সময় লাগবে। কিন্তু সেই সময় কি রাজনৈতিক দলগুলি এই সরকারকে দিবে? বি এন পি সহ অন্যান্য রাজনৈতিক দল তিনমাসের মধ্যে নির্বাচন চায়। প্রায় ১৬ বছর ক্ষমতার বাইরে দলটি। তাই নির্বাচন তাদের প্রাণের দাবি। কিন্তু দাবি করলেই কি নয়া সরকার সেটা দিতে পারবে? আমার সেটা মনে হয় না। রাষ্ট্রের যে ক্ষত আছে সেটাকে দূর করতে হবে আগে। রাষ্ট্রের সংস্কার অবশ্যই করতে হবে। আর সেই সংস্কার কি ৩/৬ মাসে সম্ভব? বর্তমান সংবিধান অনুযায়ী ৬ মাসের মধ্যে নির্বাচনের কথা বলা আছে। তাহলে কি সংবিধান সংশোধনী প্রয়োজন হবে? সাংবিধানিক এই জটিলতাও নয়া সরকারকে মোকাবিলা করতে হবে। জাতির মনে জমে থাকা অনেক কষ্ট আছে। সে কষ্টগুলির কতটুকু সমাধান নয়া সরকার করতে পারবে তার জন্য অপেক্ষা করতে হবে। অসংখ্য মানুষকে লিখতে ও বলতে শুনেছি যে দেশ আবার স্বাধীন হল। অনেকে এটাকে দ্বিতীয় মুক্তিযুদ্ধ বলছেন। একটি চরম সংকটময় সময়ে ডক্টর ইউনুসের নেতৃত্বে সরকার গঠিত হল। নানা মুখী চাপ নয়া সরকারকে সামলাতে হবে। ডক্টর ইউনুসের ব্যক্তিগত ইমেজ আন্তর্জাতিক বিষয়গুলিকে সহজ করে দিবে। কিন্তু রাষ্ট্রের ভিতরে যে গভীর ক্ষত হয়েছে সেটার মেরামত অবশ্যই মহা চ্যালেঞ্জের বিষয়। শত শত ছাত্র জনতার রক্তের হিসাবতো করতেই হবে। যাদেরকে হত্যা করা হয়েছে সেটার সঠিক তদন্ত করে হত্যাকারী যেই হোক না কেন তাদের কঠোর শাস্তির আওতায় আনতে হবে। তবে ডক্টর ইউনুসের সরকার যদি ছাত্রদের স্প্রিটকে সত্যিকার অর্থে কাজে লাগাতে পারে তবে অল্প সময়ের মধ্যেই বাংলাদেশ একটি সত্যিকারের একটি গণতান্ত্রিক আদর্শ রাষ্ট্রে পরিনত হবে।