মিরপুর হোসাইনিয়া আরাবিয়া মাদরাসা‘র উদ্যোগতা মাওলানা ইউসুফ হোসাইন ও ক্বারী ইছরাইল

// মশাহিদ আহমদ, মৌলভীবাজার : মিরপুর হোসাইনিয়া আরাবিয়া মাদরাসা‘র প্রথম উদ্যোগতা ছিলেন (প্রতিষ্ঠা- ১৯৫৫ইং) মাওলানা ইউসুফ হোসাইন (মিয়াধন মিয়া/ খলিফা সাহেব) ও ক্বারী ইছরাইল হোসেন। ভূমি দাতা ছিলেন- ভাষাসৈনিক শেখ বদরুজ্জামান (অব. কৃষিবিদ), শেখ নুর মিয়া, শেখ লাল মিয়া ও শেখ আব্দুল হাসিম। ১ম দলিল- ১৯৬৭ ইং, বদরুজ্জামান ও নুর মিয়া। সর্বশেষ দলিল: বদরুজ্জামান- ১৯৮৫ ইংরেজী। প্রতিষ্ঠাকালীন মুহতামিম (হোসাইনীয়া) মাওলানা শামসুল ইসলাম ও ছাত্র (কেরাতিয়া মাদ্রাসা) ক্বারী আলতাফুর রহমান, আব্দুর রকিব খান, হাবিবুর রহমানসহ একাধিক লোকজনদের কাছ থেকে জানা গেছে- তৎকালীন বৃটিশ আমলে শেখ মোজেফর (শেখ সাহেব)- প্রথমে বাংলোয় মক্তব শুরু করেন। পরবর্তীতে উনার পুকুর পাড়ে পাঞ্জেগানা মসজিদ নির্মান করে সেখানে মক্তবের ক্লাস চালু করেন। ১৯৫৫ইং সালে ক্বেরাতিয়া মাদ্রাসা নির্মাণ করা হয়। এবং বর্তমানে নাম পরিবর্তন করে হোসাইনিয়া আরাবিয়া ইসলামী মাদরাসা নাম ধারণ করে বিভিন্ন বিভাগ চালু করা হয়। নির্দিষ্ট তথ্য সুত্রে প্রাপ্ত- পাঞ্জেগানা মসজিদ-এর ১ম ইমাম- মাওলানা ইলিয়াছ হোসাইন, ২য় ইমাম- মাওলানা ইউসুফ হোসাইন (খলিফা সাহেব)। কেরাতিয়া মাদ্রাসায় মুহতামিমগণের দায়িত্ব পালণ করেন- মাওলানা ক্বারী খোরশিদ আলী (১৯৫৫-১৯৬০ইং), মাওলানা আব্দুল মছব্বির-(১৯৬১-১৯৬৩ইং), মাওলানা আব্দুল কাইয়ুম-(১৯৬৪-১৯৬৬ইং), মাওলানা আব্দুছ ছালাম-(১৯৬৭-১৯৭১ইং)। হোসাইনীয়া মাদ্রাসায় মুহতামিমগণের দায়িত্ব পালন করেন- মাওলানা শামসুল ইসলাম (শাইস্তা মিয়া)- (১৯৭২-১৯৭৬ইং), মাওলানা আব্দুছ ছালাম- (১৯৭৭-১৯৮৯ইং), মাওলানা জুবায়ের আহমদ-(১৯৯০-১৯৯১ইং), মাওলানা সৈয়দ মাসউদ আহমদ- (খন্ডকালীন-১৯৯২ইং), মাওলানা জুবায়ের আহমদ-(১৯৯৩-১৯৯৯ইং), মাওলানা আসজাদ হোসেন (দিলসাদ-(২০০০-২০০৭ইং), মাওলানা আফজল খান- (২০০৮-২০১৫ইং), মাওলানা আসাদ আল হোসাইন- (বর্তমানে দায়িত্বপ্রাপ্ত- ২০১৫-২০২৪ইং)। সভাপতি হিসাবে দায়িত্ব পালন করেন- কেরাতিয়া মাদ্রাসায়- মাওলানা ইলিয়াছ হোসাইন- (১৯৫৫-১৯৬০ইং), মাওলানা ইউসুফ হোসাইন ( খলিফা সাহেব)- (১৯৬১-১৯৭১ইং), হোসাইনীয়া মাদ্রাসায় সভাপতি হিসাবে দায়িত্ব পালন করেন- মাওলানা ইউসুফ হোসাইন (খলিফা সাহেব)- (১৯৭২-১৯৭৬ইং), শেখ মো: বদরুজ্জামান- (১৯৭৭-১৯৯০ইং), আব্দুল মতলিব (লং মিয়া)- (১৯৯০-১৯৯২ইং), মো: ধন খান- (১৯৯৩-১৯৯৯ইং), শেখ মো: বদরুজ্জামান-(১৯৯৯-২০২২ইং), মো: ফখরুজ্জামান-(ভারপ্রাপ্ত)- (২০২২-২০২৩ইং), ও সর্বশেষ মাওলানা আব্দুল মোছাব্বির- (২০২২ থেকে চলমান -২০২৪ইং পর্যন্ত। একটি সুত্রে প্রকাশ- ১৯৭১ সালে নেতিবাচক ভূমিকার কারণে মাওলানা আব্দুছ ছালাম-কে দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি প্রদান করা হয়। পরবর্তীতে তিনি লবিং এর কারণে-(১৯৭৭-১৯৮৯ইং) পুনরায় মাদ্রাসার দায়িত্ব পালন করেন। এক সময় আসাদের ছোট ভাই আসজাদ হোসেন দিলসাদ ও আফজল খান সে ধারাবাহিকতায় মুহতামিম হিসেবে আসাদ আল হোসাইন দায়িত্বপ্রাপ্ত হন। পরিবার কেন্দ্রিক- আজফার খান প্রায় ২ বছর ৬ মাস। আসজাদ হোসেন দিলশাদ প্রায় ৭ বছর ও আফজল খান ২ বছর দায়িত্ব পালন করেন। উনারা সকলেই আসাদ আল হোসাইনের পরিবারের সদস্য ছিলেন। আসাদ আল হোসাইনের বিরুদ্ধে একাধিক অনিয়ম ও দুর্ণীতির মধ্যে উল্লেখ যোগ্য অভিযোগ- কমিটিকে না জানিয়ে বার্ষিক ওয়াজ মাহফিল, ব্যাংকে টাকা জমা না রাখা, অনুমোদনহীন ব্যয় ভাউছার তৈরি করা, সংগৃহিত অর্থ খাতায় লিপিবদ্ধ না করা, দীর্ঘ সময় দেশের বাহিরে অবস্থান, একাধিক মাদ্রাসার মুহতামিম (প্রধান শিক্ষক) হিসেবে দায়িত্ব পালন, নিজের খেয়াল খুশিমতো চলাফেরা, প্রতিষ্ঠানের নামের সাথে তার বাবার নামে স্মৃতি বিজড়িত হিসেবে সংযুক্ত করা, প্রতিষ্ঠানের আয়-ব্যয় এর হিসাব চাইলে গুম করার হুমকি প্রদান, কমিটির অনুমোধন ছাড়া রশিদ বই ছাপানো, সৌদি আরব অবস্থান, পাকিস্থানে লেখা-পড়া করা, ভারপ্রাপ্ত মুহতামিম নিয়োগে ব্যবস্থাপনা পরিষদের অনুমোদন না নেয়া। প্রায় ১৫ লাখ টাকা আতœসাৎসহ অন্যান্য অভিযোগ উঠে। দাতাদের দানকৃত অর্থ নিজের হাতে রেখে একক ভাবে তার ইচ্ছামতো ব্যয় করেন এবং উদ্ধৃত্ত টাকা মাদরাসার ব্যাংক হিসাবে জমা না রেখে ব্যক্তিগত ব্যয় নির্বাহ করেন। সৌদি আরব অবস্থান, ভারপ্রাপ্ত মুহতামিম নিয়োগ ইত্যাদি কোন কিছুতেই তিনি মাদরাসার ব্যবস্থাপনা পরিষদের অনুমোদন নেননা। মাদরাসার ব্যবস্থাপনা পরিষদের কোন সভা হতে দেননা। তার সুবিধা ও জরুরি প্রয়োজনে জরুরি সভা করলেও, মাদরাসার আয়-ব্যয়ের হিসাব দেননা। এভাবে তিনি প্রায় ১৫ লাখ টাকার অধিক অর্থ আতœসাৎ করেছেন। আয়-ব্যয়ের হিসাব চাইলেই তিনি তার আতœীয়-স্বজন ও সহযোগীদের মাধ্যমে মারমুখী আচরন ও বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি সৃষ্টি করেন। এ কারণে একাধিকবার দাঙ্গা-হাঙ্গামাও হয়েছে। তার কাছ থেকে মাদরাসার আয়-ব্যয়ের হিসাব আদায়ে ব্যর্থ হয়ে মাদরাসার ব্যবস্থাপনা পরিষদের সাবেক সভাপতি (ভারপ্রাপ্ত) ফখরুজ্জামান মাদরাসা ত্যাগ করেন। এবং মাদরাসার পাশেই আল-হেরা মিরপুর-পালপুর মাদরাসা নামে আরেকটি মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠা করেন। মুহতামিমের এই সকল অনিয়ম ও দুর্নীতির কারনে আসাদ আল হোসাইন এর বিরুদ্ধে নন জিআর ২৩/২০২৪ (সদর) মামলায় গ্রেফতারী পরোয়ানা জারী করা হয়। বর্তমানে তিনি উক্ত মামলায় পলাতক রয়েছেন। মাদরাসার আয়-ব্যয় আত্বসাৎ এর অভিযোগে উক্ত মাদরাসা কমিঠির পক্ষ থেকে মৌলভীবাজার ১নং আমল গ্রহণকারী আদালতে ১৬৭/২৪ (সদর) মামলা তদন্তাধীন রয়েছে।