// ইকবাল কবীর রনজু, চাটমোহর পাবনা
মসলা এবং ভেষজ ওষুধ হিসেবে সারা দেশে আদার ব্যাপক ব্যবহার পরিলক্ষিত হয়। বর্তমান বাজারে এ ফসলটির দামও বেশ চড়া। পরিবারের প্রয়োজন মেটাতে এবং বাড়তি কিছু আয়ের আশায় পাবনার চাটমোহরের কিছু সংখ্যক কৃষক বস্তায় আদা চাষ শুরু করেছেন।
চাটমোহর কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, চাটমোহরে চলতি মৌসুমে বস্তায় আদা চাষ করেছেন কৃষক। চাটমোহরের মথুরাপুর, ডিবিগ্রাম, ছাইকোলা, পার্শ্বডাঙ্গাসহ বিভিন্ন ইউনিয়নে এ বছর দশ হাজার বস্তায় আদা চাষ হয়েছে।
পাবনার চাটমোহরের ছাইকোলা গ্রামের আতিকুর রহমান জানান, এই প্রথম বস্তায় আদা চাষ করছেন তিনি। ইউটিউবে ভিডিও দেখে তিনি বস্তায় আদা চাষে আগ্রহী হন। শুরু করেন কার্যক্রম। মাটির সাথে গোবর সার, খৈল, ছাই, ভার্মি কম্পোষ্ট, জিংক, বোরণ মিশিয়ে তিনশ বস্তা মাটি প্রস্তত করেন। ৩৫০ টাকা কেজি দরে ২২ কেজি থাইল্যান্ডের বীজ আদা সংগ্রহ করেন দিনাজপুর থেকে। প্রতি বস্তায় ২০ থেকে ২৫ কেজি মাটি ভরে বসত ঘরের দুই পাশের ছোট উঠানটিতে বস্তাগুলো স্থাপন করেন। গত এপ্রিল মাসের প্রথম দিকে আদার কন্দগুলো রোপণ করেন বস্তার মাটিতে। কয়েক দিনের মধ্যে অংকুরোদগম হয়ে দ্রæত বেড়ে উঠছে আদা গাছগুলো। বাড়ির পরিত্যক্ত উঠানের দেড় শতাংশের মতো জায়গা কাজে লাগিয়ে লাখ টাকা আয়ের স্বপ্ন দেখছেন তিনি। চাটমোহর-কাছিকাটা সড়কের পশ্চিম পাশে সাড়িবদ্ধাবস্থায় বস্তায় সবুজ আদা গাছ দেখে মুগ্ধ হচ্ছেন পথচারীরা।
আতিকুর আরো জানান, কাছিকাটা বাজারে মোবাইল সার্ভিসিং এর কাজ করেন তিনি। বাড়ি ব্যতীত মাঠে মাত্র তিন বিঘা নিচু জমি রয়েছে তাদের। মাঠের জমিতে আদা চাষ করা সম্ভব নয় বিধায় বাড়ির উঠানেই আদা চাষ করছেন তিনি। অবসর সময়ে নিজেই পরিচর্যা করেন। রোপণের আট মাস পর আদা সংগ্রহ করা যাবে। বস্তা প্রতি এক কেজি করে আদা পেলেও ৩০০ কেজি আদা পাওয়ার আশা প্রকাশ করেন তিনি যার বর্তমান বাজার মূল্য প্রায় ৮০ থেকে ৮৫ হাজার টাকা। একটু ভাল ফলন পেলে লাখ টাকাও পেতে পারেন তিনি। এ পর্যন্ত তার খরচ হয়েছে মাত্র ১৬ হাজার টাকা। কান্ড পঁচা রোগে আক্রান্ত হলে ফলন কম পাওয়া যায় বলেও জানান তিনি। এলাকার বিভিন্ন বয়সী মানুষ বস্তায় আদা চাষ দেখতে আসছেন। এ ব্যাপারে পরামর্শ নিচ্ছেন, চাষ পদ্ধতি সম্পর্কে জানছেন। কেউ কেউ এ পদ্ধতিতে আদা চাষে আগ্রহী হচ্ছেন। থাই আদার পাশাপাশি পরীক্ষামূলক ভাবে কয়েক বস্তায় বার্মা এবং দেশী আদা চাষ করছেন। সফলতা পেলে ভবিষ্যতে আদা চাষের পরিধি বাড়াবেন বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।
বস্তায় আদা চাষ করছেন এমন অন্য কৃষকেরা জানান, বস্তায় আদা চাষে আলাদা জমির প্রয়োজন হয় না। বস্তা স্থানান্তর করা যায় বিধায় অতি বৃষ্টি বা বন্যায় ফসল নষ্ট হয় না। মাটি বাহিত রোগের আক্রমন ও কম হয়। বাড়ির আশে পাশের পরিত্যক্ত, ছায়াযুক্ত যুক্ত জায়গা কাজে লাগিয়ে বাড়তি আয় করা যায়।
চাটমোহর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা এ এ মাসুম বিল্লাহ জানান,এপ্রিল-মে মাস আদার কন্দ রোপণের উপযুক্ত সময়। আদা মুলত পাহাড়ি এলাকায় ভাল হয়। বস্তায় আদা চাষ করলে আলাদা জমি অপচয় হয় না। বস্তার মাটি নিয়ন্ত্রণ করা সহজ হয়। আদার দাম অনেক বেশি। আমরা কৃষককে আদা চাষে উদ্বুদ্ধ করছি, কারিগরি সহায়তা এবং প্রয়োজনীয় পরামর্শ দিচ্ছি। বিভিন্ন স্থানে খোঁজ করে ভাল মানের বীজ সংগ্রহে সহায়তা করছি। বস্তায় আদা চাষ করলে পরিবারের চাহিদা মেটানোর পাশাপাশি কৃষক বাড়তি আয়ও করতে পারবে।