// সঞ্জু রায়, বগুড়াঃ বগুড়ার বিদায়ী পুলিশ সুপার (অতিরিক্ত ডিআইজি পদে পদোন্নাতিপ্রাপ্ত) সুদীপ কুমার চক্রবর্ত্তী বলেছেন, বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন শিশুরা সমাজ বা রাষ্ট্রের বোঝা নয় একটু যত্ন ও ভালবাসায় তারাও সম্পদে পরিণত হয়। পড়াশোনার দিক থেকে তারাও আজ পিছিয়ে নেই। এসব শিশুদের সমাজের বোঝা মনে না করে তাদের যথাযথ পরিচর্যার মাধ্যমে দক্ষ মানবসম্পদে রূপান্তর করা সম্ভব। এ ক্ষেত্রে সচেতনতা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আজকের বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন শিশুরা যাতে ভবিষ্যতে স্বাভাবিক জীবন যাপন করতে পারে, সে লক্ষ্যে কাজ করতে হবে। এই দায়িত্ব শুধু সরকারের একার নয়, এটা আমার, আপনার, গোটা জাতির দায়িত্ব। আমরা সবাই যদি সচেতন থাকি, তবেই তারা একটি সুন্দর ভবিষ্যৎ দেখতে পারবে।
রবিবার দুপুরে বগুড়া শহরের কলোনী মূক বধির বিদ্যালয়ে আবেগাপ্লুত কণ্ঠে বিদ্যালয়ের বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিক্ষার্থীদের আয়োজনে বিদায় অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন। অতিরিক্ত ডিআইজি সুদীপ আরো বলেন, অনেক সময় দেখা যায় কিছু ক্ষেত্রে এসব শিশু অন্যদের চেয়ে অনেক বেশি দক্ষ ও পারদর্শী হয়ে থাকে। অনেক মূলধারার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিশুদের ভর্তি করতে চায় না। অথচ বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিশুদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভর্তি করার বিষয়ে নির্দেশনা দিয়েছেন সরকার। বর্তমান সরকার তাদের পড়ালেখার জন্য অনেক সুযোগ-সুবিধা দিয়ে যাচ্ছেন। বিশেষ করে মূক-বধির বিদ্যালয় যেভাবে চাহিদাসম্পন্ন শিশুদের পড়াশোনা থেকে শুরু সবকিছুর দায়িত্ব নিয়েছে এটা অবশ্যই প্রশংসার দাবিদার। দেশের যে কোন প্রান্তেই থাকুক না কেন আজীবন এসব শিশুদের জন্য কাজ করে যাওয়ার প্রত্যাশা ব্যক্ত করেন তিনি।
বিদ্যালয়ের সভাপতি ও সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান শুভাশীষ পোদ্দার লিটনের সভাপতিত্বে ও প্রতিষ্ঠানের প্রধান শিক্ষক আতাউর রহমানের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে আরো বক্তব্য রাখেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ও পুলিশ সুপার পদে পদোন্নাতিপ্রাপ্ত যথাক্রমে আব্দুর রশিদ ও মোতাহার হোসেন, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ট্রাফিক) সুমন রঞ্জন সরকারসহ বিদ্যালয়ের শিক্ষকমন্ডলী। এর আগে বিদ্যালয় চত্বরে স্মৃতি হিসেবে নিজ হাতে একটি মাল্টার গাছ রোপণ করেন বিদায়ী পুলিশ সুপার সুদীপ চক্রবত্তীর্। এছাড়াও বিদ্যালয়ের শতাধিক শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের সম্মানে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশে যুগ্ম পুলিশ কমিশনার হিসেবে পদায়ন পাওয়া সুদীপ চক্রবর্ত্তী দুপুরে ভাল মানের খাবারের ব্যবস্থা করেছিলেন এবং শিশুদের সাথে নিয়ে নিজেও খেয়েছেন পরম মমতায়। শেষে এক মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয় বিদ্যালয়ে।
সার্বিক আয়োজন প্রসঙ্গে বগুড়া মূক বধির বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আতাউর রহমান বলেন, তাদের বিদ্যালয়ের কোমলমতি শিক্ষার্থীদের জন্যে সারাবছর মানবতার দূত হয়ে বিদায়ী পুলিশ সুপার নিজের উদ্যোগে নানাভাবে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন। শুধু তাই নয় হয়তো খুব দ্রুত তিনি নতুন পদে যোগদান করবেন কিন্তু তার আগেও তিনি ভোলেননি বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিশুদের কথা। যাওয়ার আগেও শতাধিক শিক্ষার্থীকে জীবন গড়ার লক্ষ্যে নানা দিক-নির্দেশনা প্রদানসহ তাদের জন্যে আয়োজন করেছেন দুপুরের খাবারের যা সত্যিই তাদের কাছে স্বরণীয় ও পরম প্রাপ্তির হয়ে থাকবে। তিনি শিশুদের পক্ষে বিদায়ী পুলিশ সুপারের আগামীর কর্মজীবনের লক্ষ্যে শুভ কামনা ও তাদেরকে সার্বক্ষণিক সহযোগিতার জন্যে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন।