সুন্দরগঞ্জে ভাঙন আতঙ্কে ঘরবাড়ি সরিয়ে নিচ্ছে চরবাসি

/ হযরত বেল্লাল, সুন্দরগঞ্জ (গাইবান্ধা) প্রতিনিধিঃ

গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ উপজেলার সার্বিক বন্যা পরিস্থিতি উন্নতির দিকে। পানি কমতে শুরু করেছে। তরে ভাঙন তীব্র আকার ধারণ করছে। পানি কমতে শুরু করায় বিভিন্ন চরে বসতবাড়ি ও ফসলি জমি নদীগর্ভে বিলিন হচ্ছে। ভাঙন আতঙ্কে চরবাসি তাদের ঘরবাড়ি সরিয়ে নিচ্ছে। গত ১৫দিনের ব্যবধানে উপজেলা কাপাশিয়া, হরিপুর , শ্রীপুর ও চন্ডিপুর ইউনিয়নে ৫০টি বসতবাড়ি এবং ৩০০ বিঘা ফসলি জমি ইতিমধ্যে নদীগর্ভে বিলিন হয়ে গেছে। ভাঙন আতঙ্কে হাজারও পরিবার তাদের বসতবাড়ি অন্যত্র সরিয়ে নিচ্ছে। পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় চরাঞ্চলের যোগাযোগ ব্যবস্থা বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। নৌকা ছাড়া এক চর হতে অন্য চরে যাওয়া আসা করা সম্ভব হচ্ছে না। পানি কমতে শুরু করলেও দুর্ভোগ কমেনি চরবাসির। 

সুন্দরগঞ্জ উপজেলার তারাপুর, বেলকা , হরিপুর, চন্ডিপুর, শ্রীপুর ও কাপাসিয়া ইউনিয়নের উপর দিয়ে প্রবাহিত তিস্তা নদী। প্রতিবছর তিস্তায় পানি বাড়ার সাথে সাথে বা বন্যা আসলেই শুরু হয় নদী ভাঙন। চলতে থাকে বছর ব্যাপী।  নদী পাড়ের মানুষের দাবি, স্বাধীনতা পরবর্তী দীর্ঘ দিনেও স্থায়ী ভাবে নদী ভাঙন রোধ, ড্রেজিং, নদী খনন, ও সংস্কারের উদ্যোগ আজ গ্রহন করেনি সরকার। যার কারনে প্রতি বছর পাঁচ শতাধিক বসতবাড়ি, হাজারও একর ফসলি জমি বিলিন হচ্ছে নদীগর্ভে।

           কাপাসিয়া ইউনিয়নের ভাটির চর গ্রামের আলম মিয়া জানান,  নদী ভাঙন তার বসতবাড়ি বিলিন হয়ে গেছে। সেই সাথে তার ২ বিঘা জমি উঠতি তোষাপাটসহ নদীগর্ভে বিলিন হয়েছে। ভাঙনের মুখে শতাধিক বসতবাড়ি ও পাঁচ শতাধিক বিঘা ফসলি জমি। তিনি আর বলেন নদীতে পানি বাড়লে এবং বন্যা আসলে তিস্তার চরাঞ্চলের মানুষের কষ্টের সীমা থাকে না। অথচ দেখার কেউ নাই। সামন্য ত্রান বিতরণ করে দায় এড়িয়ে যান সকলে।

           হরিপুর লখিয়ার পাড়া গ্রামের জরিপ মিয়া বলেন প্রতিবছর নদীর ভাঙনে বসতবাড়ি, আবাদী জমি বিলিন হচ্ছে নদীগর্ভে। একজন চরবাসিকে মৌসুমে কমপক্ষে ৩ হতে ৪ বার ঘরবাড়ি সরাতে হচ্ছে। কিন্তু আজও স্থায়ীভাবে নদী ভাঙন রোধের কোন ব্যবস্থা হচ্ছে না।

            হরিপুর ইউপি চেয়ারম্যান মোজাহারুল ইসলামের দাবি নদী খনন, ড্রেজিং স্থায়ীভাবে ভাঙন রোধে কল্পে বহুবার চাহিদা প্রদান করা হয়েছে। কিন্তু আজও কোন ব্যবস্থা সরকারের পক্ষ হতে নেয়া হয়নি। শুধুমাত্র ভাঙন রোধে প্রাথমিক ভাবে জিও ব্যাগ ও জিও টিউব ফেলা হচ্ছে। স্থায়ী ভাবে ভাঙন ঠেকানো না হলে চরবাসির দুঃখ কোন দিনও দুর হবে না। ভাঙনে প্রতিবছর পাঁচ শতাধিক বসতবাড়ি এবং হাজারও একর ফসলি বিলিন হচ্ছে নদীগর্ভে। তিনি জানান ইতিমধ্যে তার ইউনিয়নের ২০টি বসতবাড়ি নদীগর্ভে বিলিন হয়ে গেছে। ভাঙনের মুখে হাজজারও বসতবাড়ি। অনেকে তাদের বসতবাড়ি অন্যত্র সরিয়ে নিচ্ছে।

            উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মো. ওয়ালিফ মন্ডল জানান,  পানি কমতে শুরু করায় তারাপুর, বেলকা, চন্ডিপুর, কাপাসিয়া ও হরিপুর ইউনিয়নের বিভিন্ন চরে ভাঙন শুরু হয়েছে। চেয়ারম্যানদের তথ্যের ভিত্তিত্বে জানা গেছে ইতিমধ্যে ৫০টির বেশি পরিবারের বসতবাড়ি নদীগর্ভে বিলিন হয়েছে। ভাঙনের মুখে রয়েছে হাজারও পরিবার। অনেকে ঘরবাড়ি সরিয়ে নিচ্ছে। ক্ষতিগ্রস্থদের তালিকা পাঠানো হয়েছে বরাদ্দ পেলে বিতরণ করা হবে।