-- এবাদত আলী --
আন্তর্জাতিক প্রবীণ দিবস উদযাপন উপলক্ষে বাংলাদেশ প্রবীণ হিতৈষী সংঘ পাবনা জেলা শাখার উদ্যোগে ১ অক্টোবর (২০১৮) দিন ব্যাপি বিভিন্ন অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। সংঘের সভাপতি পাবনা বারের সাবেক সভাপতি, টেবুনিয়া শিক্ষা ও সাংস্কৃতিক পরিষদের অন্যতম সদস্য অ্যাডভোকেট জহির আলী কাদেরী কর্র্তৃক একখানা আমত্রণ পত্র পাবার পর থেকেই উক্ত অনুষ্ঠানে যোগদানের জন্য বলতে গেলে প্রহর গুনছিলাম। কারণ নিজেকে বৃদ্ধ বলে স্বীকার করতে না চাইলেও বয়স সেই কবে ৬০ বছর পার হয়েছে তার হিসাব নেই। আসলে বুড়োরা কোন দিনই নিজেকে বৃদ্ধ বলে স্বীকার করতে চায়না। তবে প্রবীণ হিসেবে একটু খবরদারি ভাব প্রায় সকলের ক্ষেত্রেই বিদ্যমান। যে যাই বলুকনা কেন শিক্ষাবিদ, রাজনীতিবিদ, পেশাজীবী, ব্যবসায়ী এবং সংস্কৃতি ও গণমাধ্যমকর্মীসহ নাগরিক সমাজের বেশিরভাগই প্রবীণ। প্রবীণরাই সমাজের প্রাণ। তাই প্রবীণদের এমন সরস আড্ডায় যোগ দিতে আরো কয়েকজন সঙ্গিকে কাছে পওয়া গেল। তারা হলেন টেবুনিয়া শিক্ষা ও সাংস্কৃতিক পরিষদের প্রতিষ্ঠাতা ও সভাপতি, বিশিস্ট সাংবাদিক নাট্যকার এইচ কে এম আবু বকর সিদ্দিক, সিনিয়র সহ সভাপতি আলহাজ সাদেক আলী বিশ্বাস ও সহ-সভাপতি মেজবাহুর রহমান চৌধুরী, পরিষদের যুগ্ন সম্পাদক আনম ফজলুর রহমান, সদস্য লতিফা আকতার রিতা ও কন্ঠশিল্পী মেহেরুননেছা মৌসুমী।
বাংলাদেশ প্রবীণ হিতৈষী সংঘ পাবনা জেলা শাখার পক্ষ হতে সকাল সাড়ে ৮ায় পাবনা সদর গোরস্থানে দোয়া ও মোনাজাতের মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠানের সুচনা করা হয়। এরপর র্যালি। র্যালি শেষে আব্দুল হামিদ রোডে অবস্থিত পাবনা প্রেসক্লাবের সামনে মানব বন্ধন করা হয়।
বিকাল ৩টায় পাবনা শহরের বেলতলা রোডে শহীদ আহমদ রফিক বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় মিলনায়তনে মুল আড্ডা অনুষ্ঠানের ব্যবস্থা করা হয়। প্রবীণদের জন্য বরাবরের মত এবারেও বিনামুল্যে চিকিৎসা সেবার জন্য স¦াস্থ্য ক্যাম্পের ব্যবস্থা করা হয়। স্বাস্থ্য ক্যম্পেইনের দায়িত্ব পালন করেন ডাঃ সবনম দারা ও সহকারি প্যারামেডিক শাহিদা আকতার।
আমরা আহমেদ রফিক বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে পৌঁছলে প্রধান অতিথি পাবনার জেলা প্রসশাসক মোঃ জসিম উদ্দিন, বিশেষ অতিথি পাবনা সমাজ সেবা অধি দপ্তরের উপ পরিচালক মোঃ আব্দুল মমিন এবং বিশিষ্ট কবি মাকিদ হায়দারের সাথে সাক্ষাৎ ও ভাব বিনিময় হলো। প্রবীণ হিথৈষী সংঘ পাবনাজেলা শাখার সভাপতি অ্যাডভোকেট জহির আলী কাদেরী ও তাঁর সহধমির্নী সহ সভাপতি নিলুফার কাদেরী আমাদেরকে পেয়ে খুব খুশির ভাব প্রকাশ করলেন। আহমদ রফিক বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক হেলেনা খাতুন, প্রবীন হিতৈষী সংঘের যুগ্ম সচিব মোঃ বদরুজ্জামান মিয়া বাদল, সাংস্কৃতিক সচিব আমার সহযোদ্ধা বীর মুক্তিযোদ্ধা আলহাজ আলী রেজা, কোষাধ্যক্ষ রেজাউল করিম হেনা, প্রচার প্রকাশনা সচিব গোলাম কিবরিয়া জ্যোতিসহ সংঘের অন্যান্য কর্মকর্তা ও সদস্য বৃন্দও আমাদেরকে পেয়ে আনন্দিত।
বাংলাদেশ অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মচারি কল্যাণ সমিতি পাবনা জেলা শাখার সাবেক চেয়ারম্যান প্রফেসর আলহাজ আব্দুল ওয়াদুদ ইকবাল ও আজীবন সদস্য আলহাজ আক্কেল আলীর সঙ্গেও সাক্ষাৎ হলো। আমি উক্ত সমিতির সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান হিসেবে আমাদের মাঝে অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মচারি কল্যাণ সমিতি নিয়েও অনেক কথা হলো।
একসময় সকলেই মিলনায়তনে গিয়ে উপস্থিত হলাম। বাংলাদেশ প্রবীণ হিতৈষী সংঘ পাবনা জেলা শাখার সভাপতি অ্যাডভোকেট জহির আলী কাদেরীর সভাপতিত্বে এবং সংঘের কোষাধ্যক্ষ রেজাউল করিম হেনার সঞ্চালনায় হাফেজ মোঃ শামিম আহসান কর্তৃক পবিত্র কোরআন তেলাওয়াতের মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠানের সুচনা করা হলে জাতীয় সঙ্গীত পরিবেশন ও প্রয়াত সদস্যদের আত্মার প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন কল্পে সকলে দাঁড়িয়ে ১ মিনিট নিরবতা পালন করা হয়। স¦াগত ভাষণ দেন বীর মুক্তিযোদ্ধা আলহাজ মোঃ আলী রেজা।
অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন প্রধান অতিথি পাবনার জেলা প্রশাপসক মোঃ জসিম উদ্দিন, বিশেষ অতিথি পাবনা সমাজ সেবা অধি দপ্তরের উপ পরিচালক মোঃ আব্দুল মমিন এবং বিশিষ্ট কবি মাকিদ হায়দার। আমন্ত্রিত অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন টেবুনিয়া শিক্ষা ও সাংস্কৃতিক পরিষদেরপ্রতিষ্ঠাতা সভাপতি বিশিষ্ট সাংবাদিক ও নাট্যকার এইচ কে এম আবু বকর সিদ্দিক, বিশিষ্ট সাংবাদিক- কলামিষ্ট ও বীর মুক্তিযোদ্ধা এবাদত আলী, পাবনা জেলা স্কুলের প্রাক্তন প্রধান শিক্ষক আদুবালা শীল, চলচিত্র অভিনেতা মোঃ আশরাফ হোসেন রবি, মোছা রেহানা খাতুন ও মানবাধিকার প্রতিষ্ঠায় প্রবীণদের অবদানই শ্রেষ্ঠ বিষয়ক বক্তৃতা প্রতিযোগীতায় সর্বশ্রেষ্ঠ বক্তা হিসেবে পুরুষ্কারপ্রাপ্ত পাবনা জেলা স্কুলের ছাত্র ইসতিয়াক আহমেদ আদনান প্রমুখ। অনুষ্ঠানে প্রবীণ হিতৈষী সংঘের পক্ষ হতে কিছু দাবি দাওয়া তুলে ধরা হয়। এগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো ২০১৪ সালের ২৭ নভেম্বর বাংলাদেশের মহামান্য রাষ্ট্রপতি মোঃ আব্দুল হামিদ এক ঘোষণায় বলেছেন সরকার ষাট বছর ও তার বেশি বয়সীদের দেশের জ্যেষ্ঠ তথা সিনিয়র সিটিজেন নাগরিক হিসেবে ঘোষণা করেছেন। প্রবীণদের নিরাপদ জীবনযাপন নিশ্চিত করার ওপর গুরুত্ব দিয়ে আব্দুল হামিদ বলেন, “সমাজ ও রাষ্ট্রে বয়স্ক ব্যক্তিদের অবদান অপরিসীম। জীবনের শেষ প্রান্তে উপনীত হয়ে তারা মর্যাদা, স্বস্তি ও নিরাপদ জীবন যাপন করতে পারেন তার সব ব্যবস্থা আমাদের করতে হবে। হাসপাতাল, ব্যাংক, অফিস-আদালতসহ নাগরিক সেবার সব ক্ষেত্রে তাদের অগ্রাধিকার দিতে হবে।”
মহামান্য রাষ্ট্রপতির ঘোষণার সুত্র ধরে অনুষ্ঠানে জোর দাবি জানানো হয় যে, গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের মহামান্য রাষ্ট্রপতি কর্তৃক দেওয়া ঘোষণা ‘ সিনিয়র সিটিজেন নীতিমালা দ্রুত বাস্তবায়ন করতে হবে। সরকারি পেনশন নীতিমালা অনুকরনে বেসরকারি প্রবীণদের পেনশন চালু করতে হবে। সরকারি বেসরকারি সকল স্বাস্থ্য সেবা প্রতিষ্ঠানে প্রবীণদের বিনামুল্যে চিকিৎসা দিতে হবে এবং প্রবীণদের জন্য একটি পৃথক মন্ত্রণালয় করতে হবে।
এরপর অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি কর্তৃক মমতাময় ও মমতাময়ী এবং শ্রেষ্ঠ বক্তাকে সংঘের পক্ষ হতে ক্রেষ্ট প্রদান করা হয়।
শেষ পর্বে অনুষ্ঠিত হয় মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। এতে সঙ্গীত পরিবেশন করেন কৃঞ্চ কর্মকার, বাবুল বসাক, নমীতা, মিলন ভৌমিক,সমীর, আনম ফজলুর রহমান ও কন্ঠশিল্পী মেহেরুননেছা মৌসুমী ও নাসিমা প্রমুখ।
এক সময় সকলেরই নিজ বাসায় ফেরার তাগিদ। আমরাও এই আনন্দ আড্ডা থেকে বিদায় নিয়ে নিজ গন্তব্যে রওনা হলাম। (লেখক: সাংবাদিক ও কলামিস্ট)
এবাদত আলী
সদস্য পাবনা প্রেসক্লাব, পাবনা।