// ইকবাল কবীর রনজু, চাটমোহর (পাবনা) প্রতিনিধি
পাবনার চাটমোহরের মল্লিকবাইন গ্রামের মৌসুমী চামড়া ব্যবসায়ী আব্দুস সাত্তার সামান্য কিছু বাড়তি আয়ের আশায় সোমবার (১৭ জুন) ঈদুল আযহার দিনে ৪ হাজার ৭০০ টাকায় ৫ টি গরুর চামড়া এবং ২০০ টাকায় ১০ টি ছাগলের চামড়া কিনেছিলেন। আশা করেছিলেন চামড়াগুলো বিক্রি করে কিছু টাকা লাভ করতে পারবেন। বিক্রির জন্য কয়েক কিলোমিটার দূর থেকে ২০০ টাকা ভাড়া দিয়ে ভ্যান গাড়িতে চামড়াগুলো নিয়ে আসেন চাটমোহর পৌর সদরের ঋষি পাড়া সংলগ্ন নতুন হাটে। অনেক সময় যাবত চামড়াগুলো বিক্রি করতে পারছিলেননা তিনি। অবশেষে ছাগলের চামড়া দশটি ২০০ টাকায় এবং গরুর চামড়া ৫টি ৪ হাজার ৫০০ টাকায় বিক্রি করেন। ভ্যানভাড়াসহ তার লোকসান হয় ৪০০ টাকা। সোমবার বিকেলে হাট প্রাঙ্গনে আলাপকালে ক্ষোভ প্রকাশ করে আব্দুস সাত্তার জানান, ইতা আর করবো লয়।
কেবল আব্দুস সাত্তারই নয় তার মতো আরো কিছু ব্যবসায়ী, কোরবানীকৃত পশুর মালিকরা, এতিমখানা, মাদ্রাসার পক্ষে সংগৃহীত কাঁচা চামড়া বিক্রেতারাও চামড়া বিক্রির সময় বিপাকে পরেন। বাংলাদেশ ফিনিশড লেদার, লেদার গুডস এন্ড ফুটওয়্যার এক্সপোর্টার্স আ্যাসোসিয়েশন ঢাকার বাইরে গরুর লবন দেওয়া চামড়া প্রতি বর্গফুট ৫০ থেকে ৫৫ টাকায় বিক্রির ঘোষণা দিলেও বর্গফুটের হিসেবে চাটমোহরের কোথাও চামড়া বিক্রি হয়নি। ফরিয়ারা চামড়ার দাম কম বলায়, যারা পশু কোরবানী করেছিলেন তাদের অনেকেই ফরিয়ার নিকট চামড়া বিক্রি না করে বেশি দামের আশায় মহাজনের কাছে নিয়ে গেলেও গরু মহিষ ছাগল ভেড়ার চামড়ার ন্যায্য দাম পান নি তারা। দাম কম পাওয়ায় বিক্রেতারা ক্ষোভ প্রকাশ করেন। বিক্রির বিড়ম্বনা এড়াতে অনেকে মাদ্রাসা ও এতিম খানায় দান করে দেন কোরবানীকৃত পশুর চামড়া।
চাটমোহর পৌর সদরের আতাহার আলী জানান, ১ লাখ ৮ হাজার টাকা দামের একটি গরুর চামড়া মাত্র ৬০০ টাকায় বিক্রি করেছেন তিনি। ডিবিগ্রাম ইউনিয়নের হোগলবাড়িয়া গ্রামের মুনজিল হোসেন জানান, ১ লাখ ৪০ হাজার টাকা দামের একটি গরুর চামড়া তিনি মাত্র ৭০০ টাকায় বিক্রি করেছেন। তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে জানান, চামড়াজাত পণ্যের দাম হু হু করে বাড়লেও চামড়ার দাম বাড়ছে না। চামড়া বিক্রির টাকাটা গরীব দুস্থদের হক। দাম কম হওয়ায় গরীব দুখীরা বঞ্চিত হচ্ছেন। নিমাইচড়া ইউনিয়নের বিন্যাবাড়ি গ্রামের রফিকুল ইসলাম জানান ১ লাখ ৪০ হাজার টাকা দামের একটি গরুর চামড়া তিনি মাত্র ৭৫০ টাকায় বিক্রি করেছেন।
হাটে আলাপ কালে ছোটগুয়াখড়া সম্মিলিত মাদ্রাসার ভাইস প্রিন্সিপ্যাল শামসুল আলম তুহীন জানান, মাদ্রাসার সংগৃহীত চামড়া বিক্রির জন্য তিন ঘন্টা যাবত অপেক্ষা করছেন তিনি। ছাগলের চামড়া প্রতিটি ২০ টাকা (কাটা থাকলে ১০ টাকা) এবং গরুর চামড়া প্রতিটি ৮৫০ টাকা (কাটা থাকলে ৩৫০ টাকা), গাভীর চামড়া ৩৫০ টাকা করে দাম বলছেন চামড়া ব্যবসায়ীরা।
চাটমোহর পৌর সদরের নতুন বাজার এলাকার চামড়া ব্যবসায়ী কৃষ্ণ চন্দ্র দাস জানান, ভাল মানের গরু এবং মহিষের চামড়া ৯০০ থেকে ১০০০ টাকায়, ছাগলের চামড়া ২০ থেকে ৩০ টাকায় এবং ভেড়া ও গাড়লের চামড়া ১০ থেকে ২০ টাকায় কিনছেন তিনি। গত বছরের চেয়ে এবার চামড়ার দাম সামান্য কিছু বেশি বলে জানান তিনি। বড় শালিখা মহল্লার চামড়া ব্যবসায়ী সুজন আলী জানান, ৫০ টি গরুর চামড়া কিনেছেন তিনি। প্রতিটির গড় দাম পরেছে ৬৫০ টাকা। ছাগলের চামড়া কিনেছেন ১০ থেকে ৩৫ টাকায়। অপর চামড়া ব্যবসায়ী সুকুমার চন্দ্র দাস জানান, গরুর চামড়া ৭০০ থেকে ১০০০ টাকায় কিনেছেন তিনি। ঋষি পল্লীতে প্রায় ২ হাজারটি গরুর চামড়া এবং ৪ হাজার ছাগলের চামড়া ক্রয় বিক্রয় হয়েছে। লবন দিয়ে প্রক্রিয়াজাত করার পর নাটোর এবং ঢাকার বড় মহাজনদের কাছে চামড়া বিক্রি করবেন তারা।