// ভাঙ্গুড়া (পাবনা) প্রতিনিধি
ষষ্ঠ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের দ্বিতীয় ধাপে অনুষ্ঠিত পাবনার ভাঙ্গুড়া উপজেলায় প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর সাথে প্রায় ২৮ হাজার ভোটের ব্যবধানে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক গোলাম হাসনাইন রাসেল। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন জেলা কৃষক লীগের সহ-সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা মেজবাউর রহমান রোজ। মঙ্গলবার ইভিএমএ (ইলেকট্রিক ভোটিং মেশিন) অনুষ্ঠিত নির্বাচনে শান্তিপূর্ণভাবে ভোট প্রদান করে ভোটাররা। এছাড়া নির্বাচনে উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ন সাধারন সম্পাদক ও বর্তমান ভাইস চেয়ারম্যান গোলাম হাফিজ রঞ্জু ভাইস চেয়ারম্যান এবং বর্তমান মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান আজিদা পারভীন পাখি মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন।
জানা যায়, ষষ্ঠ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে দ্বিতীয় ধাপে ভাঙ্গুড়া উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান পদে উপজেলা আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ও সদ্য বিদায়ী মেয়র গোলাম হাসনাইন রাসেল (মোটরসাইকেল), জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য বাকি বিল্লাহ (আনারস) ও জেলা কৃষক লীগের সহ-সভাপতি মেজবাউর রহমান (ঘোড়া) প্রার্থী হন। গত ২ মে প্রতীক বরাদ্দের পর থেকে প্রচারণা শুরু করেন প্রার্থীরা। তবে বাকী বিল্লাহ অন্য প্রার্থীর প্রভাবে কর্মী সংকটের অভিযোগ তুলে নির্বাচনে প্রচারণা বন্ধ করে দেন। এতে বাকি বিল্লাহর কর্মী সমর্থকরা মেজবাউর রহমান রোজকে সমর্থন দেন। এরপর থেকেই বাকি বিল্লাহ ও মেজবাউর রহমানের কর্মী সমর্থকরা একাট্টা হয়ে গোলাম হাসনাইনের বিপক্ষে প্রচারণা শুরু করেন। মেজবাউর রহমানের বড় ভাই ও জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুর রহিম পাকন নির্বাচনে প্রচারণা চালান।
এদিকে পৌরসভার মেয়র থাকাকালীন সময়ে গোলাম হাসনাইন রাসেল উন্নত ও সৌন্দর্য্যমন্ডিত পৌরসভা গঠন করে দলীয় নেতাকর্মী সহ সাধারণ মানুষের কাছে অত্যাধিক জনপ্রিয় নেতা হন। গত ৮ বছরে তিনি মেয়র থাকাকালীন সময়ে পৌর শহরের অধিকাংশ সড়ক দ্বিগুণ প্রশস্ত করেন। প্রতিটি মহল্লায় আরসিসি রাস্তা পাকা করেন। এসব রাস্তার নিচ দিয়ে তিনি পয়:নিষ্কাশন ড্রেনও নির্মাণ করেন। শহরের সকল মহল্লায় ডাস্টবিনের ব্যবস্থা করেন। একটি সুইচের মাধ্যমে একটি ওয়ার্ডের সকল রাস্তায় বৈদ্যুতিক বাতি জ্বালানোর ব্যবস্থা করেন। শহরের মধ্যে রাস্তার দুই পাশ দিয়ে সৌন্দর্য বর্ধনে বিভিন্ন ধরনের বৃক্ষরোপন করেন। পৌরসভার বিভিন্ন সড়কে সৌন্দর্যমন্ডিত বাতি স্থাপন। শিশুদের বিনোদনের জন্য পার্ক নির্মাণ করেন। শহরের বাসস্ট্যান্ড, সিএনজি স্ট্যান্ড, রিক্সা স্ট্যান্ড সম্প্রসারণ করেন। গরম কালে ঠান্ডা পানি এবং শীতের দিনে সুপেয় গরম পানি পানের জন্য জনসাধারণের জন্য দশটি স্থানে বিদ্যুৎ চালিত ওয়াটার সাপ্লিমেন্ট এর ব্যবস্থা করেন। এতে নির্বাচনে রাসেলের পক্ষে গণজোয়ার সৃষ্টি হয়।
অপরদিকে বর্তমান চেয়ারম্যান বাকী বিল্লাহ বিভিন্ন ধরনের বিতর্কিত কর্মকাণ্ডে জনসমর্থন হারান। এর উপর গত সংসদ নির্বাচনে নৌকার বিপক্ষে নির্বাচন করায় দলীয় নেতাকর্মীরা তার দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে নেন। এতে অনেকটাই জন বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েন এই নেতা। প্রতিদ্বন্দ্বিতাকারী অন্য প্রার্থী মেজবাউর রহমান রোজ দীর্ঘদিন ধরে প্রবাস জীবন যাপন করে গত এক যুগ আগে দেশে আসেন। তবে তিনি দেশে আসলেও স্থানীয় নেতাকর্মী ও জনগণের সঙ্গে তেমন মেলামেশা করেননি। এতে স্থানীয় নেতাকর্মীসহ জনসাধারণের সঙ্গে তার তেমন সম্পর্ক হয়নি। এ অবস্থায় গত উপজেলা নির্বাচনে মেসবাউর রহমান রোজ প্রার্থী হয়ে মাত্র ১২৩৬ ভোট পান। এরপরও তিনি এ বছরও নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন।
নির্বাচন অফিস সূত্রে জানা যায়, উপজেলায় মোট ভোটার সংখ্যা এক লক্ষ ৩ হাজার ১৯১ জন। এরমধ্যে ৩৪,৮৭৩ জন ভোটার ভোট প্রদান করেন। প্রদত্ত ভোটের মধ্যে গোলাম হাসনাইন রাসেল পান ৩১ হাজার ৫৫৯ ভোট। মেজবাউর রহমান পান ২৬৬৯ ভোট। অপরপ্রার্থী বাকী বিল্লাহ পান ৫৪১ ভোট। ৯৪ টি ভোট নষ্ট হয়।
বিজয়ী প্রার্থী গোলাম হাসনাইন রাসেল বলেন, বঙ্গবন্ধুর আদর্শে উজ্জীবিত হয়ে ছাত্রলীগের রাজনীতি করেছি, যুবলীগের রাজনীতি করেছি, আওয়ামী লীগের রাজনীতি করে মেয়র হয়েছিলাম। এখন জনগণের দাবিতে পৌরসভা থেকে পদত্যাগ করে নির্বাচনে এসে উপজেলা চেয়ারম্যান হলাম। আমার পরিবার ৬০ বছর ধরে ভাঙ্গুড়ার রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। তাই আমিও জন কল্যাণের মাধ্যমে বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা গড়ার লক্ষ্যে ভাঙ্গুড়াকে উন্নত ও পরিকল্পিত একটি মডেল উপজেলা করতে চাই।
মঙ্গলবার রাত নয়টার দিকে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও সহকারী রিটার্নিং অফিসার নাজমুন নাহার আনুষ্ঠানিকভাবে এই ফলাফল ঘোষণা করেন। এ সময় তিনি জানান, শান্তিপূর্ণভাবে উপজেলার ৪৫ টি কেন্দ্রে সকাল আটটা থেকে বিকাল ৪ টা পর্যন্ত ভোটগ্রহণ হয়। এতে প্রায় ৩৪% ভোটার তাদের ভোট প্রয়োগ করেন।