মিয়ানমারে জাতিগত প্রতিরোধ গোষ্ঠীদের মোকাবিলা করতে হচ্ছে ক্ষমতাসীন জান্তা সরকারকে। ২০২১ সালে ক্ষমতায় আসার পর থেকে প্রতিনিয়তই বিদ্রোহীদের সঙ্গে লড়তে হচ্ছে সেনাবাহিনীকে। বিদ্রোহীদের মোকাবিলায় এখন দেশটির রোহিঙ্গাদের বাড়ি থেকে ধরে এনে জোর করে লড়াই করতে পাঠানো হচ্ছে। খবর দ্য গার্ডিয়ানের।
চার ঘণ্টার বেশি সময় ধরে অন্ধকারে অপেক্ষা করেছিলেন আবদুল্লাহ। জান্তা সেনারা রাখাইন রাজ্য থেকে তার ৩০ জন প্রতিবেশীকে তাদের বাড়ি থেকে বের করে দিচ্ছিল তখন। গান পয়েন্টে রেখে সবাইকে সেনাবাহিনীতে যোগ দিতে বাধ্য করেছে। তারপর সবাইকে একসঙ্গে একটি সামরিক ঘাঁটিতে নিয়ে যাওয়া হবে।
ওই ৩০ জনকে একটি স্থানীয় বিদ্রোহী গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে সেনাদের হয়ে লড়াই করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। হিউম্যান রাইটস ওয়াচ অনুসারে, ফেব্রুয়ারি থেকে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী ১ হাজার রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীকে নিয়োগ করেছে।
গত দুই সপ্তাহ ধরে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন আব্দুল্লাহ। জোর করে চাকরিতে নিয়োগের খবর শুনে সেনাবাহিনীর কাছ থেকে তিনি পালিয়ে বেড়ানোর চেষ্টা করছেন।
আবদুল্লাহ বলেছেন, ‘জেনারেল আমাদের বলেছিলেন আরাকান আর্মি এলাকায় আক্রমণ করেছে। আমাদের নিজেদের রক্ষা করার দায়িত্ব আমাদেরই। কারণ আরাকান আর্মির আক্রমণে এলাকায় সাধারণ মানুষ মারা যাচ্ছিল।’
মিয়ানমারের সামরিক বাহিনী রাখাইনে স্থানীয় বৌদ্ধ রাখাইন জাতিগোষ্ঠীর সমন্বয়ে গঠিত আরাকান আর্মির কাছে নিয়ন্ত্রণ হারিয়েছে। জাতিসংঘ বলেছে, সামরিক বাহিনীর লক্ষ্য জোর করে প্রতিমাসে ৫ হাজার লোক নিয়োগ দেওয়া।
নিয়োগ আইনটি শুধু মিয়ানমারের নাগরিকদের জন্য প্রযোজ্য হওয়ার কথা ছিল। তাত্ত্বিকভাবে রোহিঙ্গা সম্প্রদায় এর অন্তর্ভুক্ত নয়। কারণ ১৯৮২ সালে একটি আইনের মাধ্যমে দেশটির জাতিগত মুসলিম সংখ্যালঘুদের নাগরিকত্ব কেড়ে নেওয়া হয়েছিল।
আবদুল্লাহ তার মতো অন্যদেরও পালানোর জন্য প্ররোচিত করার চেষ্টা করেছিল। কিন্তু সকলেরই একটাই ভয়, তারা যদি পালায় তাহলে তাদের পরিবারের কাউকে শাস্তি পেতে হতে পারে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত আব্দুল্লাহ রাখাইন থেকে পালিয়ে বাংলাদেশে চলে আসেন।
জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনারের মিয়ানমার দলের প্রধান জেমস রোডেহেভার বলেছেন, সামরিক বাহিনী ও আরাকান আর্মি প্রায়ই রোহিঙ্গা গ্রামের দুপাশে অবস্থান নিয়েছে, মাঝখানে তারা বেসামরিকদের আটকে রেখেছে।