ফেলে আসা দিন গুলো-৫৪


–এবাদত আলী —
পাবনা শহর থেকে তিন কিলোমিটার পশ্চিমে পাবনা-ইশ্বরদী ও পাবনা-রাজশাহী মহাসড়কের গাছপাড়া বাইপাস ট্রাফিক আইল্যান্ডের দক্ষিন পাশে নিরিবিলি মনোরম ও পরিচ্ছন্ন পরিবেশে গড়ে উঠেছে ত্রিতল দালান সহ অন্যান্য অবকাঠামো। যার নাম পাবনা স্বাস্থ্য সেবা হাসপাতাল।
পাবনা ডায়াবেটিক সমিতির ব্যবস্থাপনায় নেদারল্যান্ড-বাংলাদেশ এর যৌথ সহযোগিতায় প্রতিষ্ঠিত স্বাস্থ্যসেবা উন্নয়ন প্রকল্পের অন্তর্গত পাবনা ডায়াবেটিক সমিতির এই প্রতিষ্ঠানটির শুভ উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে যোগদানের জন্য আমার সহপাঠি ও বাল্য বন্ধু পাবনা ডায়াবেটিক সমিতির সভাপতি, বাংলাদেশ ডায়াবেটিক সমিতির ন্যাশনাল কাউন্সিল সদস্য ও হেলথকেয়ার ডেভেলপমেন্ট প্রজেক্ট ম্যানেজমেন্ট বোর্ডের সদস্য, পাবনার অন্যতম সমাজ সেবক বীর মুক্তিযোদ্ধা লায়ন বেবী ইসলামের তরফ থেকে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে পাবনা প্রেসক্লাবের সদস্য হিসাবে দাওয়াত পত্র পেলাম।
৩১ জানুয়ারি’২০০৯ ,শনিবার পাবনা স্বাস্থ্যসেবা হাসপাতালের শুভ উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে যোগদানের জন্য তাই নির্ধারিত সময়ের কিছু আগেই উপস্থিত হলাম। কোলাহল বিহিন দিগন্ত প্রসারিত ধান ক্ষেতের আইল ঘেঁষে পাকা সড়কের পাশে ৩ একর জায়গার খানিক অংশ জুড়ে বেশ ছিমছাম ও সাজানো গোছানো অবয়বে দাঁড়িয়ে আছে পাবনা স্বাস্থ্যসেবা হাসপাতাল। ৩০জানুয়ারি ও ৩১ জানুয়ারি এই হাসপাতালে চলছে দু দিনব্যাপি স্বাস্থ্যক্যাম্প। তাই রাজধানী ঢাকা থেকে রোগ বিশেষঞ্জ নামি-দামি ডাক্তার ও ডায়াবেটিক সহ বিভিন্ন রোগের রোগীদের ভিড়ে এমনিতেই হাসপাতাল প্রাঙ্গন ঠাসা ঠাসি। তদুপোরি উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে যোগদানের জন্য পাবনা প্রেসক্লাব, আটঘরিয়া, ঈশ্বরদী প্রেসক্লাবের সাংবাদিক বৃন্দ, পাবনা ঈশ্বরদী ও চাটমোহর থেকে প্রকাশিত বিভিন্ন দৈনিক ও সাপ্তাহিক পত্রিকার সম্পাদক, বিভিন্ন প্রচার মাধ্যমের কর্মি, পাবনা জেলা ও উপজেলা পর্যারে কর্তা ব্যক্তি সহ পাবনা শহর ও শহরতলীর বিভিন্ন শ্রেনি পেশার অগনিত মানুষ ও সমাজ সেবীদের পদচারনায় মুখরিত অঙ্গন।
অনুষ্ঠান শুরুর বেশ কিছু আগে আমাদেরকে পুর্ব নির্ধারিত আসনে বসতে দেওয়া হলো। সকলের হাতেই একটি স্মরণিকা তুলে দেওয়া হলো। অনুষ্ঠানের সন্মানিত প্রধান ও বিশেষ অতিথি বর্গের বিলম্বে উপস্থিতি জেনে অলস সময়টুকু কাটাতে তাই স্মরণিকা তখন সহায়ক ভূমিকা পালন করেতে লাগলো।
মধ্য মাঘের শীতার্ত সকাল গড়িয়ে দুপুর প্রায় ছুঁই ছুঁই করছে। পাবনা স্বস্থ্যসেবা হাসপাতালের পুর্ব চত্তরে নির্মিত বিশাল প্যান্ডেল তখন অভ্যাগতের আগমনে কানায় কানায় পূর্ন। এক সময় নানা আঙ্গিকে সজ্জিত মঞ্চ থেকে ঘোষণা করা হলো অতিথি বৃন্দের আগমন বার্তা। সুললিত কন্ঠের অধিকারি টিভি ব্যক্তিত্ব নাতাশা খুরশিদ এর উপস্থাপনায় এবং পাবনা ডায়াবেটিক সমিতির সভাপতি বেবী ইসলামের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানের শুরুতে পবিত্র কোরআন তেলাওয়াত, তরজমা পাঠ ও সেই সাথে এলাকাবাসির পক্ষ খেকে শুভেচ্ছা বক্তব্য দেন অবসরপ্রাপ্ত ডিআইজি মোঃ রুহুলআমিন। পাবনা ডায়াবেটিক সমিতির সহ সভাপতি কাজি রফিকুল আলম স্বাগত বক্তব্য দেন। তিনি বলেন পাবনায় আজ একটি অত্যাধুনিক স্বাস্থসেবা হাসপাতালের কার্যক্রম শুরুর মাধ্যমে অবহেলিত পাবনা অঞ্চলের রোগীদের চিকিৎিসা খাতের উন্নয়ন ও সুস্বাস্থ্যের সম্প্রসারনে যোগ হচ্ছে এক নতুন মাত্রা। এই হাসপাতালে ডিজিটাল প্রযুক্তির মাধ্যমে বাংলাদেশের ও বিদেশের যে কোন বিশেষঞ্জ চিকিৎসকদের পরামর্শক্রমে রোগীদের সর্বাধুনিক চিকিৎসা সেবা প্রদান করা যাবে। এরপর বক্তব্য উপস্থাপন করেন পাবনা ডায়াবেটিক সমিতির নির্বাহী পরিচালক অধ্যক্ষ এ আর সামসুল ইসলাম। তিনি বলেন, রোগ বিশেষঞ্জ চিকিৎসকরা ঢাকর বাইরে আসতে চাননা। তাঁরা যেন ঢাকার মত এখানেও সমান সুযোগ পান তার ব্যবস্থা করা সহ এই হাসপাতালকে চ্যালেঞ্জ হিসাবে গ্রহন করা হয়েছে। বাংলাদেশ ডায়াবেটিক সমিতির মহাসচিব মোহাম্ম্দ সাইফউদ্দিন তাঁর বক্তব্যে বলেন, দেশের সকল ডায়াবেটিক রোগীর স্বাস্থ্য্সেবা নিশ্চিত করন এবং ডায়াবেটিস রোগের প্রতিরোধের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ডায়াবেটিক সমিতির যে প্রয়াস তার সাথে যুক্ত হয়েছে “হেলথকেয়ার ডেভেলপমেন্ট প্রজেক্ট বা এইসসিডিপি”। আর পাবনার গাছপাড়ায় তারই একটি উপ-আঞ্চলিক হাসপাতালের শুভ উদ্বোধন হতে যাচ্ছে। বাংলাদেশ ডায়াবেটিক সমিতির সভাপতি ও প্রজেক্ট ম্যানেজমেন্ট বোর্ড স্বাস্থ্যসেবা উন্নয়ন প্রকল্পের সভাপতি অধ্যাপক একে আজাদ খান বলেন পাবনা ডায়াবেটিক সমিতির মাধ্যমে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে স্বাস্থ্যসেবা সম্প্রসআরনে বাংলাদেশ ডায়াবেটিক সমিতি দেশের জনগনের স্বাস্থ্যসেবা ক্ষেত্রে আরেক ধাপ এগিয়ে গেল। সমিতির ইতিহাসে এটা তাই এক নতুন দিগন্তের উন্মোচন।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে আরো বক্ত্য দেন পাবনা পুলিশ সুপার জামিল আহমেদ ও সিভিল সার্জন ডাঃ সুজিতরায়। পাবনা সদর আসনের নব নির্বাচিত জাতীয় সংসদ সদস্য গোলামফারুক খন্দকার প্রিন্স এ উদ্যোগকে যুগান্তকারি পদক্ষেপ উল্লেখ করে পাবনা শহর সহ পার্শ¦বর্তী রোগীদের হাসপাতালে আনা নেওয়ার জন্য একটি বাসের ব্যবস্থা করার বিষয়ে কর্তৃপক্ষকে অনুরোধ জানান। এ প্রতিষ্ঠানের জন্য তিনি তার সাধ্যমত সহযোগিতা করার আশ্বাস দেন। অনুষ্ঠানে সন্মানিত অতিথি হিসাবে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যান মন্ত্রী ডাঃ আফম রুহুলহক বলেন, জনসাধারণের সহযোগিতায় স্বাস্থ্যসেবা জনসাধানরণের দোরগোড়ায় পৌঁছে দিতে বর্তমান সরকার বদ্ধপরিকর। তবে সরকারের উদ্যোগের পাশা পাশি বেসরকারি উদ্যোক্তা ও সংস্থাকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান। তিনি আরো বলেন মানুষের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করার জন্য নতুন করে ইউনিয়ন পর্যায়ে প্রায় ৬ হাজার কমিউনিটি ক্লিনিক প্রতিষ্ঠা করা হবে।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির ভাষনে পরিকল্পনা মন্ত্রী এয়ার ভাইস মার্শাল (অবঃ) একে খন্দকার বলেন, বর্তমান সরকারের মূল লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য হচ্ছে জাতিকে একটি ডিজিটাল বাংলাদেশ উপহার দেওয়া। সেই সুত্রে পাবনা স্বাস্থ্যসেবা হাসপাতাল হচ্ছে বাংলাদেশের প্রথম ডিজিটলি হাসপাতাল। এই হাসপাতালে দরিদ্র জনগোষ্ঠি সহ পাবনা জেলার সকল শ্রেনির মানুষ স্বল্প খরচে সু চিকিৎসা পাবে। সেই সাথে তিনি পাবনা স্বাস্থ্যসেবা হাসপাতালের নামফলক ও উন্মোচন করেন। সভাপতির ভাষণে বেবী ইসলাম বলেন উত্তরবঙ্গের এক বঞ্চিত ও অবহেলিত জনপদের নাম পাবনা। বৃটিশআমল থেকেই বঞ্চনার সূচনা। স্বাস্থ্যসেবা ক্ষেত্রেও পাবনা তুলনামূলক ভাবে অনগ্রসর। এই দীনতা লাঘব করার উদ্যেশ্যে ডাঃ ইব্রাহীমের আদর্শে উজ্জীবিত একদল উৎসাহি তরুনের হাতে ১৯৮৪ সালে একটি চালাঘরে কপর্দকহীন অবস্থায় পাবনা ডায়াবেটিক সমিতির জন্ম হয়েছিলো। স্বাস্থ্যসেবা সম্প্রসারণের ধারাবহিকতায় পাবনা শহরের উপকন্ঠে ১শ শয্যা বিশিষ্ট (ধাপে ধাপে ) স্বাস্থ্যসেবা হাসপাতালের শুভ উদ্বোধন। এখানে অত্যাধুনিক ডিজিটাল যন্ত্রপাতি ও বিশেষঞ্জ চিকিৎসকের সাহায্যে রোগীদের মানসম্পন্ন বহুমাত্রিক যেমন: জেনারেল ও স্পেশালিষ্ট কনসালটেন্সি, ইএনটি, ডেন্টাল, চক্ষু, জেনারেল ওটি, গাইনী ও অবস, ইসিজি, ইকোকার্ডিওগ্রাফি, এক্স-রে, ফোর-ডি কলার ডপলার, আলটাসনোগ্রাফি, এন্ডোসকোপি, ফার্মেসী এবং সকল প্রকার ল্যাবরেটরি টেস্ট সহ স্বাস্থ্যসেবার এক অপূর্ব সুযোগ রয়েছে। তিনি আরো বলেন পাবনা স্বাস্থ্যসেবা হাসপাতাল সংলগ্ন একটি বেসরকারি পূর্নাঙ্গ মেডিকেল কলেজ নির্মানের পরিকল্পনা রয়েছে এবং সে লক্ষ্যে হাসপাতাল সংলগ্ন বেশ কিছু জমিও কেনা হয়েছে। তিনি অভিষেক অনুষ্ঠানে উপস্থিত অতিথিবৃন্দ, স্থানীয় সূধিমন্ডলী, স্বাস্থ্যসেবা ক্যাম্পে অংশগ্রহনকারি রোগী, ঢাকা থেকে আগত প্রতিথযশা চিকিৎসক মন্ডলী, এলাকার বিভিন্ন রোগী ও এটেনডেন্ট, ক্যাম্পের আয়োজক, স্থানীয় চিকিৎসক বৃন্দ এবং অন্যান্য সকলকে শুভেচ্ছা ও ধন্যবাদ জানিয়ে অনুষ্ঠানের সমাপ্তি ঘোষণা করেন।
(লেখক; সাংবাদিক ও কলামিস্ট)।

এবাদত আলী
সদস্য পাবনা প্রেসক্লাব
তারিখ: ০৮/০৫/২০২৪.