// হযরত বেল্লাল, সুন্দরগঞ্জ (গাইবান্ধা) প্রতিনিধিঃ
গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ উপজেলার তিস্তার চরাঞ্চলে দুর্যোগ সহনীয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান কাম বন্যা আশ্রয়ন কেন্দ্র গড়তে কাজ করছে একটি বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা। পাশাপাশি প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকি মোকাবেলায় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, শিক্ষার্থী, শিক্ষক এবং স্থানীয় জনগণকে সচেতন বা দক্ষ করে গড়ে তুলতে বিভিন্ন সচেতনামুলক প্রশিক্ষণ, প্রচার-প্রচারণা চালানো হচ্ছে। বন্যাকালিন সময়ে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান চালু রাখা, শিক্ষার্থীসহ অভিভাবকদের সচেতন করতে বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা এসকেএস ফাউন্ডেশনের বাস্তবায়নে মুসলিম এইড-ইউকের আর্থিক ও কারিগরি সহায়তায় পাঁচটি প্রতিষ্ঠানে নির্মাণ, সংস্কার এবং মেরামত হচ্ছে।
উপজেলার তারাপুর, বেলকা, হরিপুর, চন্ডিপুর, শ্রীপুর ও কাপাসিয়া ইউনিয়নের উপর দিয়ে প্রবাহিত তিস্তার চরাঞ্চলে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরের ৪১টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান রয়েছে। প্রাকৃতিক দুর্যোগ বন্যা চলাকালি সময়ে ওইসব প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকে। সে কারণে শিক্ষার্থীদের পাঠদান কার্যক্রম মারাত্বকভাবে ব্যাহত হয়। বিশেষ করে উপজেলার মহিষবান্ধি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, বেলকা বটতলা দাখিল মাদ্রাসা, হরিপুর উচ্চ বিদ্যালয়ে, নাজিমাবাদ বিএল উচ্চ বিদ্যালয় ও কাশিমবাজার বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় সমুহে বিশুদ্ধ পানি, ল্যাট্রিন, বিদ্যুৎ বা সোলার প্যানেলসহ অবকাঠামোগত অবস্থা ব্যবহারের অনুপযোগি।
চরাঞ্চলের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সমুহ জরিপ করে বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা এসকেএস ফাউন্ডেশনের বাস্তবায়নে মুসলিম এইড-ইউকের আর্থিক ও কারিগরি সহায়তায় school led community resilience to disaster and climate risk(SLCRDCR) প্রকল্পে ইতিমধ্যে পাঁচটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পাঠদান উপযোগী শ্রেণি কক্ষ, অফিস কক্ষ, ল্যাট্রিন, নলকুপ, ওয়াশ রুম, বাউন্ডারি ওয়াল, স্কুলে যাওয়া আসার রাস্তা, বিদ্যুৎ বা সোলার প্যানেল ব্যবস্থা, অগ্নি নির্বাপক যন্ত্র, শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের বসার, চেয়ার টেবিল, বেঞ্চ মেরামতের কাজ করছে।
মহিষবান্ধি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. মোসলিম আলীর ভাষ্য, বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা এসকেএস ফাউন্ডেশনের বাস্তবায়নে মুসলিম এইড-ইউকের আর্থিক ও কারিগরি সহায়তায় school led community resilience to disaster and climate risk(SLCRDCR) প্রকল্প চরের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সমুহ দুর্যোগ সহনীয় করতে শ্রেণিকক্ষ, ল্যাট্রিন, ওয়াশরুম নির্মাণ , শিক্ষক, শিক্ষার্থী এবং স্কুল কমিউনিটিকে দুযোর্গ মোকাবেলায় প্রশিক্ষিত করে গড়ে তুলছে। দুযোর্গ মোকাবেলায় এসব কর্মকান্ড শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও স্থানীয় কমিউনিটিকে অনেকটা সহায়তা করবে। চরের সবগুলো প্রতিষ্ঠানকে দুর্যোগ সহনীয় করে গড়ে তুলতে কাজ করার দাবি জানান তিনি।
চরের ছেলে মেয়েদের বন্যা আসার আগে, চলাকালিন এবং বন্যা পরবর্তী সময়ে কি করতে হবে তা নিয়ে কাজ করছে বেসরকারি এনজিও সংস্থা। এটি একটি চমৎকার উদ্যোগ জানান মহিষবান্ধি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের অভিভাবক আনোয়ারুল ইসলাম। তার ভাষ্য চরের স্কুল পড়ুয়া ছেলে মেয়েদের নৈতিক শিক্ষা, সাঁতার শেখানো, সাহসী মনোভাব গড়ে তোলা, সেই সাথে অভিভাবকদের শিশু সুরক্ষা ও জেন্ডার বিষয়ে সচেতনমুলক কাজ করছে সংস্থটি। দুর্যোগ কালিন সময় এসব বিষয় শিক্ষার্থী এবং স্থানীয় কমিউনিটিকে অনেকটা সহায়তা করবে।
হরিপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের অভিভাবক মো. ফুল মিয়া জানান, দুর্যোগ সহনীয় প্রতিষ্ঠান গড়তে প্রতিষ্ঠানটিতে ল্যাট্রিন, ওয়াশরুম, যোগাযোগ ব্যবস্থার জন্য যেসব কাজ করছে সেটি প্রাকৃতিক দুর্যোয়ের সময় শিক্ষার্থী ও স্থানীয় কমিউনিটির অনেকটা কাজে লাগবে। এছাড়া প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবেলায় অগ্নি নির্বাপক যন্ত্র, বজ্রনিরোধক যন্ত্র স্থাপন এবং তার ব্যবহার বিধি সংক্রান্ত বিষয়ে সচেতনা বৃদ্ধি শিক্ষার্থী ও কমিউনিটি সহনশীল হয়ে গড়ে উঠছে।
নাজিমাবাদ বিএল উচ্চ বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী ফরমান আলী জানান, বন্যা আসলে বিদ্যালয় মাঠে যেন পানি না ঢুকে পড়ে সে জন্য কাজ করা হচ্ছে। এটি বাস্তবায়ন হলে বন্যার সময় পাঠদান চালু রাখতে অনেকটা সহায়তা করবে।
কাশিমবাজার বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আব্দুল ওয়াহেদ জানান, চরের প্রতিষ্ঠানের দুর্বল অবকাঠামো মেরামতে কাজ করছে বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা এসকেএস ফাউন্ডেশনের বাস্তবায়নে মুসলিম এইড-ইউকের আর্থিক ও কারিগরি সহায়তায় school led community resilience to disaster and climate risk(SLCRDCR) প্রকল্প।
উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার আব্দুল মমিন মন্ডল জানান, বন্যার সময় চরের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো আশ্রয় কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহার উপযোগী গড়ে তুলতে কাজ একটি বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা। এটি অত্যন্ত ভাল উদ্যোগ। চরের সবগুলো প্রতিষ্ঠানে কাজ করতে হবে
উপজেলা দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটির সদস্য সচিব ও উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মো. ওয়ালিফ মন্ডল জানান, চরাঞ্চলের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো দুর্যোগ মোকাবেলার জন্য উপযোগী করতে ইতিমধ্যে একটি বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা কাজ করছে। এখানে উপজেলা প্রশাসন ও দুযোর্গ ব্যবস্থানা কমিটি পরক্ষভাবে কাজ করছে। পর্যায়ক্রমে চরের সবগুলো প্রতিষ্ঠানে কাজ করার পরামর্শ প্রদান করা হয়েছে।