// অপূর্ব লাল সরকার, আগৈলঝাড়া (বরিশাল) থেকে :
সৌদি প্রবাসী হেনা আক্তার সৌদি আলরাজী মানি এক্সচেঞ্জ থেকে জনতা ব্যাংক লি: আগৈলঝাড়া শাখায় তার বোন রিনা বেগমের হিসাব নম্বরে মায়ের চিকিৎসার জন্য ২০১৯ সালের ডিসেম্বর মাসে ৫০ হাজার টাকা পাঠায়। রিনা বেগম বারবার আগৈলঝাড়া জনতা ব্যাংকে টাকা উত্তোলনের জন্য গেলে তৎকালীন শাখা ব্যবস্থাপক তালবাহানা করে বলে টাকা আসে নাই। আর টাকা না পাওয়ার কারনে হেনা আক্তারের মা চিকিৎসার অভাবে মারা যায়। সৌদি থেকে হেনা আক্তারের পাঠানো টাকা অদ্যাবধি তার বোন রিনা বেগমের হিসাব নম্বরে জমা হয়নি বলে জানা গেছে। চিকিৎসার অভাবে মায়ের মৃতুর জন্য হেনা আক্তার জনতা ব্যাংকের গাফিলতিকে দায়ী করেছেন।
স্থানীয় ও অভিযোগসূত্রে জানা গেছে, বরিশাল উপজেলার বাকাল গ্রামের মৃত. মো. গনি সরদারের মেয়ে হেনা আক্তার পবিবারের অভাবের কারণে সৌদি আরবে গৃহকর্মীর কাজ করতে যায়। তার মা রহিমা বেগমের অসুস্থ কথা শুনে মায়ের চিকিৎসার জন্য হেনা সৌদি আরব থেকে ২০১৯ সালের ২ ডিসেম্বর সৌদি আলরাজী মানি এক্সচেঞ্জ প্রেরিত রেমিটেন্স নং ২৪৮৮৩৬১২ এর মাধ্যমে ৪৪ হাজার ৪শ’ ৬৪ টাকা তার বোন রিনা বেগমের জনতা ব্যাংক আগৈলঝাড়া শাখার চলতি হিসাব নং- ১০২১০০৩২১০ পাঠায়। গ্রাহক রিনা বেগম আগৈলঝাড়া জনতা ব্যাংকের শাখায় ওই টাকা উত্তোলনে জন্য ব্যাংকের তৎকালীন ব্যবস্থাপক প্রদীপ কুমার বিশ্বাস কাছে একাধিকবার গেলেও টাকা পায়নি। টাকার জন্য দীর্ঘদিন ব্যাংকে ধর্ণা দিয়েও টাকা না পাওয়ায় তার মা রহিমা বেগম বিনা চিকিৎসায় মারা যায়। রহিমা বেগমের মৃত্যুর জন্য হেনা ও রিনা বেগম এবং স্থানীয় এলাকার লোকজন জনতা বাংককে দায়ী করে ক্ষোভ প্রকাশ করেছে।
এব্যাপারে রিনা বেগম বলেন, ৪বছর পূর্বে আমার বোন আমার মায়ের চিকিৎসার জন্য সৌদি থেকে আমার কাছে আগৈলঝাড়া জনতা ব্যাংকের শাখা ৫০হাজার টাকা পাঠায়। তৎকালীন শাখা ব্যবস্থাপক প্রদীপ কুমার বিশ্বাস কাছে বারবার গেলেও টাকা পাইনি। আমার মা অসুস্থ তার চিকিৎসা করানো কথা বলে তার কাছে মিনতি করেও টাকা পাইনি। এরপরে আমার মা চিকিৎসার অভাবে মারা গেলো। বিদেশ থেকে টাকা পাঠানো তথ্য প্রমাণ নিয়ে ব্যাংকে গিয়ে ২০২২ সালে শাখা ব্যবস্থাপকের কাছে একটি লিখিত অবেদন করেছি। আবেদন করার পরেও ৪বছর অদ্যাবধি টাকা পাই নাই।
এব্যাপারে সৌদিপ্রবাসী হেনা আক্তার বলেন, আমি সৌদি আরব থেকে কঠোর পরিশ্রম করে অসুস্থ মায়ের চিকিৎসা জন্য জনতা ব্যাংকের মাধ্যমে বোনের কাছে টাকা পাঠিয়েছিলাম। দীর্ঘদিনেও টাকা না পাওয়ায় আমার মা বিনা চিকিৎসায় মারা যায়। আমার মায়ের মৃত্যুর জন্য ব্যাংকই দায়ী।
আগৈলঝাড়া জনতা ব্যাংকের তৎকালীন শাখা ব্যবস্থাপক প্রদীপ কুমার বিশ্বাসের কাছে বিষয়টি জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি ওই শাখায় থাকাকালীন সময় রিনা বেগম নামে কোন গ্রাহক আমার কাছে আসেনি। এবিষয়ে আমার কিছুই জানা নেই।
এব্যাপারে জনতা ব্যাংক লি: আগৈলঝাড়া শাখা বর্তমান ব্যবস্থাপক মো. শহিদুল হক জানান, আমি যোগদানের পরে ঘটনাটি জানতে পেরে ২০২২ সালের ১৩ জুলাই জনতা ব্যাংকের ঢাকার প্রধান কার্যালয়ের চিঠি দিয়ে অবহিত করি। প্রধান কার্যালয় থেকে আমাকে জানিয়েছে সৌদি আরব থেকে হেনা আক্তারের পাঠানো টাকা চাঁদপুর জেলার বালিথুবা বাজার জনতা ব্যাংক শাখায় রিনা বেগম নামে এক গ্রাহকের হিসাব নম্বরে টাকা জমা হয়েছে। সেই গ্রাহক টাকা উত্তোলন করে নিয়ে গেছে।
জনতা ব্যাংকের বরিশাল জিএম মোহাম্মাদ আলী বলেন, এঘটনা আমার জানা ছিলনা। এখন জানতে পেরেছি। তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এব্যাপারে জনতা ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ের (বৈদেশিক শাখা)’র ডিজিএম মো. মাহাবুবুর রহমান বলেন, আমি নতুন দায়িত্বে যোগদান করেছি। বিষয়টি আমার জানা ছিলোনা। সাংবাদিকদের মাধ্যমে তা জানতে পেরেছি। এখন গ্রাহক যাতে টাকা ফেরৎ পেতে পারে তার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা করা হবে।