// সবশেষ যখন ক্রিকেট মাঠে গণমাধ্যমের মুখোমুখি হয়েছিল সেবার ছিলেন বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার এবং জাতীয় দলের অধিনায়ক। তবে মঙ্গলবার যখন মুখোমুখি হলেন তার নামের পাশে যুক্ত হয়েছে আরেকটি টাইটেল। তা হল ‘এমপি সাকিব’। গেল ৭ জানুয়ারি নিজ জন্মস্থান মাগুরা-১ আসন থেকে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রথম বারের মতো অংশ নিয়েই বিপুল ভোটে জয়ী হয়েছেন সাকিব।
তাই গতকাল গণমাধ্যমের মুখোমুখি হয়ে সবার আগে যেই প্রশ্নের মুখোমুখি হতে হয়েছে তা হলো, কোন পরিচয়ে ডাকবে তাকে সংসদ সদস্য নাকি অধিনায়ক। জবাবে কিছুটা মজা করেই বলেন, ‘যা ইচ্ছা ডাকেন, সমস্যা নেই।’
গেল রবিবার নির্বাচনে জয়ী হয়েই সোমবার পা রাখেন মিরপুর শের-ই-বাংলা স্টেডিয়ামে। খানিকক্ষণ ইনডোরে অনুশীলন সেরে ফিটনেস নিয়ে কাজ করেন। গতকালও সকাল সকাল হাজির হন মিরপুরে। তবে এদিন সেখানে তিনি গিয়েছিলেন নিজের কিট ব্যাগ নিতে। এরপরই তিনি দুপুরে চলে আসেন বসুন্ধরা স্পোর্টস কমপ্লেক্সে। সেখানে যোগ দেন বিপিএল দল রংপুর রাইডার্সের অনুশীলনে। সেখানে শুরুতে হালকা দৌড়ানোর পর মিনিট বিশেক স্পিন বোলিংয়ের বিপক্ষে ব্যাটিং করেন জাতীয় দলের অধিনায়ক।
এরপর গণমাধ্যমের মুখোমুখি হয়ে নির্বাচনে জয়ী হয়েই অনুশীলনে ফেরার বিষয়ে। নির্বাচন নিয়ে এত পরিশ্রমের পরও কীভাবে সম্ভব হলো, এত দ্রুত কীভাবে মাঠে ফিরলেন। জবাবে সাকিব বলেন, ‘বিপিএল শুরু হচ্ছে। প্রস্তুতি লাগবে। প্রায় আড়াই মাসের মতো হয়েছে আমি মাঠের বাইরে। এর মধ্যে কোনো ফিটনেসের কাজ করতে পারিনি, স্কিলের কাজ করতে পারিনি। স্বাভাবিকভাবেই তৈরি হওয়ার জন্য সময় লাগবে। এ কারণেই আসলে সময় নষ্ট করতে চাইনি।’
এর আগে সাকিব দলের হয়ে সবশেষ মাঠে নামেন ভারতে অনুষ্ঠিত হওয়া ওয়ানডে বিশ্বকাপে, নভেম্বরের শুরুতে। গ্রুপ পর্বে নিজেদের অষ্টম ম্যাচে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে আঙুলের চোট পাওয়ার পর সাকিব বিশ্বকাপের শেষ ম্যাচ খেলতে পারেননি। একই কারণে মিস করেন নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে হোম অ্যান্ড অ্যাওয়ে সিরিজ। তবে এই সময়টায় মাঠের বাইরে ছিলেন নির্বাচনি প্রচারণায় ব্যস্ত। এরপর তো নিজ জন্মস্থান মাগুরার এমপি হয়েই মাঠে ফিরলেন। তো সময় ধরে মাঠের বাইরে থাকায় ক্রিকেট মাঠকে মিস করেছেন কিনা জানতে চাইলে? উত্তরে সাকিব বলেন, ‘ইনজুরিতে ছিলাম। তাই মিস করার কোনো সুযোগ ছিল না। মানে আমি ফিট থাকলেও তো খেলতে পারতাম না। ইনজুরিতে যেহেতু ছিলাম। মিস করার সুযোগ আসেনি সেভাবে।’ যেই চোটের কারণে মাঠের বাইরে ছিল তার বর্তমান পরিস্থিতি জানিয়ে টাইগার অধিনায়ক আরো বলেন, ‘অনুশীলন শুরু করেছি। আরো কিছু দিন সময় লাগবে। বোলিং আঙুল যেহেতু, স্বাভাবিকভাবেই সময় লাগবে। তবে উন্নতি হচ্ছে ভালোই।’
গেল বছর এশিয়া কাপের আগ থেকেই দেশের ক্রিকেটে বিভিন্ন ধরনের নাটকীয় পরিবেশ সৃষ্টি হয়। সে সময় হুট করে অবসরের ঘোষণা দেন দেশ সেরা ওপেনার ও তত্কালীন ওয়ানডে ফরম্যাটের অধিনায়ক তামিম ইকবাল। পরে অবসর ভেঙে ফিরলেও নেতৃত্বের ভার ছেড়ে দেন তিনি। পরে সেই দায়িত্ব গিয়ে ওঠে সাকিবের কাঁধে। যদিও বিশ্বকাপের আগে এক গণমাধ্যমে তিনি জানিয়েছিলেন বিশ্বকাপের পর তিনিও এই ফরম্যাটের নেতৃত্ব ছেড়ে দিবেন। তবে এরপর আর এই প্রসঙ্গে কোনো আলোচনা হয়নি। যদিও কয়েক দিন আগে বিসিবির ক্রিকেট অপারেশন্স চেয়ারম্যান জালাল ইউনুস জানিয়েছিলেন সাকিব থাকছেন। এ বিষয়টি নিয়ে কী ভাবছেন সাকিব জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘না, এগুলো নিয়ে এখনো কথা হয়নি। তবে বোর্ডের সঙ্গে কথা হবে, যখন কথা হবে তখন আলোচনাও হবে। এরপর সবাই মিলে যেটা ভালো সিদ্ধান্ত মনে হবে সেটাই নিব।’
এদিকে কয়েক দিন আগে প্রকাশ পেয়েছে চলতি বছর যুক্তরাষ্ট্র ও ওয়েস্ট ইন্ডিজের যৌথ আয়োজনে অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের সূচি। ঐ টুর্নামেন্টটিতে বাংলাদেশ রয়েছে ডি গ্রুপে। তুলনামূলকভাবে এই গ্রুপটি বেশ কঠিনও। তার সঙ্গে রয়েছে দুই দেশে ভ্রমণ ক্লান্তিও। তবে সেসব নিয়ে ভাবছেন না টাইগার অধিনায়ক। কারণ সম্প্রতি সময়ে টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটে দল ভালো করছে। গেল বছর এই ফরম্যাটে চারটি সিরিজ খেলেছে বাংলাদেশ যার মধ্যে হারেনি একটিতেও। সেই ধারাবাহিকতা বজায় রেখে সাকিবও বিশ্বকাপ নিয়ে শোনালেন আশার কথা। বলেন, ‘প্রতিবারই তো বেশি প্রত্যাশা থাকে। এবারও তাই থাকবে। যেহেতু টি-টোয়েন্টি সংস্করণ আমরা শেষ এক বছর খুব ভালো খেলেছি। দলটা এখন ভারসাম্যপূর্ণ, ছন্দেও আছে। সবাই ভালো খেলছে। নিউজিল্যান্ডেও ভালো খেলেছে। তাই স্বাভাবিকভাবে প্রত্যাশা তো বেশি থাকবেই। খেলা হবে যুক্তরাষ্ট্র ও ওয়েস্ট ইন্ডিজে। যেখানে হয়তো আমাদের ক্রিকেটটা বেশি মানানসই হবে। তো আমাদের সুযোগ আছে।’