// নারী ফুটবল লিগ আয়োজন করায় ক্লাব ফুটবল থেকেও খেলোয়াড়েরা বাড়তি টাকার মুখ দেখছিলেন। বিশেষ করে বসুন্ধরা কিংস নারী ফুটবলের জন্য অর্থভান্ডার খুলে দিয়েছিল। এই প্রতিষ্ঠানের উদ্যোগে সাবিনা, সানজিদা, কৃষ্ণারা প্রত্যাশার বাইরে বাড়তি পারিশ্রমিক পেয়েছেন।
বিশেষ করে বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান আহমেদ আকবর সোবহান নারী ফুটবলের প্রতি খুব ইতিবাচক। সামঞ্জস্যপূর্ণ পারিশ্রমিকের বেশি তুলে দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছিলেন। চকচকে টাকা হাতে পেয়ে নারী ফুটবলাররা পরিবারের কাছে পাঠিয়েছেন। লিগ চলাকালীন খেলোয়াড়দের আবাসিক ব্যবস্থা যেন জৌলুসপুর্ণ হয়, সেই পরিবেশ করে দেওয়া হয়েছিল।
টানা তিন বার বসুন্ধরা কিংস নারী লিগে চ্যাম্পিয়ন হয়। তারাই জাতীয় নারী দলের সবচেয়ে ভালো ফুটবলারদের দলে নিয়েছে এবং সবচেয়ে বেশি পারিশ্রমিকও দিয়েছে, খাওয়া-দাওয়া থেকে শুরু করে সবকিছুতেই নারী ফুটবলারদের মধ্যে আভিজাত্য এনে দিয়েছিল বসুন্ধরা কিংস। সেই দল এবার নারী ফুটবল লিগে নাম লেখায়নি। তারা দল গড়বে না।
আচমকা এই সিদ্ধান্তে মাথায় আকাশ ভেঙে পড়েছে সানজিদাদের। কারণ, বসুন্ধরা কিংস তাদের যে পারিশ্রমিক দিয়ে খেলাত, অন্য কোনো দল সেটি করতে চায় না। একসঙ্গে জাতীয় দলের একঝাঁক ফুটবলারকে নিয়ে একসঙ্গে রাখার জন্য যতটুকু নিরাপত্তা দরকার, তা নিশ্চিত করতে সব দল পারবেও না। বসুন্ধরা এ সবই ঠিকঠাকমতো করে আসছিল। এবার তারা সরে গিয়েছে।
জানা গেছে, জাতীয় দলের নারী ফুটবলাররা ধরেই নিয়েছিল, আসছে লিগেও তারা বসুন্ধরায় খেলবে এবং সেখান থেকে চড়া পারিশ্রমিক আদায় করবে। এই খবর কিংসের কাছে পৌঁছে গেলে কিংসও নারী দল গঠনের পরিকল্পনা থেকে সরে যায়। কিংসের কাছে খবর আছে, যারা টানা তিন মৌসুম কিংসে খেলেছেন, তারা এবার নিজেরাই নিজেদের পারিশ্রমিক নির্ধারণ করবেন। সেটা না হলে খেলবেন না। পারিশ্রমিকের অঙ্ক শুনে কেউ কেউ মন্তব্য করেছেন—এটা দুঃসাহস। সবাই মিলে একজোট হয়ে পারিশ্রমিক চূড়ান্ত করবেন আর সেটা কিংস মেনে নেবে, এটা তাদের ভুল চিন্তা।
কিংসের সভাপতি ইমরুল হাসানের কান পর্যন্ত গেছে নতুন মৌসুমের জন্য খেলোয়াড়েরা এক টেবিলে বসেছিলেন। কীভাবে আকাশচুম্বি পারিশ্রমিক চাইবেন, সেটিও নাকি চূড়ান্ত করা হয়েছিল। যেভাবে তারা বাফুফের ক্যাম্পে অবস্থান করে অনুশীলন বয়কট করেছিলেন, সেভাবেই কিংসের কাছ থেকেই চাহিদামতো পারিশ্রমিকও আদায় করবেন। একেকজন প্রায় ১০ থেকে ১৫ লাখ টাকা, কারো পারিশ্রমিক ২০ লাখ টাকা পর্যন্ত চিন্তা করা হয়েছিল। এভাবে চাইবেন। পরে কমাবেন। এসব পরিকল্পনার কথা শুনে কিংস সরে গেছে। দলই করবে না।
ইমরুল হাসান বলেছেন, ‘আমরা লাইসেন্সিং করিনি, তাই হয়নি। তারিখ অনুসারে কাগজপত্র জমা দিতে পারিনি। আর আমরা কি খেলোয়াড়দের এত টাকা দিতে পারব! আমরা শুনেছি ওরা একসঙ্গে বসেছিল।’ প্রশ্ন ছিল, কিংস একাই কেন সব খেলোয়াড় চুক্তিবদ্ধ করে? ইমরুল হাসান জানালেন, ‘কেউ নেয় না। কেউ যদি নারী ফুটবলারদের নিত, তাহলে তো আমরা সব খেলোয়াড় পেতাম না। কেউ নেয় না বলেই তো আমরা সব খেলোয়াড় নিয়েছিলাম। এখন তো দলই করতে পরিনি। এখন দেখুন।’
বসুন্ধরা কিংস সরে যাওয়ায় বাফুফেও অখুশি নয়। কারণ বসুন্ধরা কিংস খেলোয়াড়দের পারফরম্যান্সের চেয়ে বেশি পারিশ্রমিক দিয়ে আসছিল, যেটা অন্য কোনো ক্লাবের পক্ষে সম্ভব নয়। আর এটা তো সিংগেল লিগ। ডাবল লিগ না। এভাবে দ্বিগুণ তিন গুণ টাকা চাইলে কি কেউ দেবে?’ কিংস সরে যাওয়ায় এখন পর্যন্ত কোনো দলই জাতীয় নারী ফুটবল দলের তারকাদের প্রতি আগ্রহ দেখায়নি কেউ। মোহামেডান-আবাহনীও আসেনি।
জাতীয় নির্বাচনের পর খেলোয়াড়দের দলবদল। লিগ হওয়ার কথা রয়েছে ফেব্রুয়ারিতে। তবে এবার বিদেশি দুই জন ফুটবলার দলে নেওয়ার সুযোগ থাকলেও সেটিও হবে কি না, তা নিয়েও শঙ্কা রয়েছে। কারণ সাবিনা, তহুরা, সানজিদারা বিভিন্ন ক্লাবে নাম লেখালে সেখানে কোনো ক্লাব বিদেশি ফুটবলার এনে বাড়তি ব্যয় করতে চাইবে কি না, সেটাও বিবেচনার বিষয়।