// সঞ্জু রায়, বগুড়াঃ
মহান বিজয় দিবস-২০২৩ উপলক্ষে বগুড়ায় প্রতি বছরের ন্যায় জেলা পুলিশের উদ্যোগে অবসরপ্রাপ্ত বীর পুলিশ মুক্তিযোদ্ধা ও শহীদ পুলিশ মুক্তিযোদ্ধা পরিবারকে সংবর্ধনা প্রদান করা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার সকালে পুলিশ লাইন্স অডিটোরিয়ামে বগুড়ার নিবাসী কিন্তু মুক্তিযুদ্ধের সময় দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে যুদ্ধে অংশ নিয়েছিলেন পুলিশ পরিবারের এমন ১৪৫ জনকে এই সংবর্ধনা প্রদান করা হয়।
জেলা পুলিশ সুপার ও সদ্য পদোন্নতিপ্রাপ্ত অতিরিক্ত ডিআইজি সুদীপ কুমার চক্রবর্ত্তী বিপিএম পিপিএম এর সভাপতিত্বে ও সার্বিক ব্যবস্থাপনায় সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বীর মুক্তিযোদ্ধা
অবসরপ্রাপ্ত পুলিশ কর্মকর্তা বগুড়া-৫ আসনের সংসদ সদস্য হাবিবর রহমান এমপি।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি বলেন, মহান মুক্তিযুদ্ধে পুলিশ সদস্যদের সক্রিয় অংশগ্রহণ এবং দেশকে স্বাধীন করতে এই বাহিনীর ঐক্যবদ্ধভাবে নেয়া পদক্ষেপ বিজয় অর্জনে বেশ তাৎপর্যপূর্ণ ছিল। বীর মুক্তিযোদ্ধাদের হার না মানা লড়াইয়ে ৯ মাসের যুদ্ধে এই বাংলা যে স্বাধীনতা অর্জন করেছে সেখানে পুলিশ সদস্যদের যে ত্যাগ ও ইতিবাচক ভূমিকা ছিল তা বিজয় অর্জনকে ত্বরাণিত করেছে। তবে শুধু মহান মুক্তিযুদ্ধেই নয়, দেশের প্রতিটি বিপর্যয়ে পুলিশ সদস্যরা সামনের সারি থেকে লড়াই করে যাচ্ছে। এজন্য বগুড়া জেলা পুলিশের প্রতি বছর নেয়া ব্যতিক্রমী এই সংবর্ধনা অনুষ্ঠানের আয়োজন সত্যিই তাদের প্রাপ্য। অনুষ্ঠানে সাবেক পুলিশ সুপার সাংসদ হাবিব বলেন, বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মান ও তাদের সুন্দর একটি জীবন পরিচালনার জন্যে সামগ্রিক সকল উদ্যোগ নিয়েছে একমাত্র জননেত্রী শেখ হাসিনা। তিনি ক্ষমতায় আসার পরেই মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মান নিশ্চিত করেছেন যা সকলকে স্বীকার করতে হবে।
অনুষ্ঠানে সভাপতির বক্তব্যে পুলিশ সুপার সুদীপ কুমার চক্রবর্ত্তী বলেন, জাতির পিতার নেতৃত্বে ও লাখো শহীদের রক্তের বিনিময়ে আমরা পেয়েছি স্বাধীনতা, অর্জন করেছি স্বাধীন লাল সবুজ পতাকা। স্বাধীন দেশে রাজনৈতিক বিভিন্ন মতাদর্শ থাকতে পারে কিন্তু রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডের নামে নাশকতামূলক কার্যক্রম শুধু দেশের উন্নয়ন অগ্রগতিকে ব্যাহত নয় নিরাপত্তা ঝুঁকিতে ফেলে সাধারন মানুষের জীবন যা কোনভাবেই মেনে নেয়া যায়না। তাইতো সাধারণ মানুষের জান মালের নিরাপত্তায় পুলিশ সদস্যরা নির্ঘুম দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন। তিনি বলেন, মহান মুক্তিযুদ্ধে যেভাবে বীর মুক্তিযোদ্ধারা দেশের জন্য যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন ঠিক তেমনি দেশের উন্নয়ন ও অগ্রযাত্রার এখনকার পথচলাতেও তিনি সকলকে পাশে থাকার আহ্বান জানান তাদের দিক নির্দেশনা ও দোয়া আশীর্বাদের মাধ্যমে। সুদীপ চক্রবর্তী বলেন, বীর মুক্তিযোদ্ধা ও শহীদ মুক্তিযোদ্ধার পরিবারের সদস্যদের জন্য বগুড়া জেলা পুলিশের সকল দ্বার সর্বদা উন্মুক্ত রয়েছে এবং ভবিষ্যতেও থাকবে।
সিনিয়র সহকারি পুলিশ সুপার (গাবতলী সার্কেল) নিয়াজ মেহেদীর সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন বিশেষ পুলিশ সুপার (সিআইডি) মোহাম্মদ কাওসার শিকদার, কমান্ডেন্ট ইন-সার্ভিস পুলিশ সুপার বেলাল হোসেন, র্যাব-১২ বগুড়ার কোম্পানি কমান্ডার (পুলিশ সুপার) মীর মনির হোসেন এবং জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক কমান্ডার রুহুল আমিন বাবলু।
এদিকে প্রতি বছর বগুড়া জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে এই সংবর্ধনা পেয়ে আবেগাপ্লুত হয়ে সকলে সংশ্লিষ্টদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন এবং অনুভূতি প্রকাশের সময় বীর মুক্তিযোদ্ধারা বলেন দেশের জন্যে তাদের শ্রম ও ত্যাগ স্বার্থক কারণ স্বাধীন বাংলার মানুষ আজ মুক্তিযোদ্ধাদের অবদান বুঝতে পারে যা অনেকটাই সম্ভব হয়েছে বর্তমান সরকারের নানামুখী উদ্যোগের কারণে।
সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে দেশের উন্নয়নের এই অগ্রযাত্রাকে ধাবিত করতে এবং তারুণ্যের শক্তিতে উদ্বুদ্ধ হয়ে দেশের কল্যাণে সর্বদা সম্মুখ সারিতে থেকে কাজ করার শুভ কামনা জানিয়ে তরুণদের হাতে জাতীয় পতাকা তুলে দেন সংবর্ধনাপ্রাপ্ত বীর মুক্তিযোদ্ধারা যে দৃশ্য সকলের হৃদয়কে দিয়েছে এক অনাবিল প্রশান্তি কারণ তরুণরাই পারে এদেশের চালিকাশক্তি হয়ে কাজ করতে।
অনুষ্ঠানে এসময় উপস্থিত ছিলেন পদোন্নতিপ্রাপ্ত পুলিশ সুপার যথাক্রমে স্নিগ্ধ আখতার পিপিএম ও আব্দুর রশিদ, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) শরাফত ইসলাম, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ট্রাফিক) সুমন রঞ্জন সরকার প্রমুখ।