গত রবিবার দুবাইয়ে স্বাগতিক আরব আমিরাতকে ১৯৫ রানে হারিয়ে প্রথমবারের মতো অনূর্ধ্ব-১৯ শিরোপা জেতে বাংলাদেশ। এর পরদিন শিরোপা নিয়ে দেশের পথ ধরেন যুবারা। গত পরশু ঢাকায় পা রেখে মিরপুর শের-ই-বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে এক বিশেষ সংবর্ধনা পান, এর আগে বিমানবন্দরে তাদের বিসিবির এক অংশ ফুলেল শুভেচ্ছা জানায়। তবে ঐ দিন উপস্থিত ছিলেন না ক্রিকেট বোর্ডের সভাপতি নাজমুল হাসান পাপন। তখনি জানিয়ে দেওয়া হয়েছিল, মঙ্গলবার শিরোপাজয়ী ক্রিকেটারদের সঙ্গে ডিনার করবেন বোর্ড সভাপতি।
সেই অনুসারে গতকাল রাজধানীর একটি হোটেলে খেলোয়াড়দের সঙ্গে ডিনার করেন পাপন। তার আগে গণমাধ্যমের মুখোমুখি হয়ে শুরুতে নিজের অনুভূতি জানিয়ে বোর্ড সভাপতি বলেন, ‘মেয়েরা এর আগে এশিয়া কাপ একবার জিতেছিল, কিন্তু পুরুষদের সেই সুযোগটা হয়নি। তবে ওরা (অনূর্ধ্ব-১৯ দল) এটা করেছে এটা বড় অর্জন। কিন্তু আমার কাছে ট্রফিটা বড় কথা নয়, চ্যাম্পিয়ন হওয়াও বড় কথা নয়। আমি ওদের প্রতিটা খেলা দেখেছি, আমার কাছে ভালো লেগেছে যে ওরা সব কটি খেলায় ভালো খেলেছে। ভালো করে জিতেছে। আসলে আমরা কী চাই? আমরা তো চাই সবাই ভালো খেলুক।’
বাংলাদেশ ক্রিকেটের রীতি অনুসারে দল ভালো খেললেই বোর্ডের তরফ থেকে নানা বোনাস বা পুরস্কার পেয়ে থাকে। এবার যুবারা এশিয়া কাপ জেতায় তাদের জন্যও এমন বিশেষ কিছু দিচ্ছেন কি না—বোর্ড সভাপতির কাছে জানতে চাইলে তিনি জবাবে বলেন, ‘ওদের বিষয়টা পুরোপুরি আলাদা। আমার মনের কথা বলছি, এটা হয়তো অনেকেরই ভালো না-ই লাগতে পারে। আমি চাই ওরা শুধু এখন খেলায় মনোযোগ দিক। ওরা মাত্র শুরু করেছে, এখন শিক্ষার সময়, শিখছে, এই সময়টায় ওদের মাথায় কোনো টাকাপয়সার চিন্তা আসাই উচিত না। যখন সময় হবে, বিসিবি তাদের দেখবে।’
এর আগে ২০২০ সালে অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপ চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল বাংলাদেশ। সেই দলের অনেকে বর্তমানে জাতীয় দলের নিয়মিত মুখ হয়ে উঠেছেন। তবে তারা তাদের বয়সভিত্তিক দলের মতো তেমন পারফরম্যান্স দেখাতে পারছেন না মূল দলে। কেন এমনটি হচ্ছে সে বিষয়ে পাপন বলেন, ‘দুটো জিনিস আছে। প্রথম ব্যাপারটা হলো, ব্যবধানটা এখান থেকে ওখানে অনেক বেশি। পরের ধাপের লড়ায়ের ধাপটা আরেকটু কঠিন। এই সময়টায় আমরাই বা তাদের জন্য কতোটুকু করতে পারছি। অন্যান্য দেশে যে পরিমাণে সুযোগ-সুবিধা, যে পরিমাণে উঠতি বয়সী খেলোয়াড়দের দিকে মনোযোগ দিতে পারে, সেই রকম আমরা দিতে পারিনি। এটা অস্বীকার করার কিছু নেই। তবে এখন আমাদের চেষ্টা থাকবে তাদের কতটা বেশি দেওয়া যায়।’
বয়সভিত্তিক দলে সাফল্য এলেও এখন পর্যন্ত মূল দল এশিয়া কাপে কিংবা বিশ্বকাপে সেই রকমের কার্যত লড়াই করতে পারেনি। প্রতিবারই শূন্য হাতে ঘরে ফেরে। তবে দল কিছু না জিতলেও আক্ষেপ নেই পাপনের। কেন আক্ষেপ নেই, বিষয়টি পরিষ্কার করে বলেন, ‘ওরা (জাতীয় দল) আমাদের যা দিয়েছে, এটাও কিন্তু কম না। ওরা আমাদের বাংলাদেশকে গোটা পৃথিবীর কাছে যেভাবে চিনিয়েছে, আজকে দেশের ক্রিকেটটা যে একটা ব্র্যান্ড হিসেবে স্টাবলিশ হয়েছে, এগুলোর পেছনে তো ওরাই। কত ম্যাচ ভালো খেলেছে। মূল খেলোয়াড় কারা ছিল? তামিম, সাকিব, মুশফিক, রিয়াদ আর অধিনায়ক হিসেবে মাশরাফি। এরা আর কত দিবে? ওরা তো দিয়েছে…. ২০০৮-এ ওদের যেমন দেখেছেন, ২০২৩-এ তেমনটি পাবেন না। গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, ওদের ব্যাকআপ খেলোয়াড় কিংবা ওদের সাপোর্ট দেবে ঐ রকম খেলোয়াড় সেই সময় ছিল না। তবে এখন রয়েছে। আমি বিশ্বাস করি, আগামী দুই বছরের মধ্যে বাংলাদেশ একটি ভালো দল হবে।’