// অপূর্ব লাল সরকার, আগৈলঝাড়া (বরিশাল) থেকে :
বরিশালের আগৈলঝাড়া উপজেলার বিএনপির নেতাকর্মীরা চলমান হরতাল অবরোধ কর্মসূচি ঘিরে হামলা-মামলা ও গ্রেফতার আতঙ্কে কোণঠাসা। গত ২৯ সেপ্টেম্বর থেকে শুরু হওয়া হরতাল আর চলমান অবরোধের পর থেকে বিএনপি’র অধিকাংশ নেতাকর্মীরা এখন এলাকা ছাড়া।
গত ২ নভেম্বর দেশব্যাপী বিএনপি’র ডাকা হরতাল ও অবরোধ, গাড়িতে অগ্নিসংযোগ, নৈরাজ্যের প্রতিবাদে আগৈলঝাড়ায় আওয়ামী লীগের উন্নয়ন ও শান্তি সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। শান্তি সমাবেশ থেকে ফেরার পথে তাদের উপর বিএনপি’র নেতাকর্মীরা বোমা হামলা করেছে বলে দাবি করেছেন তারা। এ ঘটনায় বাকাল ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. সহিদুল ইসলাম পাইক বাদী হয়ে ওই দিন রাতেই বিএনপি, যুবদল, ছাত্রদলের ২৪ জন নেতাকর্মীর নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাতনামা আরও ৫০-৬০ জনকে আসামী করে বিশেষ ক্ষমতা আইনে থানায় মামলা দায়ের করেন।
মামলা দায়ের পর থেকেই গ্রেফতার আতঙ্কে বর্তমানে ঘরছাড়া উপজেলা বিএনপির শীর্ষ নেতাসহ কয়েকশ’ নেতাকর্মী। এতে এসব নেতাকর্মীর পরিবারের সদস্যরা নিরাপত্তাহীনতায় ভোগার পাশাপাশি মানবেতর জীবনযাপন করছেন।
অন্যদিকে হরতাল-অবরোধে রাজপথ দখলে নিয়েছেন উপজেলা আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা। ইউনিয়ন পর্যায় থেকে শুরু করে দলের শীর্ষ নেতারা সকাল-বিকেল পর্যন্ত তারা মাঠে রয়েছেন। নেতাকর্মীরা বলছেন, স্থানীয় ওয়ার্ড, ইউনিয়ন ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকদের নেতৃত্বে ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীরা রয়েছেন পাহারায়। তারা বিএনপির ডাকা অবরোধ-হরতালে প্রতিদিনই রাজপথে রয়েছেন। তারা সংবিধান অনুযায়ী দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন না হওয়া পর্যন্ত মাঠে থাকবেন।
উপজেলা বিএনপির শীর্ষ নেতাদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, আওয়ামীলীগ নেতার মামলার কারণে বিএনপি ও এর অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীদের এখন আর প্রকাশ্যে দেখা যাচ্ছেনা। গ্রেফতার আতঙ্কে অধিকাংশ নেতাকর্মী এখন ঘরছাড়া। অধিকাংশ নেতাকর্মী পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। মামলার আসামীরা তো বটেই, মামলা নেই এমন শতশত নেতাকর্মীও বাড়িতে থাকতে সাহস পাচ্ছেন না।
বিএনপি নেতাদের অভিযোগ, এপর্যন্ত করা বেশির ভাগ রাজনৈতিক মামলাতেই উপজেলার নেতৃত্বে দেয়া নেতাদের আসামী করা হয়েছে। নেতাকর্মীরা পালিয়ে থাকার কারণে চলমান অবরোধ কর্মসূচিতে কোন মিছিল মিটিং বা আন্দোলন কর্মসূচি করতে পারছেনা তারা। একই সাথে ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীদের রাজপথে থাকার কারণে দাঁড়াতে পারছেন না বিএনপির নেতাকর্মীরা। এছাড়া গ্রেপ্তার আতঙ্কে গত একসপ্তাহ ধরে নেতাকর্মী শূণ্য।
উপজেলা ছাত্রদলের সাবেক সাধারন সম্পাদক হেমায়েত তালুকদার বলেন, আমরা কোন কিছুই জানিনা। অথচ গত ২ নভেম্বর পয়সারহাট বন্দরে আওয়ামীলীগের শান্তি সমাবেশ থেকে ফেরার পথে নাকি তাদের উপর বিএনপি’র নেতাকর্মীরা বোমা হামলা করেছে বলে তারা দাবি করেছেন। এঘটনায় তারা মামলা দায়ের করলে গ্রেফতারের ভয়ে আমরা বাড়ি ছেড়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছি। গ্রেফতার আতঙ্কে উপজেলার শতশত নেতাকর্মী এখন ঘরছাড়া।
উপজেলা যুবদলের যুগ্ন-আহবায়ক সালমান হাসান রিপন জানান, আওয়ামীলীগ সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন করতে গিয়ে প্রায় ৭টি মামলার আসামী হয়েছি। প্রতিমাসে আদালতে হাজিরা দিতে হচ্ছে। অথচ উপজেলা বিএনপি’র শীর্ষ পর্যায়ের কয়েকজন নেতার নামে কোন মামলা নেই। তারা ঢাকায় বসে উপজেলার নেতৃত্ব দেয়। যে কারণে আন্দোলন সংগ্রামে তাদের কখনও পাশে পাওয়া যায়না।
তিনি আরও বলেন, মামলা হলে কিছুটা সমস্যায় পরতে হয়। তবে আমরা আমাদের আন্দোলন, সংগ্রাম চালিয়ে যাবো। কোন হামলা মামলা আমাদের নেতাকর্মীদের মনোবল কমাতে পারবেনা।
উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক আবু সালেহ মো. লিটন সেরনিয়াবাত জানান, বিএনপির চলমান আন্দোলনকে প্রতিহত করতে আমাদের নেতাকর্মীরা সবাই মাঠে রয়েছেন। জনগণ এই অবৈধ অবরোধ মানেনা। বিএনপির সন্ত্রাসবাদ, জ্বালাও পোড়াও আন্দোলন রুখে দিতে আমার সবসময় মাঠে রয়েছি। তারা যেন সাধারণ জনগণের কোন রকম ক্ষতি করতে না পারে সেজন্য আমাদের কর্মসূচি অব্যাহত রয়েছে।