সঞ্জু রায়, বগুড়াঃ
বগুড়ায় ১ ঘন্টার জন্যে উত্তরবঙ্গের ঐতিহ্যবাহী বিদ্যাপীঠ সরকারি আজিজুল হক কলেজে প্রতীকি অধ্যক্ষ হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন ন্যাশনাল চিলড্রেনস্ টাস্ক ফোর্স (এনসিটিএফ) বগুড়ার শিশু গবেষক জায়মা আলম মারিয়াম। কন্যা শিশু দিবস উপলক্ষে ইয়েস বাংলাদেশ ও ইয়ূথ ফর চেঞ্জ এর আয়োজনে ‘গার্লস টেকওভার’ শীর্ষক এই কর্মসূচিতে শনিবার সকালে প্রতিষ্ঠানের অধ্যক্ষ অধ্যাপক মোঃ শাহজাহান আলীর নিকট হতে দায়িত্ব গ্রহণ করে জেলার সকল শিশুর প্রতিনিধি হিসেবে মারিয়াম এই দায়িত্ব পালন করেন।
এসময় শিশু মারিয়ামকে ফুলেল শুভেচ্ছা জানিয়ে নিজের চেয়ারে বসতে দেন অধ্যক্ষ শাহজাহান এবং পরবর্তীতে প্রতিষ্ঠানের বিষদ বিবরণী দেন। এছাড়াও কলেজের প্রশাসনিক কাঠামো, চলমান নানা উন্নয়নমূলক কার্যক্রম সম্পর্কেও প্রতীকি অধ্যক্ষকে জানান তিনি। পরবর্তীতে কলেজের বিভিন্ন শ্রেণীকক্ষ, প্রশাসনিক কক্ষ ও ক্যাম্পাসের গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনাও পরিদর্শন করেন শিশু মারিয়াম। দায়িত্বপালনকালে প্রতীকি অধ্যক্ষ মারিয়াম, কলেজে শিক্ষার্থীদের জন্যে গড়ে ওঠা নিরাপদ ও পরিচ্ছন্ন ক্যাম্পাসের প্রশংসা করেন। এছাড়াও চলমান উন্নয়ন কার্যক্রম দ্রুত সম্পাদনের মাধ্যমে শিক্ষার বিকাশে এই প্রতিষ্ঠান আরও এক ধাপ এগিয়ে যাবে এমন প্রত্যাশা ব্যক্ত করেন।
কন্যা শিশুরা সমান সুযোগ এবং সমান অধিকার পেলে বদলে দিতে পারে তাদের নিজেদের জীবন ও তাদের আশেপাশের সমাজ। সমাজের মানুষদের এমন বিশ্বাস অন্তরে ধারণ করে সমাজের নেতৃস্থানীয় যে জায়গাগুলোতে নারী বা মেয়েদের খুব কম দেখা যায় কিংবা তাদের সাফল্যের কথা কম শোনা যায় সেই জায়গাগুলোতে নিজেদের অবস্থান, নেতৃত্ব, সিদ্ধান্ত ও সাফল্য যাতে মেয়েরা তুলে ধরতে পারে সেই আত্মবিশ্বাস তৈরিকরণের উদ্দেশ্যেই প্লান ইন্টারন্যাশনাল এর বৈশ্বিক কার্যক্রমের অংশ হিসেবে এই কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হয়।
প্রতীকি অধ্যক্ষ হিসেবে দায়িত্ব পালনকালে বগুড়া কালেক্টরেট পাবলিক স্কুল এন্ড কলেজের ৯ম শ্রেণীর শিক্ষার্থী জায়মা আলম মারিয়াম বলেন, সরকারি আজিজুল হক কলেজের মতো এমন স্বনামধন্য একটি প্রতিষ্ঠানের প্রতীকি হলেও কিছু সময়ের জন্যে অধ্যক্ষ হওয়া সত্যিই তার কাছে স্বপ্নের মতো লাগছে। তিনি বলেন, মধ্যবিত্ত পরিবারে বেড়ে উঠলেও আজকের এই দায়িত্বের মাধ্যমে তিনি দৃঢ় প্রতিজ্ঞা নিলেন ভবিষ্যতে সত্যি সত্যিই এমন কোন সফল চেয়ারে আসীন হতে করণীয় সকল কিছুই তিনি করবে। তিনি বলেন, বাংলাদেশে যদি একজন নারী প্রধানমন্ত্রী হয়ে দেশ চালাতে পারে তাহলে তৃণমূলের কণ্যাশিশুরা কোনভাবেই পিছিয়ে থাকার সুযোগ নেই। সকলে যদি জীবনযুদ্ধে এগিয়ে যেতে উৎসাহ, উদ্দীপনা ও একটু সহযোগিতা পায় তাহলে নারীরাও বড় বড় পদে সুনামের সাথে দায়িত্ব পালন করতে পারবে।
উক্ত কার্যক্রম প্রসঙ্গে সরকারি আজিজুল হক কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক মোঃ শাহজাহান আলী অত্যন্ত সন্তুষ্টি প্রকাশ করে তিনি শিশুদের প্রতিনিধি মারিয়ামের মাধ্যমে সকল শিশুকে মুক্তমনা হিসেবে বেড়ে উঠে ভবিষ্যতে দেশের সর্বোচ্চ পদগুলোতে নেতৃত্ব দেওয়ার লক্ষ্যে প্রস্তুতি নেওয়ার আহ্বান জানান। তিনি বলেন গার্লস টেকওভার কর্মসূচীর মাধ্যমে কণ্যাশিশুরা উৎসাহিত হবে এবং নিজেদের স্বপ্নপূরণেও অঙ্গিকারবদ্ধ হবে। অধ্যক্ষ শাহজাহান আরো বলেন, তিনি একসময় ঐ প্রতিষ্ঠানেরই শিক্ষার্থী ছিলেন একজন শিক্ষককে দেখে অনুপ্রাণিত হয়ে কঠোর অধ্যবসায় ও পরিশ্রমে আজ তিনি সেই প্রতিষ্ঠানেই অধ্যক্ষ হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। তিনি বলেন, আজ গর্ব লাগে তার প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা যখন বিসিএস ক্যাডারসহ প্রশাসনের বিভিন্ন পদে দায়িত্ব পালন করছে যেখানে নারীরাও পিছিয়েও নেই তখন আজকের এই কর্মসূচির মাধ্যমে সমাজের সকল কন্যাশিশুকে এগিয়ে যেতে অনুপ্রেরণ প্রদানই তার মূল লক্ষ্য।
এনসিটিএফ বগুড়ার জেলা ভলেন্টিয়ার গণমাধ্যমকর্মী সঞ্জু রায়ের ব্যবস্থাপনায় ব্যতিক্রমী এই আয়োজনে কালেক্টরেট পাবলিক স্কুল এন্ড কলেজের অধ্যক্ষ আল মামুন সরদার, এনসিটিএফ বগুড়ার সভাপতি শাহরিয়ার নাফিজ মন্ডল, সাধারণ সম্পাদক মালিহা ইসলাম, শিশু সাংসদ মিরাব্বী হাসান ও তাহবিবা তাবাচ্ছুম, শিশু সাংবাদিক যথাক্রমে আলিফ হাসান ও মেহেরুন্নেছা লামিয়া, শিশু গবেষক রোকনুল ইসলাম, সাকিব খান, জেলা ভলেন্টিয়ার হাবিবা নাসরিনসহ প্রতিষ্ঠানের বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষক, অভিভাবকবৃন্দ ও গণমাধ্যমকর্মী।