চলনবিলের বাতাসে ভাসছে শুটকি মাছের গন্ধ

// ইকবাল কবীর রনজু, চাটমোহর ,পাবনা ::

পাবনা, নাটোর ও সিরাজগঞ্জের চলনবিল অধ্যুষিত উপজেলা গুলোর নদ-নদী, খাল বিলের পানি কমে গেছে। কিছু এলাকার খাল বিল ইতিমধ্যে প্রায় শুকিয়ে গেছে। পানি কমায় জেলেদের জালে এখন বেশি মাছ ধরা পরছে। ফলে মাছ শুকানোর কাজ শুরু করেছেন চলনবিল এলাকার মৌসুমী শুটকি ব্যবসায়ীরা। সকাল থেকে রাত অবধি মাছ কেনা, ধোয়া, চাতালে শুকানো ও বাছাই করে পৃথক করার কাজ করছেন চলনবিল এলাকার নারী পুরুষ শুটকি শ্রমিকরা।
চলনবিলের মাঝ দিয়ে নির্মিত হয়েছে বনপাড়া-হাটিকুমরুল মহাসড়ক। এ সড়ক পথে চলাচলের সময় মহিষলুটি এলাকা অতিক্রমকালে যে কারো নাকে ভেসে আসবে শুটকি মাছের গন্ধ। পাবনার চাটমোহরের বোয়াইলমারী, সোনাহার পাড়া, ভাঙ্গুড়ার দিলপাশার, ফরিদপুরের খাগড় বাড়িয়া, সিরাজগঞ্জের তাড়াশের মহিষলুটি, নাটোরের গুরুদাসপুর, সিংড়া, হালতীসহ আত্রাই ও উল্লাপাড়ার লাহিরী মোহনপুর এলাকায় মাছ শুকান মৌসুমী শুটকি ব্যবসায়ীরা।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, চলনবিল এলাকায় উল্লেখযোগ্য ৪৮ টি বিল, ১৪ টি খাল ও ১১ টি নদ-নদী রয়েছে। কিছু বিলের পানি স্লুইজ গেইটের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণ করা হয়। স্লুইজ গেইট না থাকায় কিছু বিলের পানি নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হয় না। যেসব বিলের পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থা প্রকৃতি নির্ভর সেসব বিলের পানি ইতিমধ্যেই অনেক কমে গেছে। এসব বিলে এখন বেশি মাছ ধরা পরছে।
প্রতিবছর ভাদ্র মাস থেকে সীমিত আকারে মাছ শুকানোর কাজ শুরু হয় চলনবিল এলাকায়। পানি কমার সাথে সাথে বাড়তে থাকে মাছের যোগান। এবছর আশ্বিন মাসের শুরুতে কিছু এলাকায় মাছ শুকানোর কাজ শুরু হয়েছে। তবে আশ্বিনের প্রথম সপ্তাহ থেকেই মাঝে মাঝে মধ্যে বৃষ্টি হওয়ায় লোকসান গুনতে হচ্ছে শুটকি ব্যবসায়ীদের। আশা করা হচ্ছে অগ্রহায়ন মাস পর্যন্ত পুরোদমে চলবে মাছ শুকানোর কাজ। বৃষ্টিপাত কমলে লাভ করতে পারবেন ব্যবসায়ীরা।
দূর অতীতে চলনবিল এলাকার খাল বিলে প্রচুর মাছ পাওয়া যেত। জেলেরা বিভিন্ন ধরণের মাছ ধরার উপকরণের সাহায্যে মাছ ধরতেন। বর্ষাকালে উদ্বৃত্ত মাছ শুটকি করে উত্তরাঞ্চলের সৈয়দপুর, নিলফামারীসহ দেশের বিভিন্ন মোকামে পাঠ তেন তারা।
চায়না দুয়ারী জাল, কারেন্ট জাল, স্বোতি জালসহ বিভিন্ন মাছ ধরার উপকরণের সাহায্যে মা মাছ, পোনা মাছ নিধন করা হচ্ছে। ফলে কালের বিবর্তনে অনেক প্রজাতির মাছই এখন বিলুপ্তির পথে। বছরের পর বছর পোনা মাছ নিধনের ফলে চলনবিল এলাকায়ও এখন মাছ সংকট দেখা দিয়েছে। মাছের পরিমান কমে গেলেও এখনো এ এলাকার প্রায় এক’শ শুটকি ব্যবসায়ী এবং হাজার হাজার শুটকি শ্রমিক মাছ শুকানোর কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করেন।
গুরুদাসপুরের শাপগাড়ী গ্রামের শুটকি ব্যবসায়ী নান্নু হোসেন জানান, কয়েক দিন যাবত মাছ শুকানোর কাজ শুরু হয়েছে। মহিষলুটি মাছের আড়তে বর্তমান পুটি ও চাদা মাছ বেশি পাওয়া যাচ্ছে। প্রতি কেজি কাঁচা পুটি ও চাদা মাছ ৪০ থেকে ৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। মওসুমের শুরুতেই বৃষ্টির কারণে মাছ পঁচে যাওয়ায় লোকসানের সম্মুখীন হচ্ছেন শুটকি ব্যবসায়ীরা। দুই লাখ টাকার মাছ কিনে তার প্রায় পঞ্চাশ হাজার টাকা লোকসান গেছে। তিনি আরো জানান, ভারতে চলনবিল এলাকার পুটি মাছের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। নীলফামারী, সৈয়দপুর, রংপুরের মোকামে মাছ পাঠাতে তাদের অনেক টাকা খরচ পরে যায়। মাছ সংরক্ষণের সুবিধায় সীমিত আকারে লবন দেন তারা। শুটকি মাছের ব্যবসা ভাগ্যের উপর নির্ভর করে। চলনবিল এলাকায় প্রক্রিয়াজাত করা শুটকি মাছ সংরক্ষণের ব্যবস্থা না থাকায় এবং কাছাকাছি বড় শুটকির মোকাম না থাকায় ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছেন শুটকি ব্যবসায়ীরা।
এ ব্যাপারে চাটমোহরে কর্মরত সিনিয়র উপজেলা মৎস কর্মকর্তা আব্দুল মতিন জানান, প্রতি বছর অক্টোবর-নভেম্বর মাসে চলনবিল এলাকায় প্রচুর মাছ ধরা পরে। যোগাযোগ ব্যবস্থা ভাল হওয়ায় এ এলাকার অধিকাংশ মাছ বাইরে চলে যাচ্ছে। কিছু মাছ যাচ্ছে শুটকি চাতালে। পুটি মাছ পচনশীল হওয়ায় এখন পুটি মাছ বেশি শুকাচ্ছেন শুটকি ব্যবসায়ীরা। চলনবিল কেন্দ্রিক শুটকি মাছ বিক্রয় কেন্দ্র ও সংরক্ষণাগার নির্মিত হলে এ এলাকার শুটকি ব্যবসায়ীরা লাভবান হবেন।