— এবাদত আলী —
বিশ্ব মানবতার কল্যাণ কমনায় যিনি বিশ্বের একমাত্র অধিপতি মহান আল¬াহ রাব্বুল আলামীনের গভীর সান্নিধ্য দ্বারা অনুপ্রাণিত হয়ে সত্যের বাণীতে একদিকে মুর্তি পুজকদেরকে অন্যদিকে কিতাবধারি অধঃপতিত খ্রিষ্টধর্ম ও ইহুদী ধর্মের অনুসারীদেরকে আহ্বান জানিয়েছিলেন- যিনি আল্লাহর একত্ববাদের মহান প্রচারক হিসাবে আবির্ভুত হয়েছিলেন, তিনি হলেন আমাদের প্রিয় নবী হযরত মোহাম্মদ (সা.)।
সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ নবী যিনি যুগ যুগান্তরের পুঞ্জিভুত পাপরাশিকে বিদুরিত করে অন্ধকারময় পৃথিবীকে আলোকিত করার জন্য অফুরন্ত প্রশান্তি ছড়িয়ে দিয়েছিলেন।
মহান আল¬াহ পাক নিজেকে প্রকাশ করার জন্য সর্বপ্রথম যে নূরে-মোহাম্মাদী সৃষ্টি করেছিলেন চান্দ্রমাসের ১২ রবিউল আওয়াল তারই জাহেরী প্রকাশ ঘটেছে বিধায় এই দিনটিকে ঈদে মিলাদুন্নবী বলা হয়ে থাকে। ঈদ অর্থ খুশি। মিলাদুন্নবী অর্থ হলো হযরত রাসুল (সা.) এর জন্ম। তাই ঈদে মিলাদুন্নবী অর্থ দাঁড়ায় হযরত রাসুল (সা.) এর জন্ম দিনের খুশি।
হযরত আদম (আ.) থেকে শুরু করে জগতে যত নবী রাসুল আগমন করেছেন তাঁরা প্রত্যেকেই হযরত রাসুল (সা.) এর আগমনী বার্তা প্রচার করেছেন এবং তাঁর আগমনের ক্ষেত্র প্রস্তুত করেছেন।
হযরত মোহাম্মদ (সা.) এর আগমন সম্পর্কে বাইবেলে উলে¬খ আছে, যীশু গ্রেফতার হওয়ার আগে তিনি তাঁর এক ভাষণে বলেছেন, ‘‘ সেই সহায় পবিত্র আত্মা যাঁকে পিতা আমার নামে পাঠিয়ে দিবেন, তিনি সব বিষয় তোমাদের শিক্ষা দিবেন আর আমি তোমাদের যা কিছু বলেছি সে সব তোমাদের মনে করিয়ে দিবেন।’’ (যোহনঃ১৪ঃ২৬)। আরো উল্লেখ আছে যে, যে সাহায্যকারিকে আমি পিতার কাছ থেকে তোমাদের কাছে পাঠিয়ে দেবো, তিনি যখন আসবেন তখন তিনি আমার বিষয়ে সাক্ষ্য দিবেন। ইনি হলেন সত্যের আত্মা যিনি পিতা থেকে বের হন (যোহন ১৫ঃ২৬)।
বেদ পুরানের বহু স্থানে উহার উলে¬খ দৃষ্ট হয়, যেমন বলা হয়েছে-
অশ্বমাশু গারুহ্য দেবদত্তং জগত পতিঃ
আসিনা সাধু দসন মষ্টেশ্বর্য গুনান্বিতঃ
অর্থাৎ কল্কি অবতার দেবতা প্রদত্ত অশ্বে আরোহন করিবেন এবং তরবারি দ্বারা দুষ্টের দমন করিবেন। (ভাগবত পুরাণ, দ্বাদশ স্কন্ধ, দ্বিতীয় অধ্যায় ১৯শ শ্লোক)। এ ছাড়া কল্কি পুরাণ ২য় অধ্যায় ২৫ শে-তাকে বলা হয়েছে-
দ্বাদশ্যাং শুক্ল পক্ষস মাধবে মাসি মাধবম,
জাতো-দট্রাশাতুঃ পুত্রং গিতরৌ হৃষ্টমালসৌ। অর্থাৎ অন্তিমঋষি মাধব মাসের (বৈশাখ মাস) শুক্লপক্ষের দ্বাদশী তিথিতে জন্মগ্রহন করিবেন। নিঃসন্দেহে ইহা মুহাম্মদ (সা.) এর জন্মগ্রহণ সম্পর্কে বলা হয়েছে। হিসাব করলে দেখা যায় ৫৭০ খিষ্টাব্দের ১২ রবিউল আওয়াল বৈশাখ মাস অর্থাৎ মাধব মাসের শুক্লপক্ষের দ্বাদশী তিথি হয়। বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের প্রমান্য গ্রন্থ ‘‘ দিঘা-নিকারায়’’ উল্লে¬খ আছে ‘‘ মানুষ যখন গৌতম বুদ্ধের ধর্ম ভুলে যাবে তখন আর একজন বুদ্ধ আসবেন তাঁর নাম ‘‘মৈত্তয়’’(সংস্কৃত মৈত্রেয়) অর্থাৎ শান্তি ও করুণার বুদ্ধ।’’ এখানে হযরত মোহাম্মদ (সা.) এর আগমনের ইঙ্গিত প্রদান করা হয়েছে।
পবিত্র কালাম পাক কোরআনে আল¬াহ তায়ালা ফরমায়েছেন ‘স্মরণ কর যখন মরিয়ম তনয় ঈসা বল্লেন হে বনি ইসরাইল, আমি তোমাদের কাছে আল¬াহর প্রেরিত রাসুল। আমার পুর্ববর্তী তাওরাতের আমি সত্যায়ন করি এবং আমি এমন একজন রাসুলের সংবাদদাতা যিনি আমার পরে আসবেন। তাঁর নাম আহমদ।(আল কোরআন)।
বিশিষ্ট সাহাবী হযরত আবু হোরায়র (রা.) হতে বর্ণিত আছে যে, রাসুল (সা.) বলেছেন, আমি আদম সন্তানের প্রত্যেক যুগের পর যুগ স্থানান্তরিত হয়ে এসেছি। অবশেষে এ যুগে জন্মগ্রহণ করি যে যুগে আমি বর্তমান আছি। (বুখারী ১৬৫৮, মেশকাত ৫৪৯৩)।
হযরত ইরবায ইবনে সারিয়া থেকে বর্ণিত, নবী করিম (সা.) বলেন, আমি আল্ল¬াহ তায়ালার নিকট (তখন থেকে ) খাতামুন নাবিয়ীন (শেষ নবী) ছিলাম (যখন) আদম (আঃ) কাদা ও পানির মধ্যে ছিলেন। (আহমাদ্ বায়হাকী)।
আবু সাহ্ল কাত্তান (রা.) প্রণীত আমালী গ্রন্থে সালে ইবনে হামদান সুত্রে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি আবু জাফর মোহাম্মদ ইবনে আলী (ইমাম মুহাম্মদ বাকের) (রা.) কে জিজ্ঞাসা করলাম, সকল নবীর উপর হযরত মোহাম্মদ (সা.) এর শ্রেষ্ঠত্যের কারণ কি? অথচ তিনি সকলের শেষে প্রেরিত হয়েছেন। তিনি জবাবে বলে¬ন, আল্ল¬াহ তায়ালা যখন আদম (আ.) থেকে তাঁর বংশধরদেরকে রূহের জগতে এনে তাঁদের প্রত্যকের নিকট থেকে এ স্বীকারোক্তি নিলেন যে, আমি কি তোমাদের রব (প্রতিপালক) নই? তখন সর্বপ্রথম হযরত মোহাম্মদ (সা.) উত্তরে হাঁ বলেছিলেন। এ জন্যই সমস্ত নবীগণের উপর তাঁর শ্রেষ্ঠত্য। যদিও তিনি শেষ নবী রূপে প্রেরিত হয়েছেন।
আমাদের প্রাণপ্রিয় নবী আকায়ে নামদার তাজেদারে মদীনা হযরত মোহাম্মদ (সা.) নির্দিষ্ট কোন দেশ, গোত্র বা জাতির জন্য নবী রাসুল হিসাবে আবির্ভুত হননি। তিনি সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠে নবী এবং মহান আল্ল¬াহ রাব্বুল আলামীনের সকল সৃষ্টির মাঝে সর্বশ্রেষ্ঠ হলেন তিনি। হযরত আব্দুল¬াহ ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্নিত একটি হাদীসে এ সম্পর্কে উল্লে¬খ রয়েছে, মহানবী (সা.) বলেছেন, আল্ল¬াহ পাকের নিকট সকল সৃষ্টির মাঝে সর্বশ্রেষ্ঠ হলাম আমি। এতে আমার গর্বের কিছু নাই (তিরমিযী)।
বিশ্ব মানবতার মুক্তির কান্ডারী রাহমাতুল্লিল আলামীন নবী হজরত মোহাম্মাদুর রাসুলুল্ল¬াহ সাল্লাল্ল¬াহু আলাইহি ওয়া সাল্ল¬ামের পৃথিবীতে শভাগমণ মানব ইতিহাসের সর্বশ্রেষ্ঠ ঘটনা। এর চেয়ে অধিক আনন্দদায়ক কল্যানকর ও অবিস্বরণীয় কোন ঘটনা বিশ্ব মানচিত্রে দ্বিতীয়টি ঘটেনি। মহান আল্লাহ পাক মোহাম্মদ (সা.) কে তাঁর সৃষ্টি জগতের সবার উপরে শ্রেষ্ঠত্ব দান করেছেন। একারণেই ঈদে মিলাদুন্নবী (সা.) সকল ঈদ বা আনন্দের চেয়ে শ্রেষ্ঠ ঈদ বা শ্রেষ্ঠ আনন্দ। আর এজন্যই আললাহ তায়ালা এদিনে খুশি উদযাপন করতে বলেছেন। (সুরা আহযাব: ৫৬ নম্বর আয়াত)। এই আয়াত অনুযায়ী স্রষ্টা নিজেই ফেরেশ্তোদের নিয়ে খুশি হয়ে আনন্দ প্রকাশ করেছেন এবং বিশ্ববাসীকে আনন্দের নির্দেশ দিয়েছেন। রাসুল (সা.) এর ঈদে মিলাদুন্নবী (সা.) বিষয়ে আল্লাহ পাক এরশাদ করেন, হে হাবিব আপনি বলুন, আল্লাহর রহমত ও করুণা হিসেবে আপনাকে পাওয়ার কারণে তারা যেন খুশি উদযাপন করে। এটা যেন তাদের সঞ্চয়কৃত সকল এবাদতের চেয়ে উত্তম। (সুরা ইউনুছ আয়াত ৫৮)।
রাসুল করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের প্রতিটি ঘটনা মানুষের হেদায়েতের জন্য উজ্জল আলোক বর্তিকা।
দোজাহানের বাদশাহ আখেরী নবী মহান আল¬াহ তায়ালার হাবীব হযরত রাসুল পাক (সা.) হলেন রহমত ও বরকতের অফুরন্ত ভান্ডার। আমরা উম্মতে মোহাম্মাদী। মুসলমান হিসাবে আমরা শ্রেষ্ঠ জাতির সন্মানের অধিকারি হয়েছি। আমাদের সকলের প্রয়োজন সেই মহান রাসুল (সাঃ) এর জন্ম দিনটি শ্রেষ্ঠ খুশির দিন হিসাবে পালন করা। মহান আল¬াহ রাব্বুল আলামীন যেন আমাদেরকে সে তৌফিক দান করেন, আমীন। (সংগৃহিত)। (লেখক: সাংবাদিক ও কলামিস্ট)।
এবাদত আলী
সাংবাদিক ও কলামিস্ট
তারিখ:২৭ /০৯/২০২৩.