// আব্দুল জব্বার,পাবনা: পাবনা সদর উপজেলার বলরামপুর বোন-জামাইয়ের সঙ্গে প্রতিবেশির বিরোধের বলি হয়েছেন এক রিকশাচালক। দুর্বৃত্তদের হামলা, মারধর, ভাংচুর ও লুটপাটে নিঃস্ব হয়ে অন্যের বাড়িতে মানবেতর জীবনযাপন করছেন ভুক্তভোগী পরিবার। এঘটনায় মামলা হলেও অনৈতিক সুবিধা নিয়ে দুর্বলভাবে চার্জশটি দেওয়ার অভিযোগ তুলেছেন তারা। এছাড়াও অভিযুক্তদের হুমকি-ধামকিতে বাড়িতেও উঠতে পারছেন না তারা।
মঙ্গলবার (২৬ সেপ্টেম্বর) দুপুরে পাবনা প্রেসক্লাব মিলনায়তনে এক সংবাদ সম্মেলন তারা এসব অভিযোগ করেন।
সংবাদ সম্মেলনে ভুক্তভোগী রুমা খাতুন বলেন, ব্যক্তিগত দ্বন্দ্ব নিয়ে বোনজামাই মো. রিপন হোসেনের সঙ্গে প্রভাবশালী আলাই সরদারের লোকজনদের সঙ্গে বিরোধ চলছে। সেই বিরোধকে কেন্দ্র করে রিপনের বাড়ি দূরে হওয়ায় গত ১১ জানুয়ারি আমাদের বাড়িতে হামলা চালায় আলাই সরদার, নাজমুল হোসেন বিপু সরদার, দুলাল সরকার ও তাদের লোকজন। এসময় বাধা দিলে আমাদের মারধর করা হয়। লুট করে নিয়ে যাওয়া হয় নগদ টাকা, ৪টি ছাগল, ঘরের আসবাবপত্র, টিউবয়েল, কাপড়-চোপর। এমনকি সরকারের দেয়া স্লিপের চাউলসহ খাদ্যপণ্যও লুটপাট করে নিয়ে যায় সন্ত্রাসীরা। প্রকাশ্যে দিবালোকে আমাদের অনেক কষ্টে পালন করা ছাগলগুলো জবাই করে উল্লাসের সঙ্গে খাওয়া-দাওয়া করে।
তিনি বলেন, ঘটনার পর আমি বাদী হয়ে পাবনা সদর থানায় লিখিত অভিযোগ দিই। অভিযোগের পর এসআই আরিফ ও এসআই মাসুদ রানা ঘটনা তদন্তে এলাকায় যান। কিন্তু হামলাকারীরা প্রভাবশালী হওয়ায় তাদের সঙ্গে পুলিশের সখ্যতা দেখা দেয়। কিন্তু ঘটনার ১ মাস অতিবাহিত হলেও আমাদের কোনো মামলা গ্রহণ করেনি পুলিশ। পরে বিষয়টি নিয়ে গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশ হলে থানার ওসি স্যারসহ উর্ধ্বতন কর্মকর্তা নজরে আসে। পরে ওসি স্যার আমাদের থানায় ডেকে নিয়ে মামলা গ্রহণ করে, যার নং- ২১/৭৭, তারিখ ১১ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ এবং তিনি আমাদের কিছু আসবাবপত্রও কিনে দেন।
তারা অভিযোগ করে বলেন, মামলা গ্রহণের পর এসআই আরিফ আবারও ঘটনা তদন্তে করে। এসময় আসামিদের তার সঙ্গে আরও সখ্যতা দেখা যায়। আসামিদের ধরেও তাদের টাকার বিনিময়ে ছেড়ে দেন এসআই আরিফ। এখন পর্যন্ত কোনো আসামিকে পুলিশ গ্রেফতার করেনি। আমাদের ছাগলসহ মালামাল উদ্ধারে কোনো উদ্যোগ গ্রহন করেনি। সম্প্রতি আদালতে চার্জশিট দেয় পুলিশ। কিন্তু সেই চার্জশিট আসামিদের পক্ষে দিয়ে বিভিন্ন ধারা দুর্বল করা হয়েছে। আমাদের মারধর করলেও কোনো মেডিকেল রিপোর্ট দেয়া হয়নি, আমার বোনকে মারধর ও শ্লীলতাহানির বিষয়টিও উল্লেখ করা হয়নি। হামলার অন্যতম মুল আসামি নাজমুল হোসেন ওরফে বিপু সরদারকে বাদ দেয়া হয়েছে।
তারা আরও বলেন, আসামিরা অত্যন্ত প্রভাবশালী। হামলার আরেক হোতা ও আসামি হিরাজুল ইসলাম একজন মাদক ব্যবসায়ী। সে মাদকসহ র্যাবের কাছে একবার আটকও হয়েছিল। হিরাজুল ও জাহিদ হুমুকদাতা, তাদের কথায় হামলা-লুটপাট করা হয়েছে। পাশের রানীনগর ও চর আশুতোষপুরে তাদের অত্যাচারে অনেকে নিঃস্ব হয়েছে। তাদের অত্যাচারের জন্য এলাকার কোনো লোক শান্তিপুর্ণভাবে বসবাস করতে পারে না। ঘটনার পর থেকে আসামিরা আমাদের হুমকি-ধামকি দিয়ে আসছে। আমাদের প্রাণে মেরে ফেলা এবং জেলে ঢুকানোর হুমকি দেয়। তারা এতোটাই প্রভাবশালী যে স্থানীয় মেম্বার-চেয়ারম্যানের কাছে গিয়েও বিচার পাইনি। এখনো আমাদের নিজের বাড়িতে ওঠতে পারেনি। ৪টি শিশু সন্তান নিয়ে অন্যের বাড়িতে মানবেতর জীবনযাপন করছি। ঘটনার সুষ্ঠু বিচারের আপনাদের সাহায্য প্রার্থনা করছি।
এ বিষয়ে পাবনা সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কৃপা সিন্ধু বালা বলেন, ‘তদন্তকারী কর্মকর্তা যেটা পেয়েছে সেটাই দিয়েছে। এখানে অন্য কারো হস্তক্ষেপ করার সুযোগ নেই। নাম (অভিযুক্ত আসামির) পাইনি সে জন্য নাম বাদ গেছে। এখন বাড়িতে উঠার বিষয়টা তো আমার কাছে বলে নাই। আমার কাছে বললে বিষয়টি দেখবো।’