// সাজ্জাদ হোসেন সাজু, ফরিদপুর জেলা প্রতিনিধি ::
ফরিদপুরের চভদ্রাসনে সহকারী জজ হলেন আবির ঘোস হৃদয়। ছোটবেলায় অন্য দশজনের মতো ডাক্তার কিংবা ইঞ্জিনিয়ার হওয়ার স্বপ্ন দেখার সাহস হয়নি তার। স্বপ্নেও হয়তো সে এমন কল্পনা করেননি। অজপাড়াগাঁয়ে নিম্নবিত্ত পরিবারে জন্ম নেয়া ছেলেটি কখনও বড় স্বপ্ন দেখার সাহস পায়নি। পরিবারের আর্থিক অসচ্ছলতা তাকে ভাবাত। কিন্তু কে জানত- স্বপ্নহীন এই ছেটির জন্য বিধাতা অনেক বড় পরিকল্পনা করে রেখেছিল। গল্পটি আবির্ ঘোষ হৃদয়ের বাবা দীপক ঘোষের। ১৬তম বাংলাদেশ জুডিশিয়াল সার্ভিস পরীক্ষায় সহকারী জজ বা জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট হিসেবে সুপারিশপ্রাপ্ত হয়েছে তিনি ১০৪ জনের তালিকা তার স্থান ৬৯।
সম্প্রতি বাংলাদেশ জুডিশিয়াল সার্ভিস কমিশনের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত সুপারিশপ্রাপ্তদের একটি তালিকা থেকে এ তথ্য জানা যায়।
ফরিদপুর জেলা চরভদ্রাসন উপজেলার হাজীগঞ্জ বাজারের একটি নিম্নবিত্ত পরিবারে জন্ম আবির ঘোষ হৃদয়ের। মিষ্টির দোকানদার বাবা দীপক ঘোষের ছেলে হয়ে বড় স্বপ্ন দেখা তার কাছে আকাশ কুসুম মনে হত। ডাক্তার কিংবা ইঞ্জিনিয়ারতো বহু দূরের ভাবনা, যখন সে হাইস্কুলে পড়তেন তখন তার ভাবনা ছিল মাধ্যমিকের পাঠটুকু চুকলেই বুঝি সফলতা। কিন্তু ভালো ফলাফল করতে থাকে সে। ধীরে ধীরে আত্মবিশ্বাস বাড়ে।চরহাজীগঞ্জ হাইস্কুল থেকে ২০১৫ সালে এসএসসি পাসের পর ভর্তি হয় ফরিদপুর ইয়াসিন কলেজে।
হৃদয় বলেন, এই সময়টায় আমি ছিলাম পাখির মত উড়ন্ত। জীবনের অর্থ বুঝতে শিখিনি তখনও। কিন্তু এগিয়ে গিয়েছি শুধু। কলেজে উঠে ভেবেছিলাম, ইন্টারমিডিয়েট শেষ হলেই বুঝি বেঁচে যাব। এতেই আমি খুশি।
উচ্চাকাঙ্ক্ষাহীন হৃদয় কখনও ভাবতেও পারেনি সে একদিন বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়বে।জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে আইন ও বিচার বিভাগে পড়ার সুযোগ পায়। আইন বিভাগের শিক্ষার্থী হিসেবে ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষে ভর্তি হয়। তার স্বপ্ন ধীরে ধীরে বড় হতে থাকে। পদে পদে আর্থিক প্রতিবন্ধকতা তাকে দমিয়ে রাখতে পারেনি। বিভাগে তার ফলাফল দিনদিন ভালো থেকে আরো ভালো হতে থাকে। তার আত্মবিশ্বাস ও স্বপ্ন বড় হতে থাকে। সে ভাবতে সাহস পায় যে সেও বিচারক হতে পারে। এভাবেই স্বপ্নের অঙ্কুরোদগম। আজ সেই স্বপ্ন পূরণ হয়েছে। বিচারক হিসেবে সুপারিশপ্রাপ্ত হয়েছে সে।
এই পথচলায় সে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে মহান সৃষ্টিকর্তার প্রতি। আনন্দে অভিভূত হৃদয় ঘোষ বলেন, ‘আমার স্বপ্ন এত আকাশছোঁয়া ছিল না। সৃষ্ঠিকর্তার কাছে অনেক শুকরিয়া, তিনি আমাকে এই অর্জনের শক্তি ও বিশ্বাস দিয়েছেন। আমার বাবা-মাসহ আত্মীয়-স্বজন যারা আমাকে তিলে তিলে করে মানুষ করেছেন তাদের প্রতি আমার কৃতজ্ঞতার শেষ নেই। পাশাপাশি বিভাগের শ্রদ্ধাভাজন শিক্ষকরা শুরু থেকে আমাকে মেন্টাল এবং লজিক্যাল সাপোর্ট দিয়ে সবসময় পাশে ছিলেন তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা। বারবার একটি কথা বলেন চর অযোধ্যা উচ্চ বিদ্যালয় প্রধান শিক্ষক বিষ্ণু কুমার চক্রবর্তীর কথা শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত যার লজিক্যাল সাপোর্টে এই অর্জন সম্ভব হয়েছে। শিক্ষক সহপাঠীদের ধন্যবাদ দিতেও ভোলেনি সে।
তার এই অর্জনে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন ও বিচার বিভাগের সবাই অত্যন্ত উচ্ছ্বসিত। বিভাগের শিক্ষক শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি বিশ্ববিদ্যালয়ের সবাই আইন ও বিচার বিভাগ এমন অর্জনে আনন্দিত।