পাত্রে ফুঁ দেওয়া ইসলামে নিষেধ কেন ?

প্রত্যেক বিষয়ে সুন্নতের অনুসরণে বরকত নিহিত। সুন্নতের অনুসরণ না করা হলে ক্ষতির সম্মুখীন হতে হয়। প্রিয়নবী (স.) আমাদের অনেক সূক্ষ্ম সূক্ষ্ম বিষয়েও দিকনির্দেশনা দিয়েছেন। মুসলমানরা সেগুলো সুন্নত হিসেবেই পালন করেন। ফলস্বরূপ অজান্তেই বরকত লাভ করেন এবং নানা ক্ষতি থেকে বেঁচে থাকেন।

পানি পান করা ও পানপাত্র ব্যবহারেও সুন্নত পদ্ধতি রয়েছে। পাত্রে ফুঁ দিতে নিষেধ করেছেন নবীজি (স.)। ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (স.) পানপাত্রে নিঃশ্বাস ফেলতে ও তাতে ফুঁ দিতে নিষেধ করেছেন। (ইবনে মাজাহ: ৩৪২৮)

এই হাদিসের সঙ্গে আধুনিক বিজ্ঞানও সহমত পোষণ করে। আমরা জানি, পানি পানের সময় পাত্রে নিঃশ্বাস ফেলার দরুন সেই পানি বিষাক্ত হয়ে যায়।

বৈজ্ঞানিক গবেষণায় দেখা গেছে, মানুষ শ্বাস-প্রশ্বাসের জন্য নাক ও মুখ দিয়ে অক্সিজেন গ্রহণ করে এবং কার্বন ডাই-অক্সাইড ত্যাগ করে। নিঃশ্বাসে থাকে দেহের দূষিত বাষ্প ও রোগ-জীবাণুবাহী অপেক্ষাকৃত ভারী বায়বীয় পদার্থ কার্বন ডাই-অক্সাইড, যা খাবার কিংবা পানির সঙ্গে মিশে আবার মানুষের দেহের ভেতরে প্রবেশ করে। ফলে শরীরে বিভিন্ন রোগ-জীবাণুর আস্তানা গড়ার সুযোগ সৃষ্টি হয়।

পানির অপর নাম জীবন। পানি ছাড়া জীবনের অস্তিত্ব কখনোই কল্পনা করা যায় না। বিশুদ্ধ পানির জন্য মানুষ কত কিছুই না করছে। উন্নত বিশ্বে এই খাতে খরচ করা হচ্ছে কোটি কোটি ডলার। ডিডাব্লিউর তথ্যমতে, জার্মানিতে চারজনের একটি পরিবার বিশুদ্ধ পানির জন্য দেড় হাজার ইউরো ব্যয় করে। যা বাংলাদেশি টাকায় হিসাব করলে এক লাখ ৪১ হাজার ৩৯৯ টাকা হয়।

এতকিছু করার পরও যদি কেউ পানি পান করার সময় রাসুল (স.)-এর এই হাদিসটির ওপর আমল না করে, তাহলে তার পুরো পরিশ্রমটাই বৃথা হয়ে যায়। প্রশ্ন জাগতে পারে, অনেকের এভাবে পানি পান করতে গেলে নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে আসতে পারে। কিংবা অতৃপ্তি থেকে যেতে পারে, তারা কী করবে? তার সমাধানও দিয়েছেন প্রিয়নবী (স.)।

আবু সাইদ খুদরি (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (স.) পানীয় পানকালে তাতে ফুঁ দিতে নিষেধ করেছেন। একটি লোক নিবেদন করল, ‘পানপাত্রে (যদি) আমি খড়কুটো দেখতে পাই?’ তিনি বলেন, ‘তাহলে তা ঢেলে ফেলে দাও।’ সে নিবেদন করল, ‘এক শ্বাসে পানি পান করে আমার তৃপ্তি হয় না।’ তিনি বললেন, ‘তাহলে তুমি পেয়ালা মুখ থেকে দূরে সরিয়ে নিয়ে নিঃশ্বাস গ্রহণ করো।’ (রিয়াদুস সালেহিন: ৭৬৯)

শুধু পানি কেন, যেকোনো গরম খাবারও ফুঁ দিয়ে খাওয়া উচিত নয়। তাতে শরীরে জীবাণু প্রবেশ করতে পারে। আল্লাহ তাআলা আমাদের সবাইকে জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে রাসুল (স.)-এর সুন্নতের অনুসরণ করার তাওফিক দান করুন। আমিন।