// আব্দুল জব্বার, পাবনা: পাবনার সুজানগরে পিতার পেনশনের টাকা, ওয়ারিশন ও নিজের নামীয় সম্পত্তি লিখে দিতে রাজি না হওয়ায় এক প্রতিবন্ধী ভাতিজীসহ ভাবীকে মারধর ও কলেজ পড়ুয়া আরেক ভাতিজীকে মুঠোফোনে প্রাণনাশের হুমকি (কল রেকর্ড) দিয়ে বাড়ী থেকে বের করে দিয়েছে তার আপন চাচা ঢাকার কোরানীগঞ্জ উপজেলার সহকারী উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার মো. আব্দুল মতিন।
এ ঘটনায় সুজানগর থানায় একটি অভিযোগ দেওয়া হলেও পুলিশ সেটিকে সাধারণ ডায়েরী হিসেবে অর্ন্তভুক্ত করে।
(জিডি নং- ২৮৫৭ তারিখ ৩০ আগষ্ট ২০২৩ইং)। পরে ৩১ আগষ্ট ২০২৩ নির্যাতিতা আলেয়া খাতুন (৬১) বাদী হয়ে দেবর কোরানীগঞ্জ উপজেলার সহকারী উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার মো. আব্দুল মতিনসহ ৭ জনকে আসামী করে পাবনার আমলী আদালত-৩ এ একটি মামলা দায়ের করেন। (মামলা নং ৭০/২০২৩ তারিখ ৩১ আগষ্ট ২০২৩ ইং)। আদালত অভিযোগটি গ্রহণ করে সেটিকে মামলা হিসেবে অর্ন্তভুক্ত করে তদন্তের জন্য সুজানগর থানার উপর দায়িত্ব অর্পণ করেন। গত ১০ সেপ্টেম্বর ২০২৩ তারিখে মোঃ শাহজাহান আলী, চেয়ারম্যান, দুলাই ইউনিয়ন পরিষদ কে লিখিতভাবে অবহিত করা হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে এলাকায় নানা আলোচনা-সমালোচনা চলছে।
পুলিশ ও সংশ্লিষ্ট সুত্র জানায়, পাবনার সুজানগর উপজেলার চরদুলাই গ্রামের ইউসুফ আলী শেখ পাবনা জেলা প্রাণী সম্পদ অফিসে উচ্চমান সহকারী হিসেবে চাকুরি করতেন। ২০২২ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর তিনি স্ট্রোক করে মারা যান। তার স্ত্রী আলেয়া খাতুন (৬১), বুদ্ধিপ্রতিবন্ধী মেয়ে আশরাফুল নাহার ইভা (২৮) এবং পাবনার এডওয়ার্ড কলেজের ব্যবস্থাপনা বিভাগের ১মবর্ষের ছাত্রী ইসমত জেরিন (১৯) ইউসুফের মৃত্যুর পর গ্রামের বাড়ীতেই বসবাস করতেন। সম্প্রতি তার স্ত্রী ও সন্তানরা পেনশন হিসেবে নগদ ২৪ লক্ষ ৫৬ হাজার ২৮০ টাকার তথ্য পান। এছাড়া মরহুম ইউসুফের পূর্বে গচ্ছিত টাকার মধ্যে ১০ লক্ষ টাকা সুজানগর পোষ্ট অফিসে এবং ৯ লক্ষ ৮৮ হাজার টাকা সিটি ব্যাংক পাবনা শাখায় এফডিআর যা ছোট ভাই আব্দুল মতিন জোড়পূর্বক নিজের নামে নমীনি করে নেন এবং বাকী টাকা দিয়ে তাদের সংসার চলছিল।
সম্প্রতি চাচা আব্দুল মতিন তার ভাবীর কাছে সুজানগর উপজেলার ভাবানীপুর মৌজার জে.এল. নং-২০৮ বিধবা আলেয়া খাতুনের নামীয় দশমিক ০.১০০০ (দশ) একর জমি লিখে দিতে বলেন এবং নগদ ৩০ লক্ষ টাকা দাবী করেন এবং নিকট আত্মীয় ও গ্রাম্য প্রধানদের মাধ্যমে বিধবা আলেয়া খাতুনকে অনবরত চাপ দিতে থাকে। অসহায় আলেয়া খাতুন টাকা ও জমি লিখে দিতে অস্বীকার করলে গত ২৯ আগষ্ট আব্দুল মতিনের নিদের্শে মোঃ জনাব আলী শেখ (৫৬), মোছা লাভলী খাতুন (৪৭), কেয়া খাতুন (১৯), আমেনা খাতুন (৬০), নিজাম উদ্দিন (৪২) ও ইনসান বেগম (৬০) আলেয়া খাতুন তার প্রতিবন্ধী মেয়েসহ দুই মেয়েকে বেধরক পিটিয়ে বাড়ী থেকে বের করে দেয় এবং এই বাড়ীতে আর কোনদিন আসলে এক কোপে কেটে ফেলা হবে বলে হুমকি দেন।
এ ঘটনার পর অসহায় প্রতিবন্ধী ও কলেজ পড়ুয়া মেয়েদেরকে নিয়ে অসহায় আলেয়া খাতুন বিচারের আসায় দ্বারে দ্বারে ঘুরছে।
মৃত ইউসুফ আলী শেখের স্ত্রী আলেয়া খাতুন বলেন, আমরা নিরাপত্তাহীনতায় এখান থেকে ওখানে পালিয়ে দিন কাটাচ্ছি। কোথাও বিচার পাচ্ছি না। মতিনের ভয়ে কেউ কিচ্ছু বলছে না। সবাই মুখে কুলুপ এটে রয়েছে। আমি আমার সন্তান ও সম্পদের নিরাপত্তা চাই।
এ ব্যাপারে সুজানগর থানার ওসি মো. জালাল উদ্দিন বলেন, বিষয়টি সম্পর্কে তারা অবগত। থানায় জিডি গ্রহন করা হয়েছে। অভিযোগের তদন্ত চলছে। আদালতের আদেশনামা হাতে পেয়েছি।
এ বিষয়ে অভিযুক্ত চাচা ঢাকার কোরানীগঞ্জ সহকারী উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার মো. আব্দুল মতিন তার বিরুদ্ধে আনীত সকল অভিযোগ করে বলেন, তার ভাতিজীরা বিপথগামী হতে চলছিল তাই চাচা হিসেবে আমি শাসন করেছি। জমি বা টাকা চাওয়ার ঘটনা সত্য না।