ফেলে আসা দিন গুলো -৪৭

এবাদত আলী

১৯৭২ সালের ৬ এপ্রিল তারিখে আমি সিরাজগঞ্জ মহকুমার শাহজাদপুর সিও রেভ অফিস হতে বদলি হয়ে পাবনায় চলে আসি। পাবনা সদর মহকুমার আটঘরিয়াতে আমার পোষ্টিং হয়।
আটঘরিয়া থানা সদর দেবোত্তর ভুমি অফিসে যোগদান করি। এদিকে যাতায়াতের সুবিধার জন্য পাবনা শহর থেকে ৬ মাইল দুরে অবস্থিত টেবুনিয়াতে আমি বাসা-বাড়ি নির্মাণ করে বসতি স্থাপন করি।
চাকরির পাশাপাশি আমার লেখা-লেখির উৎকর্ষ সাধন এবং সাংবাদিকতা করার কোন ফাঁক-ফোঁকর বের করা যায় কিনা, তাই পুরনোদের সঙ্গে নতুন করে ঝালাই করার ভাব জমাতে লাগলাম।
আমি এডওয়ার্ড কলেজে অধ্যয়নের সময় নাটকে অভিনয় করতাম। কলেজে ভর্তি হয়েই ছাত্র সংসদের নাটক কল্যাণ মিত্রের ‘‘পাথরবাড়ি’’ নাটকে ছোট একটি চরিত্রে অভিনয় করার সুযোগ লাভ করি। পাবনা শহরের বনমালী ইনস্টিটিউটে মঞ্চায়িত সেই নাটকে পাবনা এডওয়ার্ড কলেজের ছাত্র নেতা মোহাম্মদ নাসিম (বীর মুক্তিযোদ্ধা, সাবেক মন্ত্রী, মৃত ১৩ জুন-২০২০খ্রিঃ), মাসুম আহমেদ এবং নাজমুল হক নান্নু এবং আমিসহ আরো অনেকেই অভিনয় করেন। এরপর ছাত্র সংসদের পক্ষ থেকে নাটক‘‘ কালো অধ্যায় চরিত্রে ডাক্তারের ভূমিকায় (বীর মুক্তিযোদ্ধা, রফিকুল ইসলাম বকুল, সাবেক এমপি পাবনা-৫, (মৃত্যু ১০ নভেম্বর-২০০০ খ্রিঃ) এবং তার সঙ্গে রহমতের (কৌতুক) চরিত্রে আমি অভিনয় করি। সেই খবর বিভিন্ন পত্র পত্রিকায় ফলাও করে প্রকাশিত হয়। পত্রিকায় নাম ছাপা হলে তখন যে কি আনন্দ পেতাম তা বর্ণনা করাই কঠিন।
সেসময় আমার আরো কিছু পরিচিত বন্ধু-বান্ধব ছিলো। তারা আবার আমাকে কাছে পেয়ে বিভিন্ন অনুষ্ঠানে ডাকাডাকি করতো এই শর্তে যে আমি সঙ্গে থাকলে যেভাবেই হোক পত্র-পত্রিকার পাতায় নাম চলে আসবে। এমনি একটা নাট্যানুষ্ঠান ছিলো পাবনা সরকারি এডওয়ার্ড কলেজের শহীদ আব্দুস সাত্তার মিলনায়তনে।
‘পাবনা থিয়েটার -৭৭ এর প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি বিশিষ্ট নাট্য পরিচালক ও নাট্য শিল্পী কোবাদ আলীর সঙ্গে একদিন দেখা হলে তিনি অতি আগ্রহভরে সেই নাট্যানুষ্ঠানের কথা আমাকে জানালেন। তিনি আমার সম্পর্কে জানতেন। একথা বল্লে অত্যুক্তি হবেনা যে, ১৯৬৫-৬৬ সালের দিকে গোপালপুরে জায়গির থাকাকালীন চকচিরোটে হারেজ আলী মাস্টারের বাড়ির খোলার ওপর ‘‘ দাদুর স্বপ্ন’’ নামে যে নাটক মঞ্চস্থ হয় তখন তার পরিচালক ছিলাম আমি। সেসময় এবং পরবর্তীকালে একই স্থানে শাহজাহান আলী ‘হিরো’ এর পরিচালনায় ‘‘শেষ ফল ’’ নাটকের অভিনয়ে কোবাদ আলীকে অভিনয়ের সুযোগ করে দেই। ১৯৭৭ সালে যখন পাবনা শহরে‘‘ পাবনা থিয়েটার -৭৭’’ প্রতিষ্ঠা লাভ করে তখন তার উদ্যোগেই আমি প্রতিষ্ঠাকালীন সদস্য ছিলাম। পরে ১৯৭৯ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে কমিটি কিছুটা রদ-বদল হয়। এসময় আজিজুল হকের সভাপতিত্বে একটি সাধারণ সভায় অধ্যাপক মশিউর রহমান খান কে সভাপতি এবং আতিয়ার রহমানকে সাধারণ সম্পাদক করে ১৭ সদস্য বিশিষ্ট একটি কার্যকরি কমিটি গঠন করা হয়। কার্যকরি কমিটির অন্যান্য সদস্যরা হলেন, আজিজুল হক, কোবাদ আলী, আমিনুর রহমান, সিদ্দিকুর রহমান, কাজী রাজ্জাক, এবাদত আলী, জাহাঙ্গীর আলম, হূমায়ূন কবীর, নুরুল ইসলাম, কামাল আহমেদ, মোঃ সোনাই, বেলায়েত হোসেন, আব্দুল মান্নান, মহসিন আলী ও সোলাইমান আলী।
কোবাদ আলী আমাকে জানালেন, পাবনা সরকারি এডওয়ার্ড কলেজের ছাত্র-ছাত্রীর উদ্যোগে ও প্রযোজনায় কল্যাণ মিত্রের ‘‘ সাগর সেচা মানিক’’ নাটক মঞ্চস্থ হবে ১০ মে -১৯৭৩ তারিখে। নাটকটি পরিচালনা করবেন শাহজাহান আলী ‘‘হিরো’’। তিনি জানালেন, আমাদের সব কিছু ঠিক-ঠাক হয়ে গেছে, শুধু বাঁকি রয়েছে একজন প্রোমোটার বা স্মরণ সহায়তাকারির। আপনাকে অনুরোধ জানাচ্ছি আপনি এতে না করবেন না।
নির্ধারিত তারিখে সন্ধ্যা ৭টায় শহীদ আব্দুস সাত্তার মিলনায়তনে নাটকটি মঞ্চস্থ হলো। নাটকের পৃষ্ঠপোষকতায় ছিলেন সরকারি এডওয়ার্ড কলেজের অধ্যক্ষ শ্রী অমরেন্দ্র নারায়ণ চৌধুরী। সহকারি নাট্য পরিচালনায় মোঃ কোবাদ আলী, স্মরণ সহায়তায় এবাদত আলী ও মাষ্টার আলাউদ্দিন। মঞ্চ পরিচালনায় অধ্যাপক আবু আহম্মদ রসিদুল্লাহ, অধ্যাপক খালেকুজ্জামান ও অধ্যাপক মধুসুদন ঘোষ। সহায়তায় নজরুল হক নান্নু, আবুল কাশেম, উজ্জল, সিদ্দিকুর রহমান বাবলু, ইশারত আলী, ইকবাল হোসেন, আনিসুর রহমান কামাল ও মঞ্জুর হোসেন। কন্ঠ সঙ্গীতে রবীন্দ্র নাথ সরকার, যন্ত্র সঙ্গীতে রূপু, তরুন, সোনা মিয়া ও মোস্তফা। সার্বিক তত্বাবধানে ছিলেন বাংলা বিভাগের প্রধান অধ্যাপক অসিত কুমার মজুমদার ও বাণিজ্য বিভাগের প্রধান অধ্যাপক নেসার আহমেদ।
অভিনয়ে যারা ছিলেন, তারা হলেন,মোঃ ছানা উল্লাহ, মোঃ আশরাফ আলী ওরফে মিটু, মোঃ আবুল কাশেম, মোঃ আব্দুস সাত্তার, আবুল কাসেম, আবু হাসনাত মোর্শারফ, মোকছেদ আলী, ইয়াছিন আলী ও কোবাদ আলী, মাষ্টার মির্জা গোলাম ইয়াছিন, তোফাজ্জল হোসেন বাবলু, আব্দুল মান্নান ও আবুল হোসেন। নারী চরিত্রে মিনতি, নুর জাহান ও জোৎসনা বসু। এই নাটকের সংবাদ- পত্র-পত্রিকায় প্রকাশিত হলে নিজে সাংবাদিক হওয়ার আগ্রহ আরো বৃদ্ধি পেতে থাকে।
১৯৭৬ সালের আর একটা উল্লেখযোগ্য অনুষ্ঠানে আমার ডাক পড়লো। এক শিশু কবি সম্মেলনে। সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটির আহ্বায়ক কবি ম আ কুদ্দুস পদ্মা একটি আমন্ত্রণ পত্র দিলেন। আম›ত্রণ পত্রটি নি¤œরূপ: সূধী, রাধানগর দিনমান সাহিত্য-সংস্কৃতি সংসদের সৌজন্যে আগামী পঁচিশে জানয়ারী -১৯৭৬ সাল অনুষ্ঠিত হবে ‘শিশু কিশোর কবি সম্মেলন’।
প্রধান অতিথির আসনে থাকবেন জনপ্রিয় শিশু সাহিত্যিক কবি বন্দে আলী মিঞা। আমন্ত্রিত অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন লেখক এবাদত আলী। পুরুষ্কার বিতরণ করবেন সন্মানিত জেলা প্রশাসক এম. এ. মতিন।
প্রতিযোগী ভাই-বোনদের উৎসাহ দিতে আপনি আমন্ত্রিত।
বনিীত—–
ম,আ, কুদ্দুস পদ্মা
সম্পাদক, প্রস্তুতি কমিটি
শিশু-কিশোর কবি সম্মেলন, পাবনা।স্থান: মৌলানা কছিম উদ্দীন
আহমেদ স্মৃতিকেন্দ্র, পাবনা। সময়: সকাল ১০টা।
নির্ধারিত তারিখে শিশু-কিশোর কবি এবং তাদের অভিভাবকেরা আগেই
এসে ভিড় করেন। পাবনার জেলা প্রশাসক এম এ মতিন সঠিক সময় এসে হাজির। যথারীতি অনুষ্ঠান শুরু হলো। আমি (এই প্রতিবেদক), কবি হামিদুল হক হিরো, কবি শামসুর রহমান বাবুসহ বেশ কয়েকজন বক্তব্য দিলেন। প্রধান অতিথির ভাষণে জনপ্রিয় শিশু সাহিত্যিক কবি বন্দে আলী মিয়া মজার মজার গল্প বলে উপস্থিত শিশু- কিশোর কবি ও দর্শক শ্রোতার মন ভরিয়ে দিলেন। জেলা প্রশাসক তার ভাষণে বলেন, ‘‘আমি সবেমাত্র পাবনাতে যোগদান করেছি। কবি বন্দে আলী মিয়ার মত একজন গুণীজনের সঙ্গে সাক্ষাত হওয়ায় আমি নিজেকে ধন্য মনে করছি।’’
এই বিষয়ে একটি নিউজ তৈরি করে আমার পরিচিত সাংবাদিকের হাতে পৌঁছে দিলাম। কয়েকদিন পর তা পত্রিকায় হু বহু প্রকাশিত হলে সংবাদ লেখার ব্যাপারে আমার যে কিছুটা ধারণা জন্মেছে তা অনুধাবন করে বেশ ভালই লেগেছিলো। (চলবে) (লেখক: সাংবাদিক ও কলামিস্ট)।

এবাদত আলী
সাংবাদিক ও কলামিস্ট
তারিখ: ০৯ /০৯ /২০২৩.