// নাটোর প্রতিনিধি
একটি শিশুর জন্ম গ্রহণের পর নাগরিকত্ব প্রমাণের প্রথম দলিল হচ্ছে জন্মনিবন্ধন। গুরুত্বপূর্ণ এই নথি তৈরিতে ইউনিয়ন পর্যায়ে নানা দূর্ভোগের চিত্র নতুন কিছু নই। শিশুর জন্মনিবন্ধন করতে গিয়ে অনেকের জুতার তলা পর্যন্ত ক্ষয়ে যায়। এই যখন বাস্তবতা, তখন নাটোর জেলার লালপুর উপজেলার অর্জুনপুর-বরমহাটি (এবি) ইউনিয়ন পরিষদে শতাধিক কাল্পনিক জন্মনিবন্ধন তৈরির হিড়িক পড়ার অভিযোগ উঠেছে। যা নিয়ে নানা কাল্পনিক ব্যাখ্যাও দিচ্ছেন সংশ্লিষ্টরা। তবে কি উদ্দেশ্যে এমন জালিয়াতি তা নিয়ে ধোঁয়াশা তৈরি হয়েছে।
অভিযোগ উঠেছে, অসৎ উদ্দেশ্যে হাসিলে ইউপি সচিবের নেতৃত্বে এই জালিয়াতির ঘটনা ঘটেছে। ওই ইউনিয়নের জন্মনিবন্ধনের তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, ইউনিয়নের শালেশ্বর গ্রামের আবুল কালম আজাদ ও বাশিয়ারা দম্পতির দুই কন্যা। তবে এবি ইউনিয়ন পরিষদ জালিয়াতির মাধ্যমে ওই দম্পতিকে না জানিয়ে, তাদের পরিচয় পত্র ব্যবহার করে মো. শামীম হোসেন নামে এক ছেলে শিশুর জন্ম নিবন্ধন করেছে। যার জন্ম নিবন্ধন নম্বর ২০২১৬৯১৪৪৫৭১০৪০৪৫। একই ইউনিয়নের ডোহরশোলা গ্রামের জিয়ারুল সরদার ও রেখা খাতুন দম্পতির দুই ছেলে, এক মেয়ে। ছোট সন্তানের বয়স ৯ বছর অথচ তাদের পরিচয়পত্র ব্যবহার করে ২০২২ সালে ১০ ফেব্রুয়ারি মো. জামিলুর (জন্ম নিবন্ধন নম্বর ২০২২১৬৯৪৪৫৭১০৪১৮৬) নামে এক শিশুর জন্ম হয়েছে বলে জন্ম নিবন্ধন করেছেন ওই ইউনিয়ন পরিষদের সচিব জহুরুল হক। অথচ এসব শিশুর আদৌতে কোন অস্তিত্বই নেই।
আবার, পাটিকাবাড়ি গ্রামের মৃত শিবেন ও তার ভাগনে নব কুমারের স্ত্রী কৃষ্ণারানীকে স্বামী-স্ত্রী দেখিয়ে সান্ত চন্দ্র (জন্ম নিবন্ধন নম্বর- ২০২১১৬৯৪৪৫৭১০৪০৫৪) নামে অস্তিত্বহীন শিশুর জন্ম দিয়েছে। আবার ভাগনে নব কুমারের সঙ্গে মামি শ্রীমতি নূপুরকে জুড়ে দিয়ে রানা দাস (জন্ম নিবন্ধন নম্বর- ২০২১১৬৯৪৪৫৭১০৪০৫৬) নামে আরেকটি অস্তিত্বহীন শিশুর জন্ম নিবন্ধন জালিয়াতি করা হয়েছে।
অভিযোগ উঠেছে, এসব ভুয়া জন্মনিবন্ধন তৈরি করে গোপনে অন্যায় সুবিধা লুটছেন একটি গোষ্ঠী। সূত্র বলছে, এমন জালিয়াতি করে শতাধিক শিশুর জন্ম নিবন্ধন করেছেন ইউনিয়ন পরিষদের সচিব। কিন্তু কাল্পনিক এই জন্মনিবন্ধন তৈরির পেছনের রহস্য এখনো উন্মোচিত হয় নি ।
এবিষয়ে ভুক্তভোগী নব কুমার জানান, মামা-ভাগনের মত পবিত্র সম্পর্ককে কুলশিত করে ভাগনের স্ত্রীর সাথে আমাকে এবং আমার স্ত্রীর সঙ্গে ভাগনের ঘরে সন্তান দেখিয়েছেন। এই জঘন্য কাজের সাথে যারা জড়িত আমি তাদের বিচার দাবি করছি।
আরেক ভুক্তভোগী আবুল কালাম আজাদ জানান, আমার ছেলে নেই। অথচ ইউনিয়ন পরিষদ জন্ম নিবন্ধন জালিয়াতি করেছে। এর সাথে জড়িতদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানায়।
এবি ইউনিয়নের সচিব জহুরুল হক বিষয়টি নিয়ে একেকবার একেক রকম ব্যাখ্যা দিয়েছেন। প্রথমে তিনি বিষয়টি অস্বীকার করেন। পরক্ষণেই এক ইউপি উদ্যোক্তাকে দোষারোপ করেন। এছাড়া তার ইউনিয়নে প্রতিমাসে নূন্যতম ২০ জন ৪৫ দিনের বাচ্চার জন্মনিবন্ধন না করলে শোকজের মতো শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়ার কারণে কিছু ভুল হয়েছে বলেও দাবি করেন।
তিনি বলেন, তার ইউনিয়নে ২০ জন বাচ্চায় জন্ম গ্রহণ করে না। গড়ে ১২ জনের তথ্য আসে। বাকিগুলো গ্রাম পুলিশের দেয়া তথ্যে করা হয়। এক্ষেত্রে কিছু ভুল হতে পারে।
এ বিষয়ে ইউনিয়নের চেয়ারম্যান গোলাম মোস্তফা আসলাম বলেন, আমি এসব বিষয়গুলো কম বুঝি। আইন-কানুনও জানা নেয়। শুনেছি কিছু ভুল হয়েছে।
এ বিষয়ে লালপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শামীমা সুলতানা বলেন, বিষয়টি জেলা প্রশাসনকে জানানোর পরপরই মঙ্গলবার এসিল্যান্ডকে তদন্তের দায়িত্ব দিয়ে চিঠি দিয়েছেন জেলা প্রশাসক। তদন্ত করে খতিয়ে দেখা হবে কেন এমন ঘটনা ঘটেছে। এছাড়া প্রতিমাসে নূন্যতম ২০ জন ৪৫ দিনের শিশুর জন্মনিবন্ধন না করলে সচিবের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়া হয় এ ব্যাখ্যা যিনি দিয়েছেন এর কোন ভিত্তি নেয়। তদন্ত প্রতিবেদন হাতে পেলে সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে জানান এই কর্মকর্তা।