// সঞ্জু রায়ঃ ঝুঁকিপূর্ণ ভবন, অনিরাপদ ক্যাম্পাসসহ নানা অব্যবস্থাপনার মধ্য দিয়ে বগুড়া বক্ষব্যাধি হাসপাতালে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে চলছে চিকিৎসাসেবা। অচল যন্ত্রাংশ আর জনবল সংকটে অনেকটা অবহেলিত হয়ে পরে আছে এই হাসপাতাল। রোগীদের তেমন ভীড় না থাকলেও হাসপাতাল ক্যাম্পাসে এখন রাজত্ব করছে শেয়ালের দল কারণ ৫ একর জায়গার এই হাসপাতাল পরিণত হয়েছে গহীন অরণ্যে যা অভয়ারণ্যে পরিণত হয়েছে মাদকসেবীদের কাছেও।
সরেজমিন পরিদর্শনে গিয়ে হাসপাতালটিতে চোখে পরে নানা অব্যবস্থাপনার চিত্র। গা ছমছমে পরিবেশ ও মাঝে মধ্যেই নানা পশু পাখির ডাক যে কাউকেই ভীত করে তুলতে পারে। দেশব্যাপী যখন ছড়িয়ে পরছে নানা মশাবাহিত রোগ তখন এই হাসপাতাল ক্যাম্পাস শেষ কবে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন করা হয়েছে তা মনে হয় বলতে পারবে না কেউ। শুরুতেই কানে আসে হাসপাতালটির রান্নাঘর থেকে আয় আয় শব্ধ জানার আগ্রহ থেকে এগিয়ে গেলে দেখা যায় সেখানে শিয়ালের দলকে খাওয়ানো হচ্ছে পরম মমতায়। জানা যায়, বক্ষব্যাধি হাসপাতালের রান্নাঘরের প্রতিদিনের দৃশ্য সেটি যেখান থেকে এভাবেই আয় আয় বলে ডেকে শিয়ালকে খাওয়ানো হয় নানা পদের খাবার কারণ তারাই এখন এই হাসপাতাল ক্যাম্পাসের রাজত্ব নিয়েছে। ৫ একর জায়গা জুড়ে ঘন জঙ্গল ও অনিরাপদ ক্যাম্পাসে শিয়ালরাই যেন হয়ে আছে বিনা বেতনের এক একজন নিরাপত্তারক্ষী বলে জানান এই হাসপাতালের খাদ্য সরবরাহকারী আবু জাফর ভূইয়া।
১৯৬০ সালে সারাদেশে নির্মিত তিনটি বক্ষব্যাধী হাসপাতালের একটি বগুড়ায়। যক্ষা থেকে রক্ষার এই হাসপাতাল এখন ঝাউ জঙ্গলে ঘেরা একটি নির্জন স্থানে পরিণত হয়েছে যেখানে বসতি শুধুই নাম না জানা হাজারো পশু পাখির। গা ছমছমে পরিবেশে রাতের ক্যাম্পাস আরও অনিরাপদ। আর মাসের পর মাস রোগীরা এখানে চিকিৎসা নেয় এমন অসংখ্য প্রতিবন্ধকতাকে সঙ্গী করেই।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এখানে ভর্তি থাকা রোগীরা জানান, হাসপাতালের চিকিৎসা মান অনেক ভাল হলেও সেখানে রয়েছে জনবল সংকট। আর অপরিচ্ছন্ন নোংরা পরিবেশে একপ্রকার অনিরাপদভাবেই তাদের থাকতে হচ্ছে মাসের পর মাস। হাসপাতালে ভর্তি থেকে সামান্য কফ কিংবা এক্সরে পরীক্ষার জন্যেও তাদের যেতে হয় ৪ কিলোমিটার দূরে শহরের ঠনঠনিয়া এলাকায় অবস্থিত বক্ষব্যাধি ক্লিনিকে অথচ হাসপাতালে পরে আছে কয়েক একর পতিত জমি তবে নজর নেই কর্তৃপক্ষের। তাইতো বুকভরা অভিমানে শুধু ভোগান্তির হা-নিশ^াসের দেখা মিললো হাসপাতালে ভর্তি থাকা রোগীদের মাঝে।
এদিকে চিকিৎসার জন্য প্রেষণে আনা একমাত্র চিকিৎসক আর ৮জনের জায়গায় আছেন ৫জন সেবিকা। রান্নার জন্য ভাড়ায় আনা বাবূর্চি আর একমাত্র ক্লিনারও এখন অবসরের অপেক্ষায়। শিয়ালের পাশাপাশি বহিরাগতদের ভয়ে নিরাপত্তা শঙ্কা নিয়েই সেবা দিতে হচ্ছে বলে জানালেন হাসপাতালের মেডিকেল অফিসার ডা. আশরেফা আক্তার। তিনি বলেন, সন্ধ্যা হলেও বহিরাগত অনেকে এই ক্যাম্পাসে মাদক গ্রহণের আস্তানা হিসেবে ব্যবহার করছে। শুধু তাই নয় হাসপাতালটিতে থাকা জনবল সংকট তাদের চিকিৎসাসেবাকেও ব্যহত করছে যা দ্রুত সমাধান হওয়া উচিত।
ক্যাম্পাসটি পর্যবেক্ষণ করে দেখা যায়, বিগত ৭/৮ বছরে মনে হয় একবারের জন্যেও নেয়া হয়নি পরিচ্ছন্ন করার উদ্যোগ। জঙ্গলের লতাপাতা এখন বয়ে উঠতে শুরু করেছে পাশে থাকা এপিবিএন স্কুল ও কলেজের দেয়াল বেয়ে। সারাদেশে যখন ডেঙ্গু ও মশাবাহিত রোগের মাত্রা বাড়ছে তখন এই হাসপাতালের অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ এখন হুমকিস্বরুপ হয়ে উঠছে এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের জন্যেও এমনটি জানালেন আমর্ড পুলিশ ব্যাটালিয়ন স্কুল অ্যান্ড কলেজ এর অধ্যক্ষ এটিএম মোস্তফা কামাল। তিনি দ্রুত ক্যাম্পাসটি পরিষ্কার করার লক্ষ্যে সংষ্টিদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন।
অযত্ন অবহেলায় পরে থাকা বগুড়ার জনগুরুত্বপূর্ণ এই হাসপাতালের পরিচ্ছন্নতার লক্ষ্যে ইতিমধ্যেই স্থানীয় সরকার বিভাগের সহযোগিতা চাওয়া হয়েছে বলে জানান জেলা সিভিল সার্জন ডাঃ মোহাম্মাদ শফিউল আজম। তিনি জানান, হাসপাতালটির জনবল ও যন্ত্রাংশের সঙ্কট সমাধানে ইতিমধ্যেই মন্ত্রণালয়ে অবগতকরণসহ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে আশা করা যাচ্ছে দ্রুততম সময়ে ইতিবাচক সংবাদ আসবে। এছাড়াও হাসপাতাল ক্যাম্পাসটির পতিত জমি অন্য কি উপায়ে কাজে লাগানো যায় সেই মর্মেও সংশ্লিষ্টদের নজরে আনার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন এই কর্মকর্তা।
উল্লেখ্য, ২০ শয্য বিশিষ্ট বগুড়া বক্ষব্যাধী হাসপাতালে অসুখের মাত্রাভেদে ৩ মাস থেকে ৬ মাস পর্যন্ত ভর্তি থাকতে হয় যক্ষারোগীদের যেখানে গড়ে ভর্তি থাকেন ৮ থেকে ১০ জন। ৩ বেলা খাবার ও ওষুধের ব্যবস্থাসহ হাসপাতালটিতে রয়েছে বিনামূল্যে চিকিৎসা সুবিধা। তাইতো সকল প্রতিবন্ধকতাকে দূর করে পরিচ্ছন্ন ক্যাম্পাসে আধুনিক একটি হাসপাতাল দেখার প্রত্যাশা এখন বগুড়াবাসীর।