নাটোরের ঐতিহ্যবাহী কাঁচা গোল্লা পেলো জি আই পন্যের স্বীকৃতি

// নাটোর প্রতিনিধি
দেশের ১৭ তম জি আই পন্য হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে নাটোরের ঐতিহ্যবাহী মিষ্টান্ন কাঁচাগোল্লা।বৃহস্পতিবার পেটেন্ট, শিল্পনকশা ট্রেড মার্কস অধিদপ্তর- শিল্প মন্ত্রণালয়ের মহাপরিচালক খন্দকার মোস্তাফিজুর রহমানের সাক্ষরিত ভৌগলিক নির্দেশক নিবন্ধন সনদে নাটোরের কাঁচা গোল্লা’র নাম অন্তর্ভুক্তি করনের সনদ হাতে পাওয়া গেছে। নাটোরের জেলা প্রশাসক আবু নাছের ভূঁঞা বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।বিষয়টি নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে উচ্ছাস প্রকাশ করতে দেখা গেছে নাটোরের বিভিন্ন শ্রেণী পেশার মানুষকে।
ঐতিহ্যবাহী এই কাঁচা গোল্লা দীর্ঘদিন ধরে বিকৃত আকারে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে বিক্রি হয়ে আসছিলো। গত ফেব্রুয়ারী মাসে দেশের প্রসিদ্ধ একটি খাদ্য পণ্য প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠান নাটোরে তাদের ব্রান্ডশপে গোলাকার কাঁচা গোল্লা বিক্রি শুরুর পর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তীব্র সমালোচনা শুরু হয়। এরপর থেকে নাটোরের সুধী মহল এ বিষয়ে পদক্ষেপ নিতে জেলা প্রশাসনকে অনুরোধ করে।তারপরেই ঐতিহ্যবাহী নাটোরের কাঁচা গোল্লাকে ভৌগোলিক নির্দেশক (জি আই) নিবন্ধনের উদ্যোগ গ্রহণ করেন নাটোরের ততকালিন জেলা প্রশাসক শামীম আহমেদ। এ বছরের ৩০ শে মার্চে শিল্প মন্ত্রণালয়ের পেটেন্ট, ডিজাইন ও ট্রেড মার্কস অধিদপ্তর (ডিপিডিটি) বরাবর নাটোরের কাঁচাগোল্লাকে জি আই পন্য হিসেবে স্বীকৃতি চেয়ে আবেদন পাঠায় জেলা প্রশাসন। জেলা প্রশাসক আবু নাছের ভূঁঞা বলেন, এটা আমাদের জন্য গৌরবের। কাঁচা গোল্লার সাথে নাটোরের মানুষের আবেগ ও ঐতিহ্য জড়িত। তাইএটাকে সংরক্ষণ ও প্রসারের জন্য সব সময় কাজ করে যাবো।
কথিত আছে, কাঁচাগোল্লা সৃষ্টির পেছনে আছে মজাদার ইতিহাস। অর্ধ বঙ্গেশ্বরী খ্যাত নাটোরের রানি ভবানীর প্রিয় খাদ্যের তালিকায় ছিল মিষ্টি। তার রাজ প্রাসাদে নিয়মিত মিষ্টি সরবরাহ করতেন শহরের লালবাজারের মিষ্টি বিক্রেতা মধুসূদন পাল। একদিন মধুসুদন পালের ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানের সব কর্মচারী অসুস্থ হয়ে গেলেন।মিষ্টি তৈরির জন্যে দুই মণ ছানা সংগ্রহ করা ছিল। ছানা গুলো নষ্ট হয়ে যাবে ভেবে মধুসূদন ছানার সঙ্গে চিনি মিশিয়ে উনুনে তাপ দেন। কারিগর ছাড়াই এলো মেলো এই আয়োজনে তৈরি হয় নতুন এক মিষ্টি। স্বাদে অতুলনীয় হওয়ায় নতুন এই মিষ্টিই পাঠিয়ে দেন রানি ভবানীর রাজবাড়িতে।
রানি ভবানী এই মিষ্টি খেয়ে প্রশংসা করেন এবং এর নাম জানতে চান। মধুসূদন পাল তখন কাঁচা ছানা থেকে তৈরি বলে এর নাম দেন কাঁচাগোল্লা। এই হচ্ছে কাঁচাগোল্লা সৃষ্টির ইতিহাস। এই গল্প বেঁচে আছে শত-শত বছর ধরে মানুষের মুখে- মুখে।
তবে নাম গোল্লা হলে ও এটি দেখতে গোলনয়, মুখ্য উপকরণ ছানা আর চিনির সংমিশ্রণে এক প্রকার সন্দেশ। কাঁচাগোল্লার সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে নাটোর বাসীর আবেগ ও ভালোবাসা। তাই ২৫০ বছর আগে কাঁচাগোল্লা আবিষ্কৃত হয়ে আজ ও সুনাম বজায় রেখেছে। নাটোরের বিয়ে, বিভিন্ন ধর্মীয় অনুষ্ঠান ও অতিথি আপ্যায়নে সরবরাহ করা হয় কাঁচাগোল্লা। শুধু দেশে নয়, সারা বিশ্বেই নাটোরের কাঁচাগোল্লা প্রসিদ্ধ।