নলডাঙ্গায় এমপির উপস্থিতিতে পৌর মেয়রের ওপর হামলা

নাটোর প্রতিনিধি
নাটোরের নলডাঙ্গায় সংসদ সদস্য শফিকুল ইসলাম শিমুলের উপস্থিতিতে পৌরসভার মেয়র মনিরুজ্জামান মনিরের ওপর হামলার ঘটনা ঘটেছে। হামলার এক পর্যায়ে মেয়র তার কার্যালয়ের দরজা আটকে আত্মরক্ষা করেন। রোববার সন্ধ্যা ৭টার দিকে নলডাঙ্গা পৌরসভার সামনে এই ঘটনা ঘটে।হামলার ঘটনার প্রতিবাদে মেয়রের সমর্থকের সন্ধ্যার পর নলডাঙ্গা শহরে বিক্ষোভ মিছিলকরেন। মনিরুজ্জামান মনির নলডাঙ্গা পৌর আওয়ামীলীগের সাধারণসম্পাদক এবং নাটোর জেলাআওয়ামী লীগের নির্বাহীসদস্য।
পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, নাটোর-২ (সদর ও নলডাঙ্গা) আসনের সংসদ সদস্য শফিকুল ইসলাম রোববার বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে তার অনুসারীদের সঙ্গে গাড়ি বহর নিয়ে নলডাঙ্গা উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে বঙ্গমাতা-বঙ্গবন্ধু ফুটবল টুর্নামেন্টের পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে যাচ্ছিলেন। এ সময় নলডাঙ্গা পৌরসভার মেয়র মনিরুজ্জামানের ভাতিজা শহীদ নজমুল হক সরকারি কলেজ ছাত্রলীগের সভাপতি শাহরিয়ার ইশতিয়াক শিশির তার বন্ধু সেন্টুকে নিয়ে মোটর সাইকেলে করে একই পথে যাচ্ছিলেন।অনুষ্ঠানস্থলের কাছাকাছি উভয় পক্ষের অনুসারীদের মধ্যে ধাক্কাধাক্কি হয়। একপর্যায়ে শিশির ও তার বন্ধু সেন্টুকে হাতুড়ি দিয়ে পিটিয়ে জখম করেন নলডাঙ্গা উপজেলা আওয়ামীলীগের বহিষ্কৃত সাধারণ সম্পাদক তৌহিদুর রহমান লিটন। মেয়র মনির ও তার ভাতিজা শাহরিয়ার স্থানীয়এমপি শিমুলের রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ জেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক শরিফুল ইসলাম রমজানের অনুসারী।পৌরসভা মেয়র মনিরুজ্জামান মনির জানান, সন্ধ্যার পর অনুষ্ঠান থেকে ফেরার পথে উপজেলা আওয়ামীলীগের কার্যালয়ের সামনে সংসদ সদস্য শিমুলের সঙ্গে তিনি ও তার অনুসারীরা বিষয়টি নিয়ে কথা বলার জন্য দেখাকরার চেষ্টাকরেন। এ সময় তৌহিদুররহমানলিটনসহশিমুলেরঅনুসারীরাএমপি ও পুলিশেরউপস্থিতিতেইলাঠিসোটা, হাসুয়াএবংঅন্যান্য দেশীয় অস্ত্র নিয়ে তার ওপর হামলা করে। মেয়র মনির বলেন, ‘একজন হকিস্টিক দিয়ে আমার মাথায় আঘাতের চেষ্টাকরে। অন্যরা সেটা ধরে ফেলায় অল্পের জন্য বেঁচে যাই আমি। কিন্তু আমাকে বাঁচাতে গিয়ে আহত হয়েছেন আমার সঙ্গে থাকা আনোয়ার হোসেন ও খোরশেদ আলী। এ সময় আত্মরক্ষার্থে দৌড়ে মেয়র মনিরকে তার কার্যালয়ে গিয়ে দরজা আটকে াশ্রয় নিতে দেখা গেছে। হামলার আধঘণ্টা পর পরিস্থিতি শান্ত হলে আহতদের তাদের স্বজনরা রাজশাহীর বিভিন্ন বেসরকারি হাসপাতালে পাঠান। মেয়র মনিরের অভিযোগ, হামলার সময় জেলা সৈনিক লীগেরএক শীর্ষ নেতা পিস্তল বের করে পুলিশের সামনেই তাকে হুমকি দেন। তিনি বলেন, ‘আমার ভাতিজার ওপর হামলার ব্যাপারে আমি কেবল এমপির সঙ্গে কথা বলতে চেয়েছিলাম। কিন্তু এমপি ও ওসির সামনে আমার ওপর উলটো হামলা হলো। ওসি পক্ষপাতিত্ব করে চুপচাপ থাকলেন। হামলার ঘটনার প্রতিবাদে মেয়রের সমর্থকেরা সন্ধ্যার পর নলডাঙ্গা শহরে বিক্ষোভ মিছিল করেন। এ সময় শহরে উত্তেজনা দেখা দেয়। পরিস্থিতি সামাল দিতে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়।
এ বিষয়ে নাটোর-২ আসনের সংসদ সদস্য শফিকুল ইসলাম শিমুল সাংবাদিকদের বলেন, ‘মেয়র মনিরের ভাতিজা বেপরোয়া মোটর সাইকেল চালাচ্ছিল এবং গাড়িবহরকে কোন সাইড দিচ্ছিলনা। পরে তৌহিদুর রহমান লিটনের সঙ্গে ধস্তাধস্তি হয়। এরপর বঙ্গমাতা-বঙ্গবন্ধু ফুটবল টুর্নামেন্টের পুরষ্কার বিতরণ অনুষ্ঠানে চলে যাই।ফেরার পথে ‘মনির আমার সঙ্গে কথা বলতে এগিয়ে আসছিল। তখন আমি এবংএহিয়া চৌধুরী তাকে ধমক দিয়ে সরিয়ে দেই। সে কারণে সেখানে অপ্রীতিকর কোনো ঘটনা ঘটেনি।’আওয়ামীলীগ নেতা তৌহিদুর রহমান লিটন সাংবাদিকদের বলেন, ‘শাহরিয়ার ও তার ক্যাডাররা সংসদ সদস্যের গাড়ি বহরের সামনে বেপরোয়াভাবে মোটর সাইকেল চালাচ্ছিলেন। তাদের বাধা দিলে ধাক্কাধাক্কি হয়। কিন্তু আমার জানা ছিল না যে শাহরিয়ার মেয়র মনিরের ভাতিজা।মেয়রের ভাতিজা জানার পরে আমি মনিরের কাছে ক্ষমাও চেয়েছি। কিন্তু এরপরও মনির ও তার লোকজন পৌরসভার সামনে লাঠিসোটা নিয়ে অবস্থান করছিল এমপির বহরে হামলা করার জন্য। খবর শুনে নাটোর থেকে ডিবি পুলিশের টিম সেখানে যায়। পরে এমপিএবং আমরা ফেরার সময় মনির পথরোধ করলে উভয় পক্ষের মধ্যে উত্তেজনা হয়। আমাদের হাতে ও লাঠিসোটা ছিল। কিন্তু অন্য কোনো অস্ত্র ছিলনা।’নলডাঙ্গা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আবুল কালাম বলেন, ঘটনার সময় ডিবি পুলিশএবং থানা পুলিশ তাৎক্ষণিকভাবে পরিস্থিতি শান্ত করেছে। তবে কারও কাছে তিনি কোন অস্ত্র দেখেননি।