// সাঁথিয়া(পাবনা) প্রতিনিধিঃ সাঁথিয়ায় চাঞ্চল্যকর মতিন হত্যার প্রকৃত খুনিদের বিচার চেয়ে সংবাদ সম্মেলন করেছেন নিহত মতিনের স্ত্রী আজিরন খাতুন। শনিবার (২৯জুলাই)দুপুরে সাঁথিয়া প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলনে নিহত মতিনের স্ত্রীর পক্ষে তার বড় মেয়ে সবিতা খাতুন লিখিত বক্তব্যে বলেন,উপজেলার নাগডেমরা ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান হারুন অর রশিদ ও তার ছোট ভাই জুয়েল রানা পরিকল্পিত ভাবে আমার স্বামীকে হত্যা করেছে এবং ঘটনা ধামাচাপা দিতে নানা নাটক সাজিয়েছেন। হারুন চেয়ারম্যান ও তার লোকজন আমার পরিবারকে বিভিন্ন সময় ভয়ভীতি ও হুমকি ধামকি দিচ্ছেন। আমি পরিবার নিয়ে নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি।আমার স্বামীই ছিল সংসারের একমাত্র উপার্জক্ষম ব্যক্তি তার মৃত্যুর পর চারটি মেয়ে নিয়ে আমি মানবেতর জীবন যাপন করছি। এ সময় তিনি আবেগ আপ্লুত হয়ে কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন। তার মেয়েরা বলেন, আমার বাবার প্রকৃত খুনিদের বিচার চাই।
সংবাদ সম্মেলনে নিহত মতিনের স্ত্রীর পক্ষে তার বড় মেয়ে সবিতা খাতুন লিখিত বক্তব্য পাঠ করে জানান,গত বছর ৪জুন(২০২২) বিকেলে উপজেলার নাগডেমরা ইউপি সাবেক চেয়ারম্যান হারুন অর রশিদের ছোট ভাই জুয়েল রানা আমার স্বামীকে জুয়েলের মেয়ের বাড়ি বেড়ানোর কথা বলে ডেকে নিয়ে যায়।ওই দিন রাত সারে ৮টার দিকে ফেরার পথে জুয়েল কৌশলে পাকা সড়ক দিয়ে না এসে ফেঁচুয়ান গ্রামের নদী পার হয়ে অন্ধকারে ফাঁকা জায়গা দিয়ে পুটিপাড়া দহ এর সড়ক দিয়ে নিয়ে গিয়ে সে জুয়েল ও তার ভারাটিয়া সন্ত্রাসীদের দিয়ে আমার স্বামীকে খুন করান।নিজের দোষ ঢাকতে ও অন্য লোককে ফাঁসানোর জন্য তার শরীরে অঘাতের আচড় লাগান। হারুন চেয়ারম্যান রাজনৈতিক সুবিধা নেওয়ার জন্য তার প্রতিপক্ষ বর্তমান চেয়ারম্যান হাফিজুর রহমানকে প্রধান আসামি করে। হারুন আমাকে বা আমার পরিবারের কোন লোককে বাদী না করে নিজে বাদী হয়ে ১৯জনকে আসামি করে মামলা করেন।পরবর্তীতে মামলাটি থানা পুলিশ হতে পাবনা সিআইডি পুলিশ তদন্ত শুরু করেন।সিআইডি পুলিশ পরিদর্শক (নিরস্ত্র)পায়েল হোসেন তদন্ত করে মামলার বাদী হারুন চেয়ারম্যানের ছোট ভাই জুয়েল রানা সহ ৩/৪জনকে গ্রেপ্তার করে।গ্রেপ্তারকৃতদের ফৌজদারি কার্যবিধ ১৬৪ ধারা মোতাবেক স্বীকারোক্তিমূলক জবান বন্দী গ্রহন করে এবং গ্রেফতা কৃত জুয়েলকে নিয়ে ঘটনাস্থল থেকে হত্যার কাজে ব্যবহৃত ছোড়া,হাসুয়া,রামদা,ডেগার উদ্ধার করে সিআইডি পুলিশ। সিআইডি পুলিশ পরিদর্শক পায়েল হোসেন এবং পরবর্তীতে মামলাটির তদন্তকারী কর্মকর্তা এসপি মাহাবুব হোসেনমামলার তদন্ত শেষ করতে পারেননি।দীর্ঘ এক বছর পেরিয়ে গেলেও মতিন হত্যার প্রকৃত খুনিদের অর্থের বিনিময়ে আড়াল করার অভিযোগ উঠেছে তদন্তকারী কর্মকর্তার বিরুদ্ধে।মামলার বর্তমান তদন্তকারী কর্মকর্তা মামলাটিকে ভিন্নখাতে প্রবাহের চেষ্টা করছেন। আমার স্বামীর প্রকৃত খুনিরা এখনও ধরা ছোয়ার বাইরে রয়ে গেছে।
বর্তমানে মামলাটি তদন্ত করছেন পাবনা সিআইডি পুলিশ পরিদর্শক তোফাজ্জল হোসেন।তিনি গত ৮জুলাই মামলাটি তদন্ত করতে আসেন। মামলার বাদী ও আমার স্বামীর প্রকৃত খুনি হারুন চেয়ারম্যান ও তার ছোট ভাই জুয়েলকে সঙ্গে নিয়ে আমার বাড়িতে এসে উল্টা পাল্টা প্রশ্ন করেন।হারুন চেয়ারম্যান মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তার সামনেই আমাকে মিথ্যা স্বাক্ষী দিতে বলেন এবং তারা আমাকে ভয়ভীতি দেখায়, হুমকি ধামকি দেয় এবং মারতে আসে। তন্তকারী কর্মকর্তা তখন নিরব থাকেন। হারুন ও জুয়েল বলে বেড়াচ্ছে আমরা টাকা দিয়ে মামলা উল্টা ফেলেছি এবং বর্তমান তদন্তকারী কর্মকর্তাকে কিনে নিয়েছি।মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা তোফাজ্জল হোসেন মোটা অঙ্কের অর্থের বিনিময়ে মামলাটি ভিন্নখাতে প্রবাহিত করার চেষ্টা করছে। তাহলে কি আমি স্বামী হত্যার বিচার পাবোনা? আমি আশঙ্কা করছি বর্তমান তদন্তকারী কর্মকর্তা দ্বারা মামলাটি তদন্ত হলে আমার স্বামী হত্যার সঠিক বিচার পাবোনা। প্রকৃত অপরাধীরা ধরা ছোয়ার বাইরেই থেকে যাবে।আমি সাংবাদিক ভাইদের মাধ্যমে পুলিশ প্রশাসনের উর্ধবতন কর্মকর্তাদের অনুরোধ করবো আমার স্বামী হত্যার মূল ষড়যন্ত্রকারী হারুন চেয়ারম্যানকে গ্রেপ্তার ও তার দোশরদের বিরুদ্ধে দ্রুত মামলার চার্জশিীট দিয়ে প্রকৃত অপরাধীদের শাস্তি দেয়া হোক।
এ বিষয়ে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা পাবনা সিআইডি পুলিশ পরিদর্শক তোফাজ্জল হোসেন তার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ অস্বীকার করেন।তিনি বলেন,মামলার প্রকৃত রহস্য উদঘাটনের স্বার্থে যা করনীয় তা করবেন।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন,নিহত মতিনের স্ত্রী আজিরন খাতুন,মেয়ে সবিতা খাতুন, নাসরিন আক্তার,আশা মনি ও মেয়ে জামাই আশরাফুল ইসলাম
উল্লেখ্য,গত বছরের ৪ জুন রাত সাড়ে ৯টার দিকে সাঁথিয়া পৌর সদরের ফেঁচুয়ান ছোটপুটিপাড়া গ্রামের আওলঘাটা ঘোনারচক ইছামতি নদীর দক্ষিন তীরে মহির উদ্দিন ওরফে মরহের ছেলে আব্দুল মতিনকে (৫০) কুপিয়ে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা। এ ঘটনায় ৫ জুন (২০২২ইং) হারুন অর রশিদ বাদী হয়ে নাগডেমড়া ইউনিয়নের বর্তমান চেয়ারম্যান হাফিজুর রহমান হাফিজকে প্রধান আসামী করে ১৯ জনের বিরুদ্ধে সাঁথিয়া থানায় মামলা করেন। যার নং-০৫। পুলিশ ওই দিন দুুপরে হাফিজসহ ২জন এজাহারভূক্ত আসামিকে গ্রেফতার করে জেল হাজতে প্রেরণ করেন। পরবর্তীতে দীর্ঘ প্রায় ২ মাস ২৫দিন হাজত বাস করে গেল ৩০ আগষ্ট/২২ উচ্চ আদালত থেকে স্থায়ী জামিন পান চেয়ারম্যান হাফিজ।