আগৈলঝাড়ায় প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ব্যাপক দুর্নীতির অভিযোগ

// অপূর্ব লাল সরকার, আগৈলঝাড়া (বরিশাল) থেকে :
বরিশালের আগৈলঝাড়া উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা শেখর রঞ্জন ভক্তের বিরুদ্ধে ব্যাপক অনিয়ম দুর্নীতির অভিযোগ পাওয়া গেছে। উপজেলার প্রতিটি স্কুলের শিক্ষকরা শিক্ষা কর্মকর্তার কাছে জিম্মি হয়ে পরেছে। নাম না প্রকাশের শর্তে একাধিক শিক্ষকরা জানান বিভিন্ন কৌশল অবলম্বন করে বিভিন্নভাবে আমাদের জিম্মি করে ভয়ভীতি দেখিয়ে টাকা আদায় করা হয়। তিনি উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা হওয়ায় আমরা কিছুই বলতে পারি না। প্রতি বছরে কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন শেখর রঞ্জন ভক্ত।
নাম না প্রকাশের শর্তে একাধিক শিক্ষকরা জানান, উপজেলার প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা শেখর রঞ্জন ভক্ত উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা পর্যায়ে খেলার জন্য সরকারী বরাদ্দ থাকার পরেও উপজেলার ৯৭টি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে দু’শ টাকা করে ১৯ হাজার ৪শ’ টাকা আদায় করেছেন।
চলতি বছরের নতুন শিক্ষকরা তাদের সফটওয়ার বিল উঠানোর জন্য প্রত্যেক শিক্ষকদের কাছ থেকে ১ হাজার করে টাকা আদায় করা হয়েছে। বিদ্যালয়ে রাতে নৈশপ্রহরী কাম দপ্তরী থাকার কথা থাকলেও তারা না থাকায় তাকে প্রতি মাসে ৫০০ টাকা করে দিতে হচ্ছে। শিক্ষকরা সময় মত বিদ্যালয়ে না আসলে ভিডিও কলের মাধ্যমে তাদের কারণ দর্শানোর নোটিশ দিয়ে টাকা আদায় করা হয়। স্কুল ড্রেস, ক্ষুদে স্কুল ড্রেস, বঙ্গমাতা খেলার জার্সি তৈরি করার জন্য ঠিকাদারের কাছ থেকে আগেই টাকা আদায় করা হয়। শেখ রাসেল কর্ণারের বই বাবদ প্রতিটি বিদ্যালয় থেকে ১হাজার টাকা নেয়া হয়। এছাড়াও ১৩তম গ্রেডের বকেয়া বাবদ ২ হাজার টাকা। স্লিপ বাবদ প্রতিটি বিদ্যালয় থেকে ১হাজার টাকা আদায় করা হয়। রুটিন মেরামত বাবদ ১ হাজার টাকা করে নেয়া হয়। মাতৃত্বকালীন ছুটি বাবদ ২হাজার টাকা আদায় করা হয়। ডিপিইডি ট্রেনিং বাবদ ২ হাজার টাকা এবং ট্রেনিং শেষে যোগদানের জন্য পাঁচশ’ টাকা আদায় করা হচ্ছে। যে সকল বিদ্যালয়ে ক্ষুদ্র মেরামত করা হয় সেই সকল বিদ্যালয় থেকে ১০ হাজার টাকা নেয়া হয়েছে। যে কোন অনুষ্ঠানের জন্য ব্যানার বানানোর জন্য শিক্ষা কর্মকর্তা স্থান নির্ধারণ করে দিয়েছে। সেখান থেকেও সে প্রতি ব্যানার বাবদ দু’শ টাকা আদায় করছে। জিপিএ ফান্ডে টাকার জন্য উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তার স্বাক্ষর আনতে গেলে ১ হাজার ৫ শ’ টাকা নেয়া হচ্ছে। উপজেলা ৯৭টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে অগ্নিনির্বাপক যন্ত্র কেনার জন্য প্রতিটি বিদ্যালয় থেকে ২ হাজার ৫শ’ টাকা গ্রহণ করে। উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা শেখর রঞ্জন ভক্ত নি¤œমানের অগ্নিনির্বাপক যন্ত্র ১হাজার ৭শ’ টাকা ক্রয় করে বাকি ৮শ’ টাকা আত্মসাৎ করেন।
তার এই উৎকোচ গ্রহণের কাজে সহযোগিতা করে আসছে কিছু অসাধু শিক্ষক। শিক্ষকরা তার অনিয়মের ব্যাপারে মুখ খুলতে রাজি হলেও তার সামনে বসে কেউ কথা বলতে রাজি হয়নি। কারণ সবাই তার অধীনে চাকরি করেন।
এব্যাপারে অভিযুক্ত উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা শেখর রঞ্জন ভক্ত সাংবাদিকদের বলেন, আমার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ মিথ্যা ভিত্তিহীন। আমি কোন শিক্ষকদের কাছ থেকে টাকা আদায় করিনি।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার দায়িত্বপ্রাপ্ত সহকারী কমিশনার (ভুমি) উম্মে ইমামা বানিন বলেন, লিখিত অভিযোগ পেলে তদন্ত করে তার বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।
এঘটনায় সহকারী জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মোহাম্মাদ মোস্তফা কামাল সাংবাদিকদের বলেন, উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা শেখর রঞ্জন ভক্তের অনিয়ম ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে কেউ যদি লিখিত অভিযোগ দায়ের করে আমরা তদন্ত করে সে বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিব।