// সঞ্জু রায়, বগুড়াঃ বগুড়ায় কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে বিএনপির পদযাত্রাকে ঘিরে পুলিশের সঙ্গে নেতাকর্মীদের সংঘর্ষের জেরে টিয়ারশেল ও রাবার বুলেট নিক্ষেপের ঘটনা ঘটেছে। মঙ্গলবার বেলা সাড়ে ১২টায় শহরের ইয়াকুবিয়া মোড় ও জেলা বিএনপির কার্যালয়ের সড়কে সদর পুলিশ ফাঁড়ির সামনে ঘটা পৃথক সংঘর্ষে ১০ পুলিশ সদস্যসহ প্রায় অর্ধশতাধিক আহত হয়েছেন।
ঘটনাস্থলে দেখা যায়, বিএনপির অনুমোদিত রোডম্যাপ অনুসরণ না করে শহরের মূল কেন্দ্র সাতমাথায় যাওয়ার চেষ্টা করলে ইয়াকুবিয়া মোড়ে পদযাত্রায় বাধা প্রদান করে পুলিশ। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে পুলিশের দিকে ইটপাটকেল ও লাঠিসোটা ছুড়তে শুরু করে দলটির নেতাকর্মীরা। এসময় ৮ থেকে ১০টি ককটেল বিস্ফোরণ করা হয় বলে জানিয়েছে পুলিশ। এছাড়াও ভাংচুর করা হয়েছে সদর পুলিশ ফাঁড়ির প্রধান ফটক। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে টিয়ারশেল ও রাবার বুলেট ছুড়েছে পুলিশ। এসময় সংঘর্ষে ১০ পুলিশ সদস্য আহত হয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ সুপার সুদীপ কুমার চক্রবর্তী তবে আহতের সংখ্যা আরো বাড়তে পারে বলে তাৎক্ষণিক জানান তিনি।
এসপি সুদীপ বলেন, মঙ্গলবার বগুড়াতে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি দুটি দলেরই রাজনৈতিক কর্মসূচি ছিলো যা সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করার লক্ষ্যে সোমবারেই পুলিশের পক্ষে দুই দলের দায়িত্বশীল নেতৃবৃন্দদের সাথে সমন্বয় করে পুলিশ যেন কোনভাবেই বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি না হয়। কিন্তু বনানী মোড় থেকে আসা বিএনপি’র পদযাত্রা যাদের ইয়াকুবিয়া মোড় হয়ে তাদের দলীয় কার্যালয়ে যাওয়ার কথা ছিলো তারা হঠাৎ করে পুলিশের ব্যারিকেড ভেঙ্গে কর্তব্যরত পুলিশ সদস্যদের উপর চড়াও হয় যেখানে নারুলী পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ ইন্সপেক্টর তরিকুল ইসলাম গুরুতর আহত হন যা অত্যন্ত দুঃখজনক। পরবর্তীতে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশ টিয়ারশেল ও রাবার বুলেট ছুড়তে বাধ্য হয় কারণ তাদের বিশৃঙ্খলতায় জনমনে আতঙ্কের জন্ম হয়েছিলো এবং সাধারণ মানুষ নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছিলো। শুধু তাই নয় বিএনপির নেতাকর্মীরা সদর পুলিশ ফাঁড়ির প্রধান ফটক ভাঙচুরসহ দেশীয় অস্ত্র ও বিস্ফোরক দ্রব্য দিয়ে তাদের নারী পুলিশ সদস্যদেরও আহত করেছে যা অবশ্যই আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।
এদিকে, শান্তিপূর্ণ পদযাত্রায় পুলিশ বিনা উসকানিতে গুলি চালিয়েছে বলে অভিযোগ করেন জেলা বিএনপির সভাপতি রেজাউল করিম বাদশা। মঙ্গলবার সন্ধ্যায় জেলা বিএনপি কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি অভিযোগ করেন, তাদের প্রায় অর্ধশতাধিক নেতাকর্মী পুলিশের রাবার বুলেটে গুলিবিদ্ধ হয়েছেন এছাড়াও আহত হয়েছেন প্রায় ২ শতাধিক নেতাকর্মী। এই ঘটনার দায় সম্পূর্ণ পুলিশকেই নিতে হবে। তিনি বলেন, সকল দল শহরের প্রাণকেন্দ্র সাতমাথাতে তাদের রাজনৈতিক কর্মসূচি পালন করতে পারলে বিএনপি কেন পারবে না এটি তাদের সাথে অগণতান্ত্রিক আচরণ। মঙ্গলবারের ঘটনায় বিএনপি নেতৃবৃন্দরা তীব্র নিন্দা জানিয়ে পরবর্তীতে আরো কঠোর কর্মসূচি দেয়া হবে বলে জানান তারা।
এদিকে সংঘর্ঘের প্রথম ধাপে ইয়াকুবিয়া মোড়ে বিএনপি নেতাদের ছোড়া ককটেলের বিকট শব্দ এবং পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশের ছোড়া টিয়ারশেলের ধোঁয়ায় অসুস্থ হয়ে পড়েছিলো বগুড়া ইয়াকুবিয়া উচ্চবিদ্যালয়ের প্রায় ২৭ জন মেয়ে শিক্ষার্থী। আহতদের চিকিৎসার জন্য বগুড়া মোহাম্মদ আলী হাসপাতালে প্রেরণ করা হলে সেখানে প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে অধিকাংশই বাড়িতে ফিরেছেন। অসুস্থ এই শিক্ষার্থীদের খোঁজ নিতে গিয়েছিলেন আওয়ামী লীগ ও বিএনপি দুই দলেরই সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকসহ অন্যান্য নেতৃবৃন্দ।
উল্লেখ্য, মঙ্গলবার বগুড়ায় কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে শেখ হাসিনার পদত্যাগসহ নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকার পুনঃপ্রতিষ্ঠার এক দফা দাবিতে বগুড়ায় পৃথক দুইটি পদযাত্রা করে বিএনপি। জেলা বিএনপির উদ্যোগে শহরের মাড়িডালি বিমান মোড় ও বনানী মোড় থেকে পৃথকভাবে পদযাত্রা দুইটি শুরু হয়। সাতমাথা এড়িয়ে দুটি পৃথক পদযাত্রার র্যালি মিলিত হওয়ার কথা ছিলো জেলা বিএনপি কার্যালয়ে। মাটিডালি থেকে শুরু হওয়া পদযাত্রায় নেতৃত্ব দেন জেলা বিএনপি সভাপতি ও বগুড়া পৌরসভার মেয়র রেজাউল করিম বাদশা এবং বনানী মোড় এলাকা থেকে পদযাত্রায় নেতৃত্ব দেন জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আলী আজগর তালুকদার হেনা।