বর্ষায় বাগানের যত্ন

প্রকৃতি সেজেছে বর্ষার সাজে। এমন দিনে চলে রোদ ও মেঘের লুকোচুরি খেলা। এই রোদ, আবার এই আকাশ থেকে নামছে অঝোর ধারায় বৃষ্টি। আকাশে কখনো মেঘমালা দৌড়ের প্রতিযোগিতায় নামছে, কখনো-বা তারাই এই পৃথিবীর বুকে কান্না হয়ে ঝরছে মুক্তোর মতো। মোটামুটি জুলাই মাসের প্রথম থেকে শুরু করে সেপ্টেম্বরের শেষ অবধি বর্ষার সময় ধরেই নেওয়া হয়। এই সময়টা তাই বীজ পোঁতা,গাছের চারা লাগানো, একটি টব থেকে অন্য টবে পোঁতা বা রিপ্ল্যান্টিং, প্রোপ্যাগেট সমস্ত ধরনের কাজ করাই সহজ হয়।

বর্ষার জলেই তেষ্টা মেটে আবার চড়চড়িয়ে বেড়ে ওঠার জন্যেও বর্ষা ঋতু গাছের কাছে অতি প্রিয়। বৃষ্টির পানি গাছের জন্য অনেক উপকারী। কারণ এতে থাকে নাইট্রোজেন, পটাশিয়াম, সোডিয়াম, ম্যাগনেশিয়াম, সালফেট ও নাইট্রেট আয়ন। বৃষ্টির পানি আপনার ট্যাপের পানির চেয়ে অনেক পুষ্টিসমৃদ্ধ। এ কারণে বর্ষাকালে গাছের পাতাগুলো আরো চির সজীব হয়ে ওঠে। নতুন চারাগাছ লাগানোর উত্তম সময়টিও এই বর্ষাকাল।

এ সময় নানান জাতের ফল গাছ দিয়ে আপনার পছন্দের বাগানটি পরিপূর্ণ রূপে সাজিয়ে তুলতে পারেন। বাগানের জন্য উপযোগী গাছগুলোর মধ্যে রয়েছে বারি আম, বাউ আম, বারি পেয়ারা, ইপসা পেয়ারা, থাই পেয়ারা, বাউ কুল, আপেল কুল, বারি লেবু, বাউ কাগজি লেবু, বারি আমড়া, থাই করমচা, দেশি উন্নত ডালিম, বারি কমলা, বারি মাল্টা, লাল ও সাদা ড্রাগন ফল ইত্যাদি।

বর্ষা

বর্ষার এই সময়ে বাগানের জন্য নার্সারিতে পাওয়া যায় নানা রকম বাহারি গাছ। ফুলের বড় গাছ এড়িয়ে যে কোনো ধরনের ছোট ফুলের গাছ লাগানো যায়। প্রায় সব ধরনের সবজিই ছাদের বাগানে বোনা যায়। সব ধরনের শাক, লতানো-সবজি যেমন লাউ, কুমড়া, শিম থেকে শুরু করে মূলা, গাজর, ফুলকপি, ব্রোকলি, ক্যাপসিকাম, মরিচ বেগুন সবই বোনা সম্ভব। পাশাপাশি মসলা জাতীয় গাছের চাষও হতে পারে এই সময়ে। বাগানে রোপণের জন্য উপযোগী মসলা জাতীয় গাছগুলোর মধ্যে রয়েছে— মরিচ, আদা, পুদিনা পাতা, ধনিয়া পাতা, রসুন, পার্সলে, লেমন ঘাস ইত্যাদি। দু-চারটি ওষধি গাছ দিয়েও ছাদ-বাগানের শোভা বাড়াতে পারেন। ছাদে একটি পরিকল্পিত বাগান সৃজন করতে চাইলে বর্ষাকাল হতে পারে নতুন চারা রোপণের উপযুক্ত সময়। বর্ষাতে বাগানের গাছগুলো প্রকৃতির ওপর যেমন নির্ভরশীল, তেমনি তাদের প্রয়োজন যত্নের। কী করলে গাছ সুজলা-শ্যামলা হবে তা এখানে দেওয়া হলো—

ছায়ায় রাখা
বর্ষাকালের অতিবৃষ্টি কিছু কিছু গাছের জন্য অনেক ক্ষতি বয়ে আনে। ক্যাকটাস বা সাকুলেন্ট সদস্যদের গাছ বেশি পানি সহ্য করতে পারে না তাই এদের খোলা আকাশের নিচে না রাখাই ভালো। এই জাতীয় গাছগুলোকে ছায়ার মধ্যে বা ঘরের মধ্যে রাখা উচিত।

পানি নিষ্কাশনের সুব্যবস্থা রাখা
সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো গাছে পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা নিশ্চিত করা। যে কোনো ঘরোয়া গাছের জন্য এমন টব বা পাত্র বাছাই করা দরকার যেটায় পানি নিষ্কাশনের জন্য প্রয়োজনমত ছিদ্র থাকে। আর মাটি না শুকালে একটু খুঁচিয়ে দিতে হবে যাতে সম্পূর্ণ মাটি শুকিয়ে যায়। আর যদি গাছের মাটি শুকানোর ব্যবস্থা না থাকে তাহলে ঝড় বৃষ্টির সময় ঘরে এনে রাখাই উত্তম। এখন বর্ষাকালে যে ঘরে ঘরে ডেঙ্গু জ্বরের প্রকোপ দেখা দেয় তার অন্যতম একটি কারণ টবে পানি জমা। তাই নিয়মিত গাছের টবগুলি দেখা দরকার যেন পানি জমে না থাকে।

গাছে পানি না দেওয়া
বর্ষা মৌসুমে গাছে পানি দেওয়া উচিত নয়। অতি বৃষ্টির ফলে গাছে পানির ঘাটতি পূরণ হয়। তাই গাছের মাটি না শুকানো পর্যন্ত পানি দেওয়া উচিত নয়।

টব মাটি দিয়ে ভরাট করা এবং মাটি তৈরি করা
গ্রীষ্মের সময়ে আমরা যেমন টবের মাটি কয়েক ইঞ্চি নিচ পর্যন্ত ভরাট করি কিন্তু বর্ষাকালে বৃষ্টির হাত থেকে রক্ষা করার জন্য টবে মাটি দিয়ে ভরাট করে দেওয়া উচিত যাতে পানি তাড়াতাড়ি শুকিয়ে যায়। অতিবৃষ্টির সময়ে অবশ্যই এমন ধরনের মাটি নির্বাচন করতে হবে যাতে মাটি খুব দ্রুত পানি শুষে নিতে পারে।

সার ও কীটনাশকের ব্যবহার
বর্ষাকালে সার প্রয়োগ না করাই ভালো। যদি একান্তই সার দেওয়া দরকার মনে হয় তাহলে জৈব সার দিতে হবে। প্রাকৃতিক কীটনাশক হিসেবে নিমের তেল, গোলমরিচ গুঁড়া, শুকনো মরিচের গুঁড়া দিতে পারেন গাছের গোড়ায়। এতেও কাজ না হলে রাসায়নিক কীটনাশক ব্যবহার করতে হবে।

কেঁচোর কারবার
কেঁচো হলো প্রাকৃতিক সার। কোনো গাছের গোড়ায় যদি দেখেন, একাধিক কেঁচো জমা হয়েছে, তাহলে তা অন্যান্য টবেও দিয়ে দিতে পারেন। যার ফলে বাকি টবের গাছগুলো ভালো হবে।