// সঞ্জু রায়ঃ আধুনিক ও দৃষ্টিনন্দন পৌরসভা গড়ে তোলার লক্ষ্যে দেশের বৃহত্তম বগুড়া পৌরসভার ২০২৩-২৪ অর্থবছরে সুনির্দিষ্ট ৩৫টি পরিকল্পনা তুলে ধরে ২৪২ কোটি ৫৭ লক্ষ ৪৭ হাজার ৫৮১ টাকার বাজেট ঘোষণা করা হয়েছে। উন্নয়ন খাতে বরাদ্দ বেশি রেখে বর্তমান পৌর পরিষদের ৩য় এই বাজেটে বিগত বছরগুলোর তুলনায় বাড়ানো হয়েছে আয়ের খাত আর নেয়া হয়েছে বেশকিছু নতুন উদ্যোগ যা সুষ্ঠুভাবে বাস্তবায়ন হলে বদলে যাবে নগরের চিত্র। সময়ের সাথে এখন বগুড়া পৌরসভাকে সিটি কর্পোরেশন ঘোষণারও দাবি জানানো হয় অধিবেশনে।
সোমবার সকালে শহীদ টিটু মিলনায়তনে বগুড়া পৌরসভা আয়োজিত এই বাজেট ঘোষণা করা হয়। রাস্তা ও ড্রেনেজ ব্যবস্থার উন্নয়ন, করতোয়া নদীর নাব্যতা ফেরাতে উদ্যোগ গ্রহণ, বর্জ্য ব্যবস্থাপনা উন্নয়ন ও সম্প্রসারণ এবং শহরকে সুসজ্জিত করণে আলোকসজ্জায় বরাদ্দ দেয়াসহ শহরে ফায়ার হাইড্রেন্ট স্থাপনেও বরাদ্দ দেয়া হয়েছে এবারের বাজেটে। ৩৫টি সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা তুলে ধরে নেয়া এবারের বাজেটে রাজস্ব খাতে ব্যয় ধরা হয়েছে ৬৮ কোটি ৯৭ লক্ষ ২১ হাজার ২৫৯ টাকা আর উন্নয়ন খাতে ব্যয় ধরা হয়েছে ৩২ কোটি টাকা যা গেলো সব বাজেটকে পিছনে ফেলে দিয়েছে। পৌরবাসীকে সাথে নিয়ে অধিবেশনে দৃষ্টিনন্দন পৌরসভা গড়ার ঘোষণা দিয়েছেন পৌর মেয়র রেজাউল করিম বাদশা।
অধিবেশনে প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন জেলা প্রশাসক মো. সাইফুল ইসলাম। তিনি বলেন, উত্তরবঙ্গের প্রবেশদ্বার এবং বানিজ্যিক শহর হচ্ছে বগুড়া। অনেকেই মনে করেন বগুড়া এখনও অনেক পিছিয়ে আছে। আমি মনে করি বগুড়া পিছিয়ে নেই। কারণ বগুড়া হলো উত্তরাঞ্চলের ১৬টি জেলার রাজধানী। বগুড়ার সাধারণ জনগণ থেকে শুরু করে সর্বস্তরের জনগণ শিক্ষাসহ সকল ক্ষেত্রে বাংলাদেশের অন্যান্য জেলার তুলনায় বগুড়া এগিয়ে আছে। অতএব বগুড়া পিছিয়ে আছে এ কথা আমরা বলবো না। তিনি আরো বলেন, বগুড়ায় পরিকল্পিত যে উন্নয়ন হয়নি সেটা আমরা মনি করি না। সাসেক ১ এবং ২ প্রজেক্ট যখন বাস্তবায়ন হবে তখন ঢাকা থেকে সড়ক পথে ৩ থেকে সাড়ে ৩ ঘন্টায় বগুড়ায় চলে আসা যাবে। আমাদের রেললাইন প্রজেক্ট হয়েছে। এটি অধিগ্রহনের কার্যক্রম চলমান রয়েছে। যদি রেললাইন প্রজেক্ট বাস্তাবায়ন হয় তাহলে অল্প সময়ের ঢাকা থেকে বগুড়া পৌঁছা যাবে। এছাড়াও বগুড়ায় একটি বিসিক শিল্পনগরী রয়েছে। আরেকটি শিল্পনগরীর প্রস্তাব আছে। আমাদের ইউনিভার্সিটির দাবি ছিল। সেটিও হয়ে যাবে। বগুড়ায় আন্তর্জাতিক শহীদ চান্দু স্টেডিয়াম রয়েছে। এই স্টেডিয়ামে যাতে নিয়মিত আন্তর্জাতিক ম্যাচগুলো পরিচালিত হয় সেজন্য আমরা অনুরোধ করেছি বিসিবিকে। বগুড়া পৌরসভা বাংলাদেশের মধ্যে সবচেয়ে বড় পৌরসভা। বগুড়া সিটি করর্পোরেশন হওয়ার মতো একটি জায়গা। এত বড় একটি পৌরসভায় পরিকল্পিত উন্নয়ন দরকার। বগুড়ায় এখন যেটি দরকার সেটি হলো একটি সমন্বিত মাস্টার প্লান। যে মাস্টার প্লানের মাধ্যমে বগুড়ায় পর্যায়েক্রমে উন্নয়নমূলক কাজ হবে।
পৌর নির্বাহী কর্মকর্তা মো. শাহজাহান আলম রিপনের সঞ্চালনায় অধিবেশনে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে পৌরবাসীর জন্যে উপযোগী ও বাসযোগ্য নগরী গড়ে তুলতে সুনির্দিষ্ট কিছু সুপারিশ তুলে ধরেন জেলা পুলিশ সুপার সুদীপ কুমার চক্রবর্ত্তী বিপিএম পিপিএম। শহরের যানজট নিরসনে মহাসড়কের পাশে হাট-বাজারের ইজারা না দেয়া, শহরের ভিতর থেকে বাস টার্মিনাল অন্যত্র স্থানান্তর করা, ফুটপাত দখলমুক্তকরণে দৃশ্যমান উদ্যোগ গ্রহণসহ থ্রি হুইলার যানবাহনের দৌরাত্ম কমাতে পৌর পরিবহন সার্ভিস চালু করার প্রস্তাব করেন তিনি যা সাধুবাদ জানান অনুষ্ঠানে উপস্থিত পৌরবাসীরাও।
বাজেট ঘোষনা অনুষ্ঠানে বগুড়া পৌরসভার রেজাউল করিম বাদশা বলেন, দেড়শো বছরের পুরাতন এ পৌরসভা দেশের প্রাচীনতম পৌরসভাগুলির মধ্যে অন্যতম। প্রায় ১০ লক্ষ লোক এই শহরের বসবাস করে। প্রশাসন ও জনসাধারণের সহায়তায় চাঁদাবাজি, ছিনতাই, ডাকাতি, মাদক ও অসামাজিক কার্যকলাপ বন্ধ করার চেষ্টা চলছে। ইতিমধ্যে বগুড়া শহরের গুরুত্বপূর্ণ স্থানগুলোকে সিসিটিভির আওতায় আনা হয়েছে। পুরো শহরকে সিসিটিভির আওতায় আনার পরিকল্পনা রয়েছে। ভবিষ্যতে সাশ্রয়ী মূল্যে পৌর পরিবহন সার্ভিস চালু করা ও করতোয়া নদীর উভয় পাশ দিয়ে হেঁটে চলার পথ তৈরি করার পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে।
এছাড়াও বিদ্যমান সমস্যা সমাধানের পাশাপাশি শহরের সৌন্দর্য বর্ধন, স্বাধীনতা চত্বর নির্মাণ, রাস্তা ও ড্রেন নির্মান, মহিলাদের জন্য গণশৌচাগার নির্মান, হরিজন করোনী নির্মান, আধুনিক কসাইখানা নির্মান, ঈদগাহ উন্নয়ন, যানজট নিরসন, ফুটপাত দখলমুক্ত রাখা, হাটবাজার উন্নয়ন, মশক নিধন, প্রবীনদের জন্য বিশ্রামাগার নির্মান, মেধাবী শিক্ষার্থীদের শিক্ষা বৃত্তি প্রদান, অনলাইন সেবা, ফায়ার হাইড্রেন্ট নির্মান, বৃক্ষরোপন, ভেজাল বিরোধী অভিযান, বগুড়া পৌর উচ্চ বিদ্যালয়কে কলেজে পরিণত করাসহ নাগরিক সেবা বৃদ্ধির পদক্ষেপ নেয়ার কথা এই বাজেটে বলা হয়েছে। বাজেট অধিবেশনে অন্যান্যদের মাজে আরো উপস্থিত ছিলেন স্থানীয় সরকার বগুড়ার উপপরিচালক মাসুম আলী বেগ, মুক্তিযোদ্ধা সংসদ বগুড়ার সাবেক কমান্ডার রুহুল আমিন বাবলু, বগুড়া পৌরসভার প্যানেল মেয়র-১ পরিমল চন্দ্র দাস, প্যানেল মেয়র-২ আলহাজ শেখসহ পৌরসভার সকল কাউন্সিলরবৃন্দ এবং পৌর এলাকার নানা শ্রেণী পেশার সাধারণ নাগরিকবৃন্দ।
শহরের উন্নয়নে হাজারো চাওয়া পাওয়া থাকলেও সীমাবদ্ধতা ও সক্ষমতার কাছে যেন সব মলিন হয়ে যায়। তারপরেও অনেক কিছু না থাকার মাঝেও বগুড়া পৌরসভার এই অর্থবছরের বাজেটে ইতিবাচক পরিবর্তনের স্বপ্ন দেখছে পৌরবাসী। বাজেটে স্বচ্ছতা ও সুষ্ঠু বাস্তবায়নের মাধ্যমে যানজটমুক্ত ও পরিচ্ছন্ন নগরী হিসেবে এখন স্মার্ট বগুড়া হিসেবে গড়ে উঠবে এই এলাকা এমন আশাতেই বুক বেঁধেছে সকলে।