যশোরের আইনজীবী আরতি শোকজের জবাব দিলেও তার বিরুদ্ধে আরো অভিযোগ উঠেছে

// ইয়ানূর রহমান : যশোরের রিকশাচালককে প্রকাশ্যে জুতা মারার ঘটনায় জেলা আইনজীবীর সমিতির শোকজের জবাব দিয়েছেন সেই সমালোচিত আইনজীবী আরতি রাণী ঘোষ। বৃহস্পতিবার গভীর রাতে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন যশোর জেলা আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক আবু মোর্তজা ছোট ।

এদিকে সমালোচিত আইনজীবী আরতি রাণী ঘোষের বিরুদ্ধে তার সাবেক সহকারী সহ অনেকে সাংবাদিকদের কাছে অভিযোগ করেছেন।

আরতি রাণী শোকজের জবাবে বলেছেন, ওই রিকশাচালক প্রথমে তাকে আঘাত করেছে ।
এতে তিনি মারাত্মক ব্যাথা পান ও তার শরীরে জখম হয়। পরে রাগন্তিত হয়ে তিনি রিকশাচালককে মারপিট করেছেন। এছাড়া তার জবাবের সাথে মেডিকেল সার্টিফিকেট, ক্ষত স্থানের চিহ্নের ছবি ও হাসপাতালে ভর্তি থাকার প্রমাণ পত্র উপস্থাপন করেছেন। তিনি এধরণের কাজ আর কখনোই করবেন না এবং ঘটনাটি অনাকাঙ্খিত ও ভুল
স্বীকার করে সমিতির কাছে তিনি ক্ষমা চেয়েছেন ।

এ বিষয়ে যশোর জেলা আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক আবু মোর্তজা ছোট বলেন, আগামি রোববার নির্বাহী কমিটির মিটিং ডাকা হবে । এরপর সর্বসন্মতিক্রমে বিষয়টির স্বিদ্ধান্ত নেয়া হবে বলে জানান মি.ছোট।

গত ৭ মে জেলা জজ আদালতের পাশে আইনজীবী আরতি রাণী ঘোষ এক রিকশাচালককে বেধড়ক মারপিট করেন । এসময় পাশের কয়েকজন তাকে থামানোর চেষ্টা করেন। কিন্তু তিনি ক্ষান্ত হননি।  ওই রিকশাচালক হাত জোড় করে ক্ষমা প্রার্থনাও করেন।
তারপরেও আরতি তাকে জুতাপেটা করে। শেষমেষ প্রতক্ষ্যদর্শীরা একাট্টা হয়ে জোরালো অবস্থান নেন । একপর্যায় আরতি রাণী ওই রিকশা চালককে ছেড়ে দেন।
প্রেসক্লাবের সামনেই ঘটনায় কয়েকজন সাংবাদিকও এ ঘটনার সাক্ষী হন। তাদের একজন ভিডিও ধারণ করে ফেসবুকে ছেড়ে দেন। গত সোমবার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তা ভাইরাল হয়।

দেশব্যাপী সমালোচনা শুরুই শুধু নয় বিদেশেও ঘটনাটি নিয়ে প্রতিবাদী হয়ে উঠে সাধারণ মানুষ।  প্রতিবাদে শ্রমিকরা রাস্তায় মানববন্ধন করে।  এক পর্যায় বিষয়টি নজরে আসে সমিতির । গত ৯ মে সমিতি এ ধরনের কাজ কেন করলেন তা জানতে
চেয়ে শোকজ করেন আরতিকে।  বৃহস্পতিবার বিকেলে আরতি রাণী তার স্বামীর
মাধ্যমে জেলা আইনজীবী সমিতির দপ্তরে ক্ষমা চেয়ে লিখিত জবাব দেন।

এদিকে, আরতী রাণী ঘোষের সাবেক সহকারী সুখেন বিশ্বাস অভিযোগ করেছেন
রিকশাচালকের মত তার উপরও একই ব্যবহার করা করেছিলেন ওই আইনজীবী আরতি।
শুধুই মারপিট নয়, তার লাখ টাকা আত্মসাৎ করে এবং সব মামলার কাগজপত্র আটকে
রেখে দেয় ওই আরতী । তিনি এখন নি:স্ব হয়ে ঘুরছেন। এ বিষয়ে যশোর জেলা
আইনজীবী সহকারী সমিতি ও জেলা আইনজীবী সমিতিতে লিখিত অভিযোগ দিয়েও কোনো
প্রতিকার পাননি। তিনিও তার কঠিন শাস্তির দাবি জানান। তিনি আরও বলেছেন,
তার যদি অকাল মৃত্যু হয়, তাহলে এ মৃত্যুর জন্য দায়ী থাকবে একমাত্র
আইনজীবী আরতি রাণী ঘোষ।

অভিযোগ রয়েছে শুধু রিকশাচালক সাইফুল কিংবা সুখেন বিশ্বাসই না, তার এ
ধরনের আচরণ থেকে রেহাই পাননি আইনজীবী-মক্কেলরাও। অভিযোগ করা হচ্ছে,
সিনিয়র কয়েক আইনজীবীর ছত্রছায়ায় থাকার কারণে তিনি ধরাকে সরা জ্ঞান করেন।

উল্লেখ্য,  যশোর সদর উপজেলার চুড়ামনকাটি ইউনিয়নের আব্দুলপুর সিজালি
গ্রামের বাসিন্দা সেই রিকশা চালক সাইফুল ইসলাম। তিনি বর্তমানে চিকিৎসাধীন
রয়েছেন।

এরই মধ্যে তার স্ত্রী তোহরা বেগমের মাধ্যমে  কোতোয়ালি থানায় লিখিত অভিযোগ
দিয়েছেন সাইফুল । তাকে মারপিট ও প্রকাশে জুতাপেটা করে মানহানী করা হয়েছে
বলে দাবি করেন। বিষয়টি নিয়ে তদন্ত করছে পুরাতন কসবা ফাঁড়ি পুলিশ।#