// ইকবাল কবীর রনজু, চাটমোহর (পাবনা) প্রতিনিধি
পাবনার চাটমোহরে বৈদ্যুতিক মিটার চুরি করে চোর মোবাইল নম্বর লিখে রেখে যাচ্ছে মিটার বোর্ডে। মিটার ফেরত পেতে চোরের লিখে রেখে যাওয়া মোবাইল নম্বরে যোগাযোগ করতে বলা হচ্ছে। চোরের নম্বরে যোগাযোগ করলে মিটারের মুক্তপণ বাবদ চাওয়া হচ্ছে পাঁচ হাজার করে টাকা। চোরের দেওয়া বিকাশ নম্বরে টাকা পরিশোধ করলে মিটার কোথায় লুকিয়ে রাখা আছে তা জানিয়ে দিচ্ছে চোর।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সম্প্রতি বৈদ্যুতিক মিটার, ট্রান্সফরমার ও তার চুরির হিড়িক পরেছে। চোরচক্র উপরোক্ত অভিনব কায়দায় নির্বিঘেœ একের পর এক মিটার, ট্রান্সফরমার ও তার চুরি করলেও ধরা পরছে না। এ ব্যাপারে অনেক অভিযোগ থাকলেও আইন প্রয়োগকারী সংস্থা চোর খুঁজে বের করতে পারছেন না। গ্রাহকের গচ্চা যাচ্ছে লাখ লাখ টাকা। গভীর অগভীর নলকূপ, রাইস ও ফ্লাওয়ার মিলের মালিকরা মিটার হারানোর শঙ্কায় রয়েছেন। সর্বশেষ সোমবার রাতে হরিপুর ইউনিয়নের বুড়িপাড়া এলাকায় মিটার চুড়ির সময় এলাকাবাসীর ধাওয়ায় পালিয়ে গেছে চোরচক্র।
হরিপুর ইউরয়নের শালমারা গ্রামের সোলায়মান হোসেন নারিকেল পাড়া মৌজায় স্থাপিত পানাসি প্রকল্পের একটি গভীর নলকূপের ম্যানেজার। তিনি জানান, গত ৫ মে রাতে কে বা কাহারা তাদের গভীর নলকূপের মিটার চুরি করে। ৬ মে সকালে তিনি দেখেন মিটার নেই। মিটারের পাশে পলিথিনের ভিতর একটি মোাইল নম্বর লিখে রেখে গেছে চোরচক্র। মিটার ফেরত পেতে ঐ মোবাইল নম্বরে যোগাযোগ করতে বলা হয়। উক্ত নম্বরে যোগাযোগ করা হলে মিটার ফেরত বাবদ পাঁচ হাজার টাকা দাবী করে চক্রটি। তারা একটি বিকাশ নম্বরও দেয়। চোরদের দেওয়া বিকাশ নম্বরে পাঁচ হাজার টাকা পাঠানোর পর ফোন করলে চোর চক্র জানায় তাদের মিটার নাড়িকেলপাড়া ইটের ভাটার পাশে জঙ্গলের মধ্যে রাখা আছে। তথ্য মতে সেখানে গেলে মিটারটি পাই। পল্লিবিদ্যুৎ অফিসে যোগাযোগ করলে থানায় অভিযোগ করতে বলেন। থানায় অভিযোগ করার পর ৭ মে পুনঃসংযোগ দিয়েছে বিদ্যুৎ অফিস কিন্তু এখনো ধরা পরেনি চক্রটি।
চাটমোহর পৌর আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক, পৌরসদরের বড় শালিখা মহল্লার জুয়েল মির্জা জানান, পানাসি প্রকল্পের অধীনে একটি গভীর নলকূপ পরিচালনা করেন তারা। গত শুক্রবার দিবাগত রাতে কে বা কারা তাদের গভীর নলকূপের মিটার চুরি করে নিয়ে। শনিবার সকালে মিটার চুরি হয়ে যাওয়ার বিষয়টি লক্ষ করেন তিনি। মিটারের পাশে পলিথিনের মধ্যে চোর চক্র মোবাইল নম্বর লিখে রেখে যায় এবং মিটার ফেরত পেতে উক্ত নম্বরে যোগাযোগ করতে বলা হয়। উক্ত নম্বরে যোগাযোগ করলে মিটার ফেরত বাবদ চোর চক্র বিকাশে পাঁচ হাজার টাকা দাবী করে। মিটারের মুক্তপণের দর কষাকষাকষিতে সর্বশেষ ৩,০৬০ টাকায় মিটার ফেরত দিতে রাজি হয় চক্রটি। বিকাশে টাকা পাঠানোর পর চোরদের নির্দেশনা অনুযায়ী চাটমোহর-গুয়াখড়া সড়কের পাশের একটি জ্বালানীর স্তুপের মধ্য থেকে মিটার ফেরত পেয়েছেন তিনি। তিনি আরো জানান, কয়েক মাস পূর্বে এক রাতে তার তিনটি ট্রান্সফরমার চুরি হয়েছে। নতুন ট্রান্সফরমার পেতে তাকে তিন লাখেরও বেশি টাকা ব্যয় করতে হয়েছে। চোর ইতি মধ্যে ৩০ থেকে ৪০ টি মিটার চুরি করে টাকার বিনিময়ে ফেরত দিয়েছেন বলে জানিয়েছে। পর্যায়ক্রমে সব মিটার চুরি করে মিটারের মুক্তপণ আদায় করা হবে বলেও জানিয়েছে চোর।
চাটমোহরের মুলগ্রাম ইউনিয়নের মুলগ্রামের আব্দুস সালাম জানান, তার পিতা হাবিবুর রহমান, তোফাজ্জল হোসেন মাস্টার ও হোসেন আলী মন্ডলের যৌথ মালিকানাধীন গভীর নলকূপের প্রায় ৬০ ফিট বৈদ্যুতিক তার গত শুক্রবার ভোর রাতে চোর চক্র চুরি করে নিয়ে গেছেন। এ ঘটনায় হোসেন আলী মন্ডল বাদী হয়ে ৫ মে শুক্রবার মুলগ্রামের হাবিবুর রহমান মেকারের ছেলে রবিউল ইসলামসহ তিন জনকে অভিযুক্ত করে একটি অভিযোগ করেন। এছাড়াও চাটমোহরের সাবেক মেয়র প্রফেসর আব্দুল মান্নানসহ চাটমোহরের আরো অনেকের মিটার, ট্রান্সফরমার ও তার চুরির ঘটনা ঘটেছে।
চাটমোহর থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জালাল উদ্দিন জানান, এ ব্যাপারে অভিযোগ পেয়েছি। মিটারের পাশে পাহাড়াদার না থাকায় চুরির ঘটনা ঘটছে। চোর ধরতে আমাদের অনুসন্ধান অব্যাহত আছে।
পাবনা পল্লীবিদ্যুত সমিতি-১ এর জেনারেল ম্যানেজার জানান, ট্রান্সফরমার, মিটার ও তার চুরি রোধে আমরা সচেতনতা মূলক ব্যবস্থা হিসেবে মাইকিং করি, মোটিভেশন করি, উঠান বৈঠক করি। তার পরও চুরি হচ্ছে। মিল কারখানার মালিক, গভীর-অগভীর নলকূপ কর্তৃপক্ষসহ গ্রাহকগন সচেতন হলে মিটার চুরি কমবে।