// সঞ্জু রায়, বগুড়াঃ ভল্টের সামনে পড়ে থাকা মেশিনের প্যাকেটের কোডের সূত্র ধরে বগুড়ার প্রধান ডাকঘরে টাকা লুট ও হত্যার ঘটনায় মূল হোতা শফিকুল ইসলামকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। জেলা পুলিশের দাবি, শফিকুল একজন পেশাদার ডাকাত। তিনি একাই এই লুট ও হত্যার ঘটনা ঘটিয়েছেন।
৪০ বছরের শফিকুল ইসলাম নওগাঁর সাপাহারের পশ্চিম করমডাঙ্গার মৃত আব্দুস সালামের ছেলে। তাকে সাপাহার উপজেলার ভারতীয় সীমান্ত এলাকায় গত ৩ মে অভিযান চালিয়ে গ্রেপ্তার করে জেলা পুলিশের গোয়েন্দা শাখা।
বগুড়া জেলা পুলিশ সুপার সুদীপ কুমার চক্রবর্ত্তী বিপিএম পিপিএম বৃহস্পতিবার বেলা সাড়ে ১২টার দিকে এক সংবাদ সম্মেলনে এই তথ্য জানান।
তিনি বলেন, ঈদের পরে ২৪ এপ্রিল ডাকঘরের পাহারায় থাকা অফিস সহায়ক প্রশান্ত কুমার আচার্য্যের মরদেহ উদ্ধার হয়। সে সময় জানা যায় ভল্ট কেটে ৮ লাখ টাকাও লুট হয়েছে। এ ঘটনার পর থেকে পুলিশ বিভিন্ন বিষয় মাথায় নিয়ে তদন্ত শুরু করে। তদন্তে ভল্টের সামনে বোস কোম্পানির একটি শান মেশিনের প্যাকেট পাওয়া যায়। এর গায়ে থাকা কোড ধরে বাবু মেশিনারিজ নামে একটি দোকানের সন্ধান মিলে। সেখানকার সিসি ক্যামেরার ফুটেজের সঙ্গে ডাকঘরে রাতের ফুটেজে দেখা ব্যক্তির সাদৃশ্য পায় পুলিশ।
অনুসন্ধানে পুলিশ জানতে পারে, শফিকুল এক মাস আগে ১২ মার্চ শার্ট তৈরি করতে বগুড়ায় এসেছিল। সে সময় ডাকঘরে তার মোটরসাইকেলটি পার্কিং করে রাখেন। ওই সময় ডাকঘরের টাকা লেনদেনের কার্যক্রম দেখে লুটের পরিকল্পনা মাথায় আসে শফিকুলের। পরিকল্পনা অনুযায়ী শফিকুল সেদিনেই রেকি করে নওগাঁয় ফিরে যান বলে উল্লেখ করেন পুলিশ সুপার। এরপর ১৫ মার্চ আবার বগুড়ায় এসে বাবু মেশিনারিজ থেকে গ্রিল, তালা কাটার সরঞ্জাম ক্রয় করেন। পরে ২১ এপ্রিল দিবাগত রাতে ওই সরঞ্জাম ডাকঘরের ভিতরে রাখে। কিন্তু ওই দিন ভল্ট কেটে টাকা নিয়ে যেতে পারেননি গ্রেপ্তার শফিকুল। তাই ২৩ এপ্রিলে আবার টাকা নেয়ার জন্য আসেন তিনি। ওই সময় পাহারায় থাকা নিরীহ অফিস সহায়ক প্রশান্ত আচার্য্য দায়িত্ব পালনে এগিয়ে গেলে তাকে মাথায় আঘাত ও শ্বাসরোধ করে হত্যা করেন শফিকুল। পরে ভোরে টাকা নিয়ে গেট দিয়ে বের হয়ে চলে যান নওগাঁয়।
লুটের টাকা প্রথমে দুটি ব্যাংকে রাখেন শফিকুল। সংবাদ সম্মেলনে এ কথা জানান এসপি সুদীপ কুমার। তিনি জানান, নওগাঁ গিয়ে শহরের জলিল মার্কেটের মার্কেন্টাইল ব্যাংকে শফিকুল নিজের অ্যাকাউন্টে দুই লাখ টাকা জমা করেন। একই দিন ডাচ্ বাংলা ব্যাংকে তার আরেক অ্যাকাউন্টে ৩ লাখ ৭৬ হাজার টাকা রাখেন। পুলিশ এই টাকার সন্ধানও পেয়েছে। বাকি টাকার খোঁজ চলছে।
এ সময় তিনি আরও জানান, গ্রেপ্তার শফিকুল ইসলামের বিরুদ্ধে বিভিন্ন জেলায় মোট ৯ টি চুরি, ডাকাতির মামলা রয়েছে। ২০১৯ সালে ঢাকার বনানী এলাকার জনতা ব্যাংকের ভল্ট কেটে টাকা লুটের সময় গ্রেপ্তার হয়েছিলেন তিনি।
জেলা পুলিশ সুপার বলেন, তাদের হাতে ধরার পর ডাকঘরের টাকা লুট ও হত্যার বিষয়ে বিস্তারিত সব স্বীকার করেছেন শফিকুল এবং বিজ্ঞ আদালতেও ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি প্রদান করবেন মর্মে সংবাদ সম্মেলনে জানান তিনি। তবে ঘটনার দিন বগুড়ার প্রাণকেন্দ্র সাতমাথায় অবস্থিত প্রধান ডাকঘরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা এবং কর্তৃপক্ষের অব্যবস্থাপনা নিয়ে হতাশা প্রকাশ করেন এসপি সুদীপ। তিনি বলেন, ডাকঘরে টাকাসহ নানা গুরুত্বপূর্ণ নথি রেখে নৈশপ্রহরীর পরিবর্তে কিভাবে তারা একজন অফিস সহায়কের উপর পুরো দায়িত্ব ছেড়ে দিতে পারে। কারণ একজন নৈশপ্রহরীর মতো পেশাদার দায়িত্ব তো একজন অফিস সহায়ক পালন করতে পারেনা। তাইতো নির্মম হত্যাকাণ্ডের শিকার হলেন প্রশান্ত আচার্য্য। যদিও ডাকঘর কর্তৃপক্ষের গাফিলতি বা অব্যবস্থাপনার বিষয়ে পৃথক তদন্ত করবেন সংশ্লিষ্ট দপ্তর তারপরেও তিনি জেলায় সকল আর্থিক প্রতিষ্ঠানের নিরাপত্তা বিধানে কর্তৃপক্ষকে আরো সচেতন হওয়ার আহŸান জানান আর একাজে জেলা পুলিশ পরিবার সর্বদা আন্তরিকভাবে সহযোগিতা করবে।
সংবাদ সম্মেলনে জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন ও অর্থ) স্নিগ্ধ আখতার পিপিএম, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) শরাফত ইসলাম, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ট্রাফিক) হেলেনা আক্তার, সদর থানার ওসি নূরে আলম সিদ্দিকী, জেলা গোয়েন্দা শাখার ইনচার্জ সাইহান ওলিউল্লাহ, সদর ফাঁড়ির ইনচার্জ শাহিনুজ্জামানসহ জেলা পুলিশের বিভিন্ন পর্যায়ের সদস্য উপস্থিত ছিলেন।
উল্লেখ্য, গত ২৪ এপ্রিল দিনগত রাতে ডাকঘরের পাহারায় থাকা অফিস সহায়ক প্রশান্ত কুমার আচার্য্যকে হত্যা করে আট লাখ টাকা লুট হয়। পরে এ ঘটনায় বগুড়ার প্রধান ডাকঘরের পরিদর্শক মহিদুল ইসলাম বাদি হয়ে ৫ থেকে ৭ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেছিলেন।