সুদানের সশস্ত্র বাহিনী (এসএএফ) এবং আধাসামরিক বাহিনী র্যাপিড সাপোর্ট ফোর্সেস (আরএসএফ)-এর লড়াই অব্যাহত থাকায় দেশজুড়ে ইন্টারনেট বিভ্রাটের খবর পাওয়া গেছে। ইতিমধ্যে দেশটি ছেড়ে যাচ্ছেন বিভিন্ন দেশের নাগরিকরা। কিছু কিছু দেশ তাদের কূটনীতিকদেরও সরিয়ে নিচ্ছে।
কূটনীতিকদের সরিয়ে নিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র:
মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বলেছেন, সুদান থেকে মার্কিন সরকারি কর্মকর্তাদের সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। এক বিবৃতিতে তিনি বলেন, আমার নির্দেশে মার্কিন সামরিক বাহিনী খার্তুম থেকে আমাদের কর্মকর্তাদের বের করে আনতে অভিযান চালিয়েছে।
মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিনকেন বলেন, সব মার্কিন কর্মী ও তাদের পরিবারকে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। খার্তুমে মার্কিন দূতাবাসের কার্যক্রম সাময়িকভাবে স্থগিত করা হয়েছে। ১০০ জনেরও বেশি স্পেশাল অপারেশন ফোর্সের একটি দল তাদের সরিয়ে আনতে সক্ষম হয়।
মার্কিন প্রতিরক্ষামন্ত্রী লয়েড অস্টিন বলেন, মার্কিন আফ্রিকা কমান্ডের নেতৃত্বে এবং স্টেট ডিপার্টমেন্টের সঙ্গে সমন্বয়ের মাধ্যমে এই অভিযান চালানো হয়। সুদানের সশস্ত্র বাহিনী এসএএফ এবং আরএসএফ-এর মধ্যে এক সপ্তাহ ধরে তীব্র লড়াইয়ের পর আমেরিকান সেনাদেরও সরিয়ে নেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে।
এদিকে, ফ্রান্সের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, তারা সুদান থেকে তাদের নাগরিক ও কূটনৈতিকদের সরিয়ে নিতে শুরু করেছে।
একইভাবে ব্রিটিশ কূটনীতিক ও তাদের পরিবারের সবাইকে সুদান থেকে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। দেশটির প্রধানমন্ত্রী ঋষি বলেছেন, ‘জটিল ও দ্রুত’ অভিযানে ব্রিটিশ কূটনীতিক ও তাদের পরিবারকে সুদান থেকে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। সুদানে অবস্থানরত ব্রিটিশ নাগরিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে কাজ চলছে।
সুদানে কানাডার কার্যক্রম সাময়িকভাবে স্থগিত:
সুদানে কার্যক্রম সাময়িকভাবে স্থগিত করেছে কানাডা। দেশটি জানিয়েছে, তাদের কূটনীতিকরা সাময়িকভাবে দেশের বাইরে নিরাপদ অবস্থান থেকে কাজ করবেন।
কানাডীয় সরকার এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, খার্তুমে কার্যক্রম স্থগিত থাকলেও সীমিত আকারে কনস্যুলার সেবা অব্যাহত রয়েছে।
তুর্কিদের সরিয়ে নেওয়া শুরু হয়েছে:
তুরস্কের ইস্তাম্বুল থেকে আল-জাজিরার সাংবাদিক আমির লাফি বলেন, তুরস্কের নাগরিকদের পাশাপাশি অন্যান্য দেশের নাগরিকদের সরিয়ে নেওয়া শুরু হয়েছে সুদান থেকে।
তুরস্কের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় তাদের নাগরিকদের জন্য তিনটি অ্যাসেম্বলি এলাকা নির্দিষ্ট করেছে। তারা সেখানে নিরাপদে অবস্থান করবেন।
সুদানে ৪০০ সৈন্য পাঠানোর অনুমোদন সুইডেনের:
সুইডিশ পার্লামেন্ট সুদান থেকে তাদের নাগরিকদের সরিয়ে নিতে সশস্ত্র বাহিনী পাঠানোর জন্য সরকারকে প্রয়োজনীয় অনুমোদন দিয়েছে। এক বিবৃতিতে রিক্সড্যাগ সরকারকে এই কাজের জন্য ৪০০ সৈন্যের একটি ইউনিট পাঠানোর প্রস্তাব অনুমোদন হয়েছে।
দেশটির ফরেন অ্যাফেয়ার্স কমিটির প্রস্তাব অনুযায়ী, সুদান থেকে সুইডিশ ও বিদেশি নাগরিকদের সরিয়ে নেওয়ার দায়িত্ব দেওয়া হবে এ বাহিনীকে।
নাগরিকদের সরিয়ে নিতে যোগ দিয়েছে বেলজিয়াম:
বেলজিয়ামের শীর্ষ কূটনীতিকরা বলেছেন, সুদান থেকে বেলজিয়ামের নাগরিক এবং অন্যান্য যোগ্য ব্যক্তিদের সরিয়ে নিতে ফ্রান্স ও নেদারল্যান্ডসের সাথে কাজ করছে বেলজিয়াম।
বেলজিয়ামের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাদজা লাহবিব এক টুইটবার্তায় বলেছেন, যত দ্রুত সম্ভব ইউরোপীয় নাগরিকদের সরিয়ে নিতে সুদানে একাধিক অভিযান চলছে।
একইভাবে সৌদি আরবও ঘোষণা করেছে তারা ভ্রাতৃপ্রতিম কিছু দেশের নাগরিকদের সুদান থেকে সরিয়ে নেওয়ার ব্যবস্থা করছে। সর্বশেষ খবরে বলা হয়, সৌদি মিশনের কূটনীতিকরা ইতোমধ্যেই সড়কপথে পোর্ট সুদান গিয়ে সেখান থেকে নিজ দেশের উদ্দেশে বিমান উঠেছেন।
প্রসঙ্গত, সুদানের সামরিক নেতৃত্বের দুই অংশের মধ্যে ক্ষমতার দ্বন্দ্বের কারণে গত সপ্তাহে সহিংসতা শুরু হয়। এক সপ্তাহ ধরে চলা সহিংসতায় এ পর্যন্ত কমপক্ষে ৪০০ লোক নিহত হয়েছে। আহত হয়েছে সাড়ে তিন হাজারেরও বেশি মানুষ।
সুদানে কীভাবে বেসামরিক শাসন ফিরিয়ে আনা হবে, মূলত তা নিয়ে দুই ক্ষমতাধর সামরিক অধিনায়কের দ্বন্দ্ব থেকে এই লড়াই চলছে। বর্তমান সামরিক সরকার চলে মূলত সেনাপ্রধান জেনারেল আবদেল ফাত্তাহ আল-বুরহানের নেতৃত্বে। তার সঙ্গে উপনেতা হিসেবে আছেন আরেকটি আধা-সামরিক বাহিনী র্যাপিড সাপোর্ট ফোর্সেসের (আরএসএফ) প্রধান মোহাম্মদ হামদান হেমেডটি ডাগালো।
বেসামরিক শাসনে প্রত্যাবর্তনের পরিকল্পনা অনুযায়ী, এই দুটি বাহিনীকে একীভূত করার কথা। কিন্তু আরএসএফ তাদের বিলুপ্ত করার বিপক্ষে এবং এই পরিকল্পনা থামানোর জন্য তাদের বাহিনীকে রাস্তায় নামায়। এরপর এটি সেনাবাহিনী এবং আরএসএফের মধ্যে একটি পূর্ণাঙ্গ লড়াইয়ে রূপ নিয়েছে।
জাতিসংঘ জানিয়েছে, দশ হাজার থেকে বিশ হাজার মানুষ সুদান ছেড়ে পালিয়েছে পাশের দেশ চাদে আশ্রয় নেওয়ার জন্য। এদের বেশিরভাগ নারী ও শিশু।