// চাটমোহর প্রতিনিধি
জমিজমা সংক্রান্ত বিরোধের জেরে পাবনার চাটমোহরে ভাঙচুর, লুটপাট ও মারধরের ঘটনায় মামলা দায়েরের পর অভিযুক্তরা ওই পরিবারের সদস্যদের নানাভাবে হুমকি ধামকি দিচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। মামলা তুলে না নিলে তাদের প্রাণনাশের হুমকি দেয়া হচ্ছে।
গত ৮ এপ্রিল চাটমোহর উপজেলার মুলগ্রাম ইউনিয়নের জগতলা নতুনপাড়া গ্রামের আফজাল হোসেন মন্ডল ও তোফাজ্জল হোসেন মন্ডলের বাড়িতে এ হামলার ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় গত ৯ এপ্রিল চাটমোহর থানায় ৯ জনকে আসামি করে একটি মামলা দায়ের করা হয়।
মামলার বাদী আফজাল হোসেন মন্ডল তার লিখিত অভিযোগে বলেন, ১৯২৫ সাল থেকে পূর্বসূরীদের কাছ থেকে ওয়ারিশ সুত্রে প্রাপ্ত হয়ে ৬৩ শতক জমিতে বসবাস করে আসছেন আফজাল হোসেন মন্ডল ও তার ভাই তোফাজ্জল হোসেন মন্ডল। বিগত ৩০/৩৫ বছর ধরে ওই জমিতে বাড়ি করে তারা ভোগ দখল করছেন।
দুই বছর আগে থেকে হঠাৎ করেই ওই জমিতে নিজেদের মালিকানা দাবি করেন একই গ্রামের আবু বক্কর, আমজাদ হোসেন, গোলাম হোসেন গং। এ নিয়ে শুরু হয় বিরোধ। পরে জমি দাবি করে তারা আদালতে একটি মামলাও দায়ের করেন। এছাড়া বিরোধের কথা জানতে পেরে সার্কেল অফিসও দুই পক্ষকে ডেকে নিয়ে কাগজপত্র জমা নিয়েছে। সহকারি পুলিশ সুপার দুই পক্ষের কাগজ যাচাই-বাছাই করে পরবর্তীতে এ নিয়ে মীমাংসা করে দেবার কথা বলেছিলেন।
কিন্তু এর মধ্যে গত ৮ এপ্রিল বেলা ১১ টার দিকে আবু বক্কর, আমজাদ হোসেন, গোলাম হোসেন গং লাঠি সোঠা, লোহার রড,সহ দেশীয় অস্ত্র নিয়ে আফজাল হোসেন ও তোফাজ্জল হোসেনের বাড়িতে হামলা করে। এ সময় তাদের বাধা দিতে গেলে নারীসহ চারজনকে বেধড়ক পিটিয়ে আহত করে তারা। এসময় আজিজুল ইসলাম, তমালিকা খাতুন, ঝরনা বেগমসহ অন্যান্যরা আহত হন। এর মধ্যে ঝরনা বেগম, তমালিকা খাতুন, আজিজুল ইসলামকে চাটমোহর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়। এদের মধ্যে গুরুতর আহত অবস্থায় তমালিকাকে পরবর্তীতে পাবনা জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
এ ঘটনায় আফজাল হোসেন মন্ডল বাদী হয়ে ৯ জনকে আসামি করে গত ৯ এপ্রিল চাটমোহর থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। মামলায় অভিযুক্তরা হলেন, আবু বক্কর, আমজাদ হোসেন, গোলাম হোসেন, সুলতান হোসেন, মনির হোসেন, হায়দার আলী, তোতা মিয়া, সুজন হোসেন, আনিস হোসেন।
আফজাল হোসেনের অভিযোগ, হামলার সময় অভিযুক্তরা দুইটি বাড়ির আসবাবপত্র ভাঙচুর, সাড়ে ৬ ভরি স্বর্নালঙ্কার ও নগদ সাড়ে ৫ লাখ টাকা লুট করে নিয়ে গেছে। পরে এ ঘটনায় থানায় মামলা দায়েরের পর পুলিশ কোন আসামিকে গ্রেফতার করেনি৷ অভিযুক্তরা আদালত থেকে আগাম জামিন নিয়ে এসে এখন মামলা তুলে নেবার জন্য সকাল সন্ধ্যা আমাদের হুমকি-ধমকি দিচ্ছে। মারধরের চেষ্টা করছে। আমরা নিরাপত্তাহীনতার মধ্যে রয়েছি। আবার যেকোনো সময় তারা হামলা করতে পারে বলে আশঙ্কা করছি।
এ বিষয়ে প্রধান অভিযুক্ত আবু বক্কর বলেন, ওই জমি আমার দাদার কেনা সম্পত্তি৷ আমরা ওয়ারিশ। কিন্তু তারাই ভুয়া কাগজপত্র করে ভোগ দখল করে আসছে। আমাদের স্বপক্ষে সকল কাগজপত্র রয়েছে। কিন্তু তারা জমি ছাড়ছে না।
আইন অমান্য করে আপনারা হামলা ভাঙচুর লুটপাট করতে পারেন কি না এমন প্রশ্নের জবাবে আবু বক্কর বলেন, ৮ তারিখে কথা কাটাকাটি থেকে একটু ঝামেলা হয়েছিল৷ কিন্তু কোন লুটপাট করা হয়নি। আর মামলার পর কোন হুমকি ধামকিও দেওয়া হচ্ছে না। তারা মিথ্যা অভিযোগ করছে।
এ ব্যাপারে চাটমোহর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ জালাল উদ্দিন বলেন, ঘটনার পর আফজাল হোসেন মন্ডল বাদী হয়ে ৯ জনকে আসামি করে একটি মামলা দায়ের করেছেন। পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে। মামলার তদন্ত কার্যক্রম চলছে। অভিযুক্ত সকল আসামি জামিনে রয়েছে। তদন্ত শেষে আদালতে চার্জশিট দাখিল করা হবে। তিনি আরো জানান, যদি কেউ হুমকি ধমকি দেয় সে বিষয়ে ভুক্তভোগীরা থানায় জিডি করতে পারেন। পুলিশ বিষয়টি খতিয়ে দেখবে।