// নন্দীগ্রাম (বগুড়া) প্রতিনিধি : বগুড়ার নন্দীগ্রামে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শিফা নুসরাতের অপসারণ দাবিতে ও উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান রেজাউল আশরাফ জিন্নাহর বিরুদ্ধে নানা অভিযোগে মানববন্ধন-বিক্ষোভ এবং সমঝোতার বৈঠকের পরও নতুন করে বিতর্ক শুরু হয়েছে। এসিল্যান্ড ও উপজেলা চেয়ারম্যান সাংবাদিকদের উস্কে দিচ্ছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।
প্রধানমন্ত্রীর আশ্রয়ণ প্রকল্পে ব্যাপক অনিয়ম ও সাংবাদিকদের সঙ্গে অসৌজন্যমূলক আচরণ সহ নানা অভিযোগে গত সোমবার ইউএনও’র অপসারণের দাবি জানিয়ে স্থানীয় সাংবাদিক ও জনসাধারণের ব্যানারে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করা হয়। ৪৮ ঘন্টা পর গত বুধবার পৌরসভার মেয়র ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. আনিছুর রহমানের মধ্যস্থতায় ইউএনও-সাংবাদিকদের মধ্যে সমঝোতার বৈঠক হয়। এ বৈঠকের পরদিন বৃহস্পতিবার বীর মুক্তিযোদ্ধার গেজেট না হওয়া ব্যক্তি শফি উদ্দিন মাস্টারের নেতৃত্বে মুক্তিযোদ্ধা সংসদ কমান্ডের ব্যানারে শিক্ষকসহ ১২জন ব্যক্তি উপজেলা পরিষদ গেটের সামনে ইউএনওর পক্ষে এবং সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে মানববন্ধন করে। মুক্তিযোদ্ধা ব্যানারে সাধারণ লোকজন স্থানীয় সাংবাদিকদের তুচ্ছতাচ্ছিল্য করে বক্তব্য দেয়। মুক্তিযোদ্ধার গেজেট না হওয়া ব্যক্তি শফি উদ্দিন তার বক্তব্যে বলেন, মাননীয় ইউএনও স্যার, মুক্তিযোদ্ধাদের মানবতার মা। সেই বক্তব্যের ভিডিও উপজেলা সহকারি কমিশনার (ভূমি) মোহাম্মদ রায়হানুল ইসলাম তার অফিসের ফেসবুক আইডিতে ‘তথাকথিত সংবাদিকদের দাঁত ভাঙা জবাব দেওয়া হয়েছে বলে স্ট্যাটাস দেন’। এসিল্যান্ডের মন্তব্যকে সাংঘর্ষিক উল্লেখ করে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন স্থানীয় সহ জেলা এবং জাতীয় পর্যায়ের সাংবাদিকরা। মুক্তিযোদ্ধা সংসদের নেতাদের সঙ্গে কোনো সিদ্ধান্ত বা আলোচনা ছাড়াই সংসদ কমান্ডের ব্যানারে সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে মানববন্ধন করায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন স্থানীয় বীর মুক্তিযোদ্ধারা। তারা বলছেন, মুক্তিযোদ্ধা সংসদের ব্যানারে দাঁড়িয়ে সাধারণ লোকজন সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে সাংঘর্ষিক যেসব বক্তব্য দিয়েছে, তা খুবই দুঃখজনক। উপজেলার ৫৫জন গেজেটভুক্ত মুক্তিযোদ্ধা। সংসদের ২৪জন ভোটার। ইউএনও শিফা নুসরাত মুক্তিযোদ্ধা সংসদের ভারপ্রাপ্ত কমান্ডার।
মুক্তিযোদ্ধা সংসদের এক সাবেক কমান্ডার বলেন, ইউএনও কখনোই মুক্তিযোদ্ধাদের মানবতার মা হতে পারেন না। এই বক্তব্য মুক্তিযোদ্ধারা দেননি। মুক্তিযোদ্ধারা ব্যক্তি স্বার্থে ব্যবহার হবে কেন? শফি উদ্দিন মাস্টার গেজেটভুক্ত মুক্তিযোদ্ধা নন। সাধারণ জনগণের বিরুদ্ধে আন্দোলনের জন্য মুক্তিযোদ্ধা সংসদ সৃষ্টি হয়নি। গেজেট না হতেই শফি উদ্দিন মাস্টার নিজেকে মুক্তিযোদ্ধা দাবি করে সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে মুক্তিযোদ্ধাদের উস্কে দেওয়ার চেষ্টা করছেন। তিনি দুইজন মুক্তিযোদ্ধাকে ভুল বুঝিয়ে ডেকে নিয়ে গেছেন। মানববন্ধনের ব্যাপারে মুক্তিযোদ্ধা সংসদের নেতারা অবগত নন বলে দাবি করে সাবেক কমান্ডার বলেন, সাংবাদিকরা সম্প্রতি সরকারি এক কর্মকর্তার বিরুদ্ধে মানববন্ধন করেছেন, তারা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের বিরুদ্ধে কোনো কথা বলেনি। অন্যদিকে গত বৃহস্পতিবার উপজেলা পরিষদের মাসিক সাধারণ সভায় ইউএনও শিফা নুসরাতের উপস্থিতিতে উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান রেজাউল আশরাফ জিন্নাহ স্থানীয় সাংবাদিকদের বিষয়ে সাংঘর্ষিক বক্তব্য দেন। আন্দোলনরত সাংবাদিকরা যেন উপজেলার কোনো সরকারি দপ্তরে সংবাদের জন্য যেতে না পারে, সে নির্দেশনাও দেন উপজেলা চেয়ারম্যান।
এ ব্যাপারে সাংবাদিক সংগঠন আরজেএফ চেয়ারম্যান এসএম জহিরুল ইসলাম বলেন, কোনো সরকারি কর্মকর্তা সাংবাদিকদের তথাকথিত বলতে পারেন না। এসিল্যান্ডকে এই মন্তব্যের ব্যাখ্যা দিতে হবে। তিনি সাংবাদিকদের উস্কে দিচ্ছেন।