পাবনা প্রতিনিধি
রবিবার (২৬ মার্চ) দুপুর একটা। চৈত্রের তীব্র ঝাঁঝালো রোদ ঢেলে পরছিল তখন। পাবনার চাটমোহর উপজেলার নিমাইচড়া ইউনিয়নের বরদানগর পূর্বপাড়া সংলগ্ন ফসলের মাঠে রবি ফসল তোলায় ব্যস্ত ছিলেন শত শত নারী ও পুরুষ শ্রমিক। প্রতি বছর কাজের ব্যস্ততার এমন সময় রোদ থেকে বাঁচতে, একটু ছায়া পেতে কিছু কৃষক, শ্রমিক বাঁশ, পলিথিন ও খড়কুটো দিয়ে মাঠের মধ্যে তৈরী করেন ভাওর (অস্থায়ী কুঁড়েঘর)। একটি ভাওরের দিকে এগুতেই চোখে পরে সেখানে বসে জিরিয়ে নিচ্ছেন কয়েকজন কৃষি শ্রমিক। তারই মধ্যে খালি গায়ে শুয়ে নিশ্চিন্তে ঘুমুচ্ছে সাত মাস বয়সী শিশু সুরাইয়া। যেন রাজ্যের ঘুম পেয়ে বসেছে তাকে। ঘামের ছাপ স্পষ্ট শিশুটির চোখে মুখে। সুরাইয়ার কৃষি শ্রমিক মা জনতা খাতুন তখন অদূরে রোদে বসে গৃহস্থের জমি থেকে তোলা শুকানো রসুনের ঝোঁপা বাঁধছিলেন।
সুরাইয়ার ছবি তোলার সময় তার মায়ের খোঁজ করতেই এগিয়ে আসেন বরদানগর গ্রামের চার সন্তানের জননী জনতা খাতুন। জনতা খাতুন জানান, সুরাইয়ার বাবা শফিকুল ইসলাম একজন কৃষি শ্রমিক। তাদের তিন মেয়ে ও এক ছেলে। পরিবারের সদস্য সংখ্যা ছয় জন। পৃথক সংসার হলেও শ্বশুর শ্বাশুড়ি জীবিত রয়েছেন। শফিকুলরা দুই ভাই। এক মাস শফিকুল এবং এক মাস অপর ভাই এভাবে পিতা মাতার ভরণ পোষণ করেন ওরা। দ্রব্যমূল্যের উর্ধগতির বাজারে সাত জনের পরিবারের ব্যয় বহন করতে শফিকুলকে খুবই হিমশিম খেতে হচ্ছে। তাই পরিবারের খরচ মেটাতে, স্বামীকে সহায়তার জন্য চৈত্র মাসের এমন দুপুরেও সাত মাস বয়সী শিশু কন্যাকে ভাওরে শুইয়ে রেখে কাজ করছি। দুধের শিশু, ওকে বাড়িতে রেখেও আসতে পারিনা। তাই প্রতিদিন প্রায় আট ঘন্টা রোদ ও ভাওরের সামান্য ছায়ায় কাটাতে হয় সুরাইয়াকে।
দুপুরে কাজের বিরতির সময় হওয়ায় বাড়ি ফেরার তাড়া। ঘুমের শিশুকে বুকে তুলে নেন জনতা। হাটতে থাকেন রোদের মধ্যে। শিশুটির চোখ মুখে রোদের ঝিলিক পরলেও তাকায়না চোখ খুলে। এরই মধ্যে এগিয়ে আসে সুরাইয়ার বড় বোন সাদিয়া। কোল বদল হয় সুরাইয়া। মায়ের কোল থেকে জায়গা হয় বোনের কোলে। ওরা এগুতে থাকে বাড়ির দিকে। এক ঘন্টার বিরতি। আবার যে কাজে ফিরতে হবে। তাই সময় নেই দারাবার।