// স্বপন কুমার কুন্ডু, ঈশ্বরদী (পাবনা) সংবাদদাতাঃ
প্রমত্তা পদ্মার বুকে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে ব্রিটিশ, পাকিস্তান ও বাংলাদেশ শাসনামলের স্বাক্ষি ‘হার্ডিঞ্জ ব্রিজ’। ১০৯ বছর আগে ১৯১৫ সালের ৪ঠা মার্চ বাংলাদেশের ওপর দিয়ে বয়ে যাওয়া পদ্মা নদীর বুকে চালু হয়েছিল ব্রিজটি। ২০১৫ সালে শতবর্ষ পূর্ণ হওয়ার প্রাক্কালে বৈদেশিক সহায়তাপুষ্ঠ প্রকল্পের গবেষণায় বলা হয় লৌহ কাঠামোর রাসায়ানিক ধাতুর গুণাবলী আরও ২৫ বছর বলবৎ থাকবে। ফলে ব্রিজ ২০৪০ সাল পর্যন্ত কার্যকরী থাকছে।
ব্রিজটির দৈর্ঘ্য ১,৭৯৮.৩২ মিটার বা ৫,৮৯৪ ফুট (১.৮ কি.মি)। সর্বমোট ১৫টি গার্ডার বা স্প্যান রয়েছে। প্রতিটি স্প্যানের দৈর্ঘ্য প্রায় ১২০ মিটার করে। তৎকালীন ব্রিটিশ ভারতের ভাইসরয় লর্ড ব্যারন হার্ডিঞ্জের নাম অনুসারে এই ব্রিজটির নামকরণ করা হয়। এশিয়ার বৃহত্তম রেলসেতু ও অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির সেতু বন্ধন ‘হার্ডিঞ্জ ব্রিজ’। ঐতিহাসিক হার্ডিঞ্জ সেতু উদ্বোধনকালে সেতু প্রল্পের প্রধান প্রকৌশলী স্যার রবার্ট উইলিয়াম গেলস্ আবেগভরে বলেছিলেন, যে সেতু নির্মাণ করে গেলাম উপযুক্ত রণাবেণ করা হলে এ সেতু চির যৌবনা হয়ে থাকবে। কথাটি কতখানি যে সত্য তার প্রমাণ গত ২০২৩ সালের ৪ঠা মার্চ ১০৯ বছরেও সেতুর গায়ে বার্ধক্যের ছাপ পড়েনি।
একাত্তরে স্বাধীনতা যুদ্ধের শেষ পর্যায়ে ১৩ই ডিসেম্বর পাকবাহিনীকে কোনঠাসা করার লক্ষ্যে মিত্রবাহিনী বিমান হতে বোমা নিপে করলে ১২ নম্বর স্প্যানটি ক্ষতিগ্রস্থ হয়। স্বাধীনতার পর যথারীতি ভারত সরকার স্প্যানটি নির্মাণ করে পূর্বের অবস্থানে ফিরিয়ে আনে।
গার্ড কাউন্সিলের সাধারণ সম্পাদক ট্রেন পরিচালক (গার্ড) আফজাল হোসেন জিন্নাহ ভারতগামী ‘মৈত্রি এক্সপ্রেস’সহ বিভিন্ন ট্রেন নিয়ে ৩৭ বছর ধরে হার্ডিঞ্জ ব্রিজের ওপর দিয়ে চলাচল করছেন। তিনি বলেন, ২০১৫ সালে শতবর্ষ পূর্ণ করার আগেও যেভাবে চলেছি এখনও একইভাবে চলছি। কোন ঝাঁকুনি, শব্দ, ঝনঝনানি বা অস্বাভাবিক কিছু মনে হয় না।
হার্ডিঞ্জ ব্রিজের ওপর দিয়ে ‘মৈত্রি এক্সপ্রেস’সহ বিভিন্ন ট্রেন চল্লিশ বছর ধরে চালাচ্ছেন এল এম ( ড্রাইভার) তৌহিদুল ইসলাম। তিনি বলেন, আগে ৬০ কি:মি: গতিতে ট্রেন চালানো হলেও এখন ৪০ কি:মি: গতিতে চালানোর নির্দেশনা রয়েছে। আগের মতোই চলছি, মেয়াদ উত্তির্ণ হওয়ায় অস্বাভাবিক কিছু অনুভূত হয় না।
পাকশী বিভাগীয় সেতু প্রকৌশল আব্দুর রহিম জানান, নির্মাণের সময় আয়ুস্কাল একশ বছর ধরা হয়েছিল। ২০১৫ সালে শতবর্ষ পূর্ণ হওয়ার প্রাক্কালে বৈদেশিক সহায়তাপুষ্ঠ প্রকল্পের গবেষণায় বলা হয় লৌহ কাঠামোর রাসায়ানিক ধাতুর গুণাবলী আরও ২৫ বছর বলবৎ থাকবে। ফলে ব্রিজ ২০৪০ সাল পর্যন্ত কার্যকরী থাকছে। প্রতি ৫ বছরে একবার ব্রিজ রং করার সাথে সাথে রিভের্টিং ( অকেজো লৌহ বোল্ড পরিবর্তন) সম্পন্ন হয়। ইতোমধ্যেই সরকার হার্ডিঞ্জ ব্রিজের ৩০০ মিটার অদূরে উজানে নতুন করে আরেকটি ব্রিজ নির্মাণের পরিকল্পনা গ্রহন করেছ। রেলের আমব্রেলা প্রকল্পের অধীনে নতুন ব্রিজ নির্মাণের জন্য সম্ভাব্যতা যাচাই ও বিশদ নকশা প্রণয়ন করা হচ্ছে বলে বিভাগীয় সেতু প্রকৌশলী জানিয়েছেন।
এবিষয়ে আমব্রেলা প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালকের সাথে সেলফোনে বারংবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।