// পাবনা প্রতিনিধিঃ
২৫০ শয্যার পাবনা জেনারেল হাসপাতালের কর্তব্যরত রাজা হোসেন(২৫) নামের এক ইন্টার্ন নার্সকে মারধরের অভিযোগ উঠেছে হাসপাতালের সাদ্দাম হোসেন নামের এক দালালের বিরুদ্ধে। এ ঘটনায় হাসাপাতালের ক্লিনিক্যাল ইন্টার্ন নার্সরা ৬ দফা দাবি নিয়ে কর্মবিরতিতে পালন করছেন।
মঙ্গলবার (৩১ জানুয়ারি)দুপুর সাড়ে ১২ টার দিকে হাসপাতালের মেডিসিন ওয়ার্ডের মহিলা ইউনিটে মারধরের ঘটনা ঘটে। পরে ঘটনার বিচার চেয়ে দিনব্যাপী কর্মবিরতী করেন ইন্টার্ন নার্সরা। এদিন বিকেল সাড়ে ৫ টার দিকে ঘটনার বিচার চেয়ে পাবনা জেনারেল হাসপাতালের পরিচালক ও সদর থানা বরাবর একটি লিখিত অভিযোগ দেওয়া হয়।
অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, পাবনার ইছামতি নার্সিং কলেজের ডিপ্লোমা ইন সাইন্স এন্ড মিডওয়াইফারির দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী রাজা হোসেন দুপুরের দিকে মেডিসিন ওয়াডের্র মহিলা ইউনিটে ডিউটিরত ছিলেন। এসময় হাসপাতালের মেডিসিন ওয়ার্ডের সিনিয়ির স্টাফ নার্স আশরাফুন্নেছাও ছিলেন। এসময় ভূক্তভোগী ওই নার্স একজন ছাড়পত্র পাওয়া রোগীর ওষুধ দিচ্ছিলেন। সেই রোগীর সাথে থাকা একজন আত্মীয় বলছে দেখেন ৮০ টাকার ইসিজি ৬০০ টাকা দিয়ে করিয়েছে। এই নিয়ে রোগীর আত্মীয় ও হাসপাতালের সাদ্দাম হোসেন নামের একজন দালালের তর্কাতর্কী শুরু হয় । এ সময় নার্স রাজা হোসেন ওই দালালকে উত্তেজিত না হয়ে রোগীর সঙ্গে হাসপাতালের বাহিরে গিয়ে কথা বলতে বলেন। এসময় দালাল সাদ্দাম হোসেন নার্সের উপর ক্ষিপ্ত হয়ে নার্সদের অফিস রুমে নিয়ে গিয়ে গলা থেকে আইডি কার্ড কেড়ে নিয়ে তাকে বেধরক মারধর শুরু করেন। তার সাথে থাকা আর একজন নার্সকে তুলে নিয়ে যেতে বসে। এসময় অন্য নার্সরা বাধা দিতে আসলে তাদেরকেও মারধর করা হয়। মারধর করার করার সময় বলে হাসপাতাল আমাদের কথায় চলে। হাসপাতালে পরিচালককে আগেই গিলে খেয়েছি। আমাদের এখান থেকে বাহির করে দেওয়ার ক্ষমতা কারও নেই। আমরা এখানে না থাকলে কেউ থাকতে পারবে না।
এদিকে নার্সকে মারধরের ঘটনায় দিনব্যাপী কর্মবিরতীতে ছিলেন, হাসপাতালের ইন্টার্ন নার্সরা। ৬ দফা দাবি পুরণ না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেয় তারা। তাদের ৬দফা দাবি হলো- হাসপাতালের কর্তব্যরত নার্সদের ব্যাক্তি স্বাধীনতা দেওয়া, রোগী হয়রানি বন্ধ করা, নার্সদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা, নার্সদের কাজে কোন হস্তক্ষেপ না করা, নার্সদের যথাযথ সম্মান নিশ্চিত করা।
বাংলাদেশ ডিপ্লোমা স্টুডেন্ট নার্সেস ইউনিয়ন পাবনা শাখার সভাপতি জাহিদ হাসান বলেন, আজ দুপুরের দিকে ৮০ টাকার ইসিজি ৬০০ টাকার পরানোর রোগীর সঙ্গে বিরোধ সৃষ্টি হলে সেটার প্রতিবাদ করলে আমাদের একজন সহকর্মীকে এক দালাল বেধরক মারধর করে। তুচ্ছ ঘটনায় মারধর করা মেনে নেওয়া যায় না। এ ঘটনা আমরা হাসপাতাল ও থানা বরারবর একটি লিখিত অভিযোগ দিয়েছি। অভিযুক্তের বিরুদ্ধে যথাযোথ ব্যবস্থা নিতে কর্তৃপক্ষের প্রতি আহবান জানান তিনি। সেই সঙ্গে দালালমুক্ত হাসপাতাল দাবি করেন তিনি। এ আগেও দালালরা হসাপাতালে একাধিক চিকিৎসক ও নার্সকে মারধর করেছে। সে ঘটনার কোন বিচার হয়নি।
এ ঘটনায় অভিযুক্ত সাদ্দাম হোসেনের সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে সম্ভব হয়নি।
এ ঘটনার পরই হাসপাতালে ছুটে আসেন পাবনা সদর থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ওসি কৃপা সিন্দু বালা। হাসপাতালের পরিচালকের সাথে নিয়ে ভুক্তভোগী নার্সদের সঙ্গে কথা বলে অভিযুক্ত সাদ্দাম হোসেনের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দেন তিনি।
ওসি বলেন, হাসপাতালের একজন ইন্টার্ন নার্সকে মারধরের ঘটনা শুনেই আমরা ঘটনাস্থলে গিয়েছি। ভূক্তভোগীর নার্সের কাছ থেকে সব ঘটনা শুনেছি। একটি অভিযোগও পেয়েছি। অভিযোগের বিষয়ে তদন্ত করা হচ্ছে। তদন্তের পর প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে। সেই সঙ্গে হাসপাতালের অব্যবস্থাপনা ও দালালমুক্ত করতে কর্তৃপক্ষ ও স্বাস্থ্যবিভাগের প্রতি আহবান জানান তিনি।
পাবনা জেনারেল হাসপাতালের সহকারী পরিচালক ডা. ওমর ফারুক মীর বলেন, ঘটনা শোনার পর পরই তিনি হাসপাতালের ইন্টার্ন নার্সদের নিকট যান। তবে অভিযুক্তকে সেখানে পাওয়া যায়নি। অভিযুক্তের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে আমরা হাসপাতালের পরিচালনা পরিষদ বৈঠক করেছি। হাসপাতালের বহিরাগতদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নিতে পদক্ষেপ নেওয়া হবে।