জসীমউদ্দীন ইতি ঠাকুরগাঁও প্রতিনিধি
ঠাকুরগাঁওয়ের সরকারি জেনারেল হাসপাতালে নেই ডায়ালাইসিস সেন্টার। ফলে বেসরকারি সেন্টার গুলোতে প্রায় নয় গুণ বেশি ফি দিয়ে ডায়ালাইসিস গ্রহণ করছেন ঠাকুরগাঁও-পঞ্চগড় জেলার কিডনি রোগীরা।
বেসরকারি সেন্টারে ডায়ালাইসিস এর রাজকীয় ব্যয় যোগার করতে হিমসিম খেতে হচ্ছে রোগীর পরিবার ও স্বজনদের। অনেকে ব্যয় সামলাতে না পেরে নিরুপায় হয়ে নষ্ট কিডনি নিয়ে ধুঁকছে বছরের পর পর। অর্থের অভাবে ডায়ালাইসিস বন্ধের পথে অনরক রোগীর। কিডনি চিকিৎসা করাতে গিয়ে নিঃস্ব হয়েও প্রিয়জন হারাচ্ছেন অনেকে।
ঠাকুরগাঁও জেলা শহরে দুইটি বেসরকারি ডাইয়ালাইসিস সেন্টারে মোট ৭ টি ডায়ালাইজার মেশিনে কিডনি রোগীদের ডাইয়ালাইসিস সেবা দেয়া হয়। এসব সেন্টারে ঠাকুরগাঁও-পঞ্চগড়ের ৫০ জনের বেশি রোগী ডায়ালাইসিস গ্রহণ করেন।
এই দুই সেন্টারে ডায়ালাইসিস গ্রহণ করা রোগী ও স্বজনদের সাথে কথা বলেছে এই প্রতিদবেদক। তারা ঠাকুরগাঁওয়ে সরকারি উদ্যোগে ডায়ালাইসিস সেন্টার চালুর দাবি জানিয়েছেন।
শহরের রেনাল কিডনি ডায়ালাইসিস সেন্টারে এই প্রতিবেদকের সাথে কথা বলেছে পঞ্চগড় থেকে আসা আজগর আলী। জানান, স্ত্রীর দুটো কিডনি নষ্ট। আড়াই বছর ধরে দেশে বিদেশে স্ত্রীর চিকিৎসার ব্যয় সামলাতে ৪৫ লাখ টাকা খরচ হয়েছে। যার অর্ধেকের বেশি ব্যয় হয়েছে ডায়ালাইসিস করাতে গিয়ে।
তিনি বলেন, দিনাজপুর মেডিকেল কলেজে সরকারি উদ্যোগে ডায়ালাইসিস হয়। সেখানে মাত্র ৪০০ টাকা দিয়ে ডায়ালাইসিস গ্রহণ করা যায়। কিন্তু রাস্তা দূর হওয়ায় রোগীকে নিয়ে ভোগান্তি হয়। রোগীর সমস্যা হয়। ঠাকুরগাঁও-পঞ্চগড়ের যোগাযোগ ব্যবস্থা ভালো ও সহজ। তাই ৩৫০০ টাকা ফি দিয়ে এখানেই সেবা নেই। সপ্তাহে ২-৩ টা ডায়ালাইসিস নিতে প্রচুর টাকা ব্যয় হয়। এমন ব্যয় বেশিদিন করতে পারবেননা এমন শঙ্কা প্রকাশ করে এ জেলাতে সরকারি উদ্যোগে ডায়ালাইসিস সেন্টার চালুর দাবি জানিয়েছেন তিনি।
একই সেন্টারে কথা হয় কিডনি রোগী মনির উজ- জমান (৬৫) এর সঙ্গে। তিনি বলেন, আমার জানামতে ঠাকুরগাঁও-পঞ্চগড়ে অনেক রোগী কিডনি সমস্যায় ভুগছেন। আমি নিজেও সাড়ে তিন বছর ধরে ডায়ালাইসিস গ্রহণ করছি। বেসরকারি সেন্টারগুলোতে মধ্যবিত্ত ও গরীব রোগীদের সেবা গ্রহণ করা অসম্ভব। কারন ডায়ালাইসিস একটি ব্যয়বহুল চিকিৎসা। অনেকে অর্থের অভাবে বিনা চিকিৎসা মারাও গেছেন। অনেকে আবার সর্বস্ব ফুরিয়ে নিঃস্ব। সরকার জেলা শহরের হাসপাতাল গুলোতে ডায়ালাইসিস সেন্টার চালুর উদ্যোগ নিলে আমরা উপকৃত হবো। আমি সরকারি হাসপাতালে ডায়ালাইসিস সেন্টার চালুর দাবি জানাচ্ছি ।
হিসাব করে জানা যায় একজন রোগী সপ্তাহে দুইবার ডায়ালাইসিস গ্রহণ করলে প্রতি ডায়ালিসেসে খরচ বহন করতে হয় ৩৫০০ টাকা। এতে বছরে দাড়ায় ৩ লাখ ৬৫ হাজার টাকা। অন্যদিকে সরকারি হাসপাতালে ডায়ালাইসিস সেবা চালু হলে
একজন রোগী বছরে ৫০-৬০ হাজার টাকায় ডায়ালাইসিস সেবা গ্রহণ করতে পারবেন।
কোন কোন রোগীর অর্থনৈতিক অবস্থা বিবেচনা করে অনেক সময় লাভের আশা ছেড়ে ২৫০০-৩০০০ হাজার টাকা নেয় বেসরকারি ডায়ালাইসিস সেন্টারগুলো।
কিডনি রোগের চিকিৎসা করাতে গিয়ে নিঃস্ব হয়েছে ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার দেহন উচ্চ বিদ্যালয়ের ইংরেজী শিক্ষক রণজিৎ রায়ের পরিবার। অবশেষে টাকার অভাবে চিকিৎসা ঠিক মতো না পাওয়ায় গত ১৫ জানুয়ারি রোববার মারা গেছেন তিনি।
শিক্ষকের মৃত্যুর খবর নিশ্চিৎ করে দেহন উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মতিয়র রহমান রানী বলেন, কিডনি রোগের চিকিৎসায় ব্যয় অনেক। সর্বস্ব দিয়েও শিক্ষক রণজিৎকে বাঁচানো যায়নি। রংপুর ও দিনাজপুরে ডায়ালাইসিসের জন্য নেয়া হতো তাকে। পরিবারটি শুধু নিঃস্ব হয়নি ভোগান্তি পোহাতে হয়েছে অনেত।
রেনাল কিডনি ডায়ালাইসিস সেন্টার এর পরিচালক কাজল রানা বলেন, ডায়ালাইসিস সেন্টার সেবা দেয়ার উদ্দেশ্যে চালাচ্ছি ৩ হাজার থেকে ৩ হাজার ৫০০ টাকা নিলেও খরচ কুলিয়ে উঠা যায়না৷ বেসরকারি সেন্টারগুলোতে রোগীরা খরচ বহন হিমসিম খায়। এমন সময় অনেকে এ টাকাও দিতে পারেনা। সরকারি উদ্যোগে ডায়ালাইসিস করা হলে অবশ্যয় রোগীরা উপকৃত হবে। কারন সরকারি হাসপাতালে ভর্তুকী দিয়ে ডায়ালাইসিস সেবা দেন।
ঠাকুরগাঁও আধুনিক সদর হাসপাতালের তত্বাবধায়ক ড. ফিরোজ জামান জুয়েল বলেন, ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালে ডায়ালাইসিস সেন্টার চালুর জন্য আলোচনা চলছে। আমাদের জনবল কম থাকা সত্বেও আমরা বলেছি ডায়ালাইসিস সেন্টার চালিয়ে নিতে পারবো৷ সব ঠিক থাকলে শিঘ্রই ডায়ালাইসিস সেবা চালু হবে।