মোঃ নূরুল ইসলাম, চাটমোহর,পাবনা ঃ
বৈধ কাগজপত্র থাকা সত্ত্বেও প্রায় একশ’ বছরের বেশি সময় ধরে ভোগ দখলে থাকা জমি প্রতিপক্ষের হামলার ভয়ে চাষাবাদ করতে পারছেন না পাবনার চাটমোহরের কয়েকজন জমির মালিক। ফলে দীর্ঘদিন যাবত প্রায় ১৮ বিঘা জমি অনাবাদী পরে রয়েছে। এ অবস্থায় যেকোনো সময় সংঘর্ষের আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
উপজেলার দাঁথিয়া কয়রাপাড়া গ্রামের ভূক্তভোগী পরিবারের সদস্য আতাহার আলী ও আব্দুল মজিদের অভিযোগ এবং তাদের সকল কাগজপত্র পর্যালোচনা করে জানা যায়, ১৯২৬ সাল থেকে পৈত্রিকভাবে প্রাপ্ত জমি ভোগ দখল করে আসছেন তারা। তাদের স্বপক্ষে সকল বৈধ কাগজপত্র রয়েছে। সেই জমির মধ্যে নিজেদের ওয়ারিশ দাবি করে ১৯৮৫ সালে আকবার মোল্লার ছেলে এস্কেন্দার আলী একটি মামলা দায়ের করেন। পরবর্তীতে ওই জমির মালিকদের মধ্যে তারা ওয়ারিশ নন বিষয়টি প্রমাণিত হলে মামলা খারিজ করেন আদালত।
অত:পর এস্কেন্দার গং ১৯৯২ সালে অপর আরেকটি মামলা দায়ের করেন। ১৯৯৩ সালে এ নিয়ে স্থানীয় শালিস বৈঠকে মানবিক কারণে তাদের ১ একর ৬৩ শতক জমি দিয়ে বিরোধ নিষ্পত্তি করা হয়। কিছুদিন পর স্বাক্ষর জাল করে এস্কেন্দার গং ৪ একর ১৭ শতক জমি তাদের নামে খারিজ করে নেন। এ বিষয়টি জানার পর আতাহার আলী, আব্দুল মজিদ গং চাটমোহর সহকারী কমিশনার (ভুমি) আদালতে মিসকেস মামলা দায়ের করেন। সেখানে জাল স্বাক্ষরের বিষয়টি প্রমাণিত হলে এসকন্দোর গংয়ের খারিজ বাতিল হয়ে যায়।
এদিকে, ১৯৯৮ সালের ১১ আগস্ট এস্কেন্দার আলীর মাতার মৃত্যু হলেও ১৯৯৯ সালে মৃত মা কে জীবিত দেখিয়ে তাকে বাদী করে সুকৌশলে একটি মামলা করেছিলেন এস্কেন্দার আলী। বাদী মৃত ব্যক্তি হওয়ার বিষয়টি প্রমাণিত হলে ২০০৫ সালের ২৮ আগস্ট বিচারক ওই মামলাটিও খারিজ করে দেন।
ভুক্তভোগী জমির মালিক আতাহার আলী ও আব্দুল মজিদ বলেন, এস্কেন্দার আলী গং এভাবে বছরের পর বছর একের পর এক মিথ্যে মামলা দায়ের করে তাদের পরিবারের সদস্যদের হয়রানী করে আসছেন। তারা গায়ের জোড়ে জমি নিজেদের দাবি করে জমি চাষ করতে দিচ্ছেন না। এ নিয়ে অনেকবার হামলা করে আমাদের পরিবারের লোকজনকে মারপিট করে আহত করেছে।
এমতাবস্থায় প্রায় ১৮ বিঘা জমি চাষ করতে পারছেন না আতাহার আলী ও আব্দুল মজিদ। ইতিমধ্যে জমি অনাবাদি থাকায় কয়েক লাখ টাকার ক্ষতির মুখে পড়েছেন তারা। প্রতিপক্ষের হুমকি ধামকীতে যেকোনো সময় সংঘর্ষ ও প্রাণহানীর ঘটনা ঘটতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন ভুক্তভোগীরা। এর প্রতিকার পেতে তারা সংশ্লিষ্ট উর্ধতন মহলের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।
অভিযোগের বিষয়ে একই গ্রামের বাসিন্দা এস্কেন্দার আলী জানান, আদালতে তিনি আপিল করেছেন। জমি কে পাবে তা নির্ধারণ করবে আদালত। তবে, আপিল করেছেন বলে জানালেও আপীলের স্বপক্ষে কোন কাগজপত্র দেখাতে পারেননি।
এ বিষয়ে চাটমোহর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জালাল উদ্দিন বলেন, আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি ঠিক রাখতে আমরা চেষ্টা করছি। অভিযোগের ভিত্তিতে দুই পক্ষকে আপোষ মিমাংসার জন্য তাদের কাগজপত্রসহ থানায় ডাকা হয়েছে। তাদের বিষয়টি সমাধানের চেষ্টা করা হচ্ছে, যাতে কোনো ঝামেলা না হয়।