চাটমোহর (পাবনা) প্রতিনিধি
সরকার যখন ফসল উৎপাদন বৃদ্ধিতে প্রতি ইঞ্চি ভূমির যথার্থ ব্যবহার নিশ্চিতের নিদের্শনা দিচ্ছেন এমন সময়ে বৈধ কাগজ পত্র থাকা সত্ত্বেও প্রায় একশ বছর যাবত ভোগ দখলাধীন জমি প্রতিপক্ষের হামলার ভয়ে চাষাবাদ করতে পারছেন না চাটমোহরের কয়েকজন জমির মালিক। ফলে দীর্ঘ দিন যাবত প্রায় ১৮ বিঘা জমি অনাবাদী পরে রয়েছে। প্রতিকার পেতে বুধবার (১৮ জানুয়ারী) দুপুরে উপজেলার দাঁথিয়া কয়রাপাড়া গ্রামের আব্দুল মজিদের বাড়িতে সাংবাদিক সম্মেলন করেছেন ভূক্তভোগী পরিবারের সদস্যরা। এ সাংবাদিক সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন ভূক্তভোগী আতাহার আলী।
লিখিত বক্তব্য সূত্রে জানা যায়, পাবনার চাটমোহর উপজেলার দাঁথিয়া কয়রাপাড়া মৌজার জেএল নং ১৩৯, খতিয়ান নং ১২০ এর ৪২ বিঘা জমির মূল মালিক সখাত প্রাং এর মৃত্যুর পর তার ওয়ারিশগন আয়েন উদ্দিনকে ১৯১৩ সালে ২৪২৫ নং দলিল মূলে ৪২ বিঘা জমি হস্তান্তর করেন। আয়েন উদ্দিন ১৯১৪ সালে ১৬৩ নং দলিল মূলে ছিরু বেওয়া বরাবর হস্তান্তর করেন। আয়েন উদ্দিন অন্যের নিকট আরো ৫ বিঘা হস্তান্তর করেন। তার মৃত্যুর পর ওয়ারিশ বয়ান প্রাং এবং মাতা ছিদ্দিকা বিবি ওরফে শ্রদ্ধা বেওয়া ১৯১৭ সালে ৯৫৬ নং দলিল মূলে ছিরু বিবি বরাবর হস্তান্তর করেন। বয়েন প্রাং তার অংশ ১৯২৬ সালে ৬০৫ নং দলিল মূলে আসান আলী বরাবর হস্তান্তর করেন। জমিদারী প্রথানুযায়ী বয়েন উদ্দিনের ৬ একরের অধিকসহ মোট ৯ একর ২৩ শতক জমির মালিক হন নম্বর প্রাং। শ্রদ্ধা বিবি ১৯২৬ সালে ৯৫৬ নং দলিল মূলে নম্বর প্রাং বরাবর আরো ৫ একর ৭৩ শতক জমি হস্তান্তর করেন। খরিদ, পত্তন, ওয়ারিশ ও হেবা দলিল সূত্রে মোট ১৪ একর ৯৬ শতক র্ভমির মালিক হন নম্বর প্রাং। পরে তার পুত্র ময়েজ উদ্দিন ও মনছের আলী তাদের নামে এ জমির খাজনা খারিজ করেন। ডিএস রেকর্ডে ভুলবশত ছিদ্দিকার নামেও রেকর্ড হয়।
এসএ রেকর্ডের সময় ময়েজ প্রাং ও মনছের প্রাং এর নামে ১৪ একর ৯৬ শতক জমি ২১৩ খতিয়ানে লিপিবদ্ধ হয়। এ খতিয়ানে টেমপার করে আগবার আলীর নাম বসানো হয়। জনৈক সিরাজ উদ্দিন শেখ সুকৌশলে নিজ নামে ১ একর ৬৬ শতক জমি ২১৪ খতিয়ানে পৃথক করে নেন।
১৯৮৫ সালে আগবার মোল্লার ছেলে এস্কেন্দার দিং ৮৪/৮৫ নং মামলা দায়ের করেন। অতপর এস্কেন্দার দিং ১৯৯২ সালে অপর একটি মামলা নং ৫৪/৯২ দায়ের করেন। দীর্ঘদিন মামলা চলার পর ১৯৯৩ সালে স্থানীয় শালিস বৈঠকে কাগজপত্র পর্যালোচনা করে দেখা যায় এস্কেন্দার গং জমি পান না। মানবিক কারণে তাদের ১ একর ৬৩ শতক জমি দিয়ে নিষ্পত্তি করা হয়। কিছু দিন পর ময়েজ উদ্দিনের স্বাক্ষর জাল করে এস্কেন্দার গং ৪ একর ১৭ শতক জমি তাদে নামে খারিজ করে নিলেও অভিযোগের ভিত্তিতে সহকারী কমিশনার (ভুমি) খারিজ বাতিল করেন। এস্কেন্দার গং আপিল করলেও তা নামঞ্জুর হয়।
১৯৯৮ সালের ১১ আগস্ট এস্কেন্দার এর মাতার মৃত্যু হলেও ১৯৯৯ সালে মৃত মা কে বাদী করে সুকৌশলে অপর ১১৭/৯৯ নং মামলা দায়ের করেন এস্কেন্দার গং। মৃত ব্যক্তি বাদী হওয়ার বিষয়টি পরিষ্কার হলে ২০০৫ সালের ২৮ আগস্ট বিচারক মামলাটি ডিসমিস করেন।
বছরের পর বছর একের পর এক মিথ্যে মামলা দায়ের করে জয়লাভ করতে না পারলেও এস্কেন্দার আলী মৃত ময়েজ উদ্দিনের ছেলে আতাহার আলী, আব্দুল মজিদসহ তার পরিবারের সদস্যদের হয়রানী করে আসছেন বলে অভিযোগ ভুক্তভোগী পরিবারের। গায়ের জোড়ে তাদের জমি চাষ করতে দিচ্ছেন না এস্কেন্দার গং। অনেকবার হামলা করে আতাহার আলী ও আব্দুল মজিদের পরিবারের লোকজনকে মারপিট করে আহত করেছে। অর্থনৈতিক পরিবারটিকে ক্ষতির সম্মুখীন করছে। জমি চাষ করতে গেলে খুন জখমের ভয় দেখিয়ে আসছে। এমতাবস্থায় প্রায় ১৮ বিঘা জমি চাষ করতে পারছেননা আতাহার আলী ও আব্দুল মজিদ। এর প্রতিকার পেতে তারা সংশ্লিষ্ট উর্ধতন মহলের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।
এ ব্যাপারে এস্কেন্দার আলী জানান, জমি কে পাবে তা নির্ধারণ করবে আদালত। তিনি আপিল করেছেন বলে জানালেও আপীলের স্বপক্ষে কোন বৈধ কাগজ পত্র দেখাতে পারেন নি।
এ সাংবাদিক সম্মেলনে আইয়ুব সরকার, আইনুল হক, ইন্তাজ আলী, আলহাজ সোহরাব প্রাং, ডাক্তার হাবিবুর রহমান, শহীদুল্লা সরকারসহ গ্রামের অনেকে উপস্থিত ছিলেন।