ইয়ানূর রহমান : দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর যশোরের সীমান্তবর্তী হাকর নদীর খনন কাজ শুরু করেছে পানি উন্নয়ন বোর্ড। এতে বেনাপোল পৌরবাসী উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেছেন।
গত সোমবার সকাল থেকে খনন কাজ শুরু হয়েছে বলে পাউবো যশোরের উপ-সহকারী প্রকৌশলী সাইদুর রহমান জানান।
তিনি বলেন, “প্রাথমিকভাবে বেনাপোলের সাদিপুর চেকপোস্ট থেকে নারায়ণপুর পর্যন্ত পাঁচ কিলোমিটার খনন করা হবে। ২২ কিলোমিটার দীর্ঘ কোদলা নদীর বাকি অংশ পরবর্তী সময়ে ধাপে ধাপে খনন করে বিভিন্ন বিলের সঙ্গে সংযোগ পুনঃস্থাপন করা হবে।”
যশোরের সীমান্তবর্তী শার্শা উপজেলার বেনাপোলের সাদিপুর গ্রামে ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তের ১৮ নম্বর সীমানা পিলার এলাকা দিয়ে হাকর নদী বাংলাদেশে ঢুকেছে।
উপজেলার বড়আঁচড়া, ছোটআঁচড়া, ভবারবেড়, বেনাপোল ও নারায়ণপুর মৌজার মধ্য দিয়ে রঘুনাথপুরের কোদলা নদী হয়ে বেতনা নদীর সঙ্গে মিশে গেছে এ নদী।
অবশেষে সীমান্তের হাকর নদী খনন শুরু, উচ্ছ্বসিত বেনাপোলবাসী স্থানীয়রা প্রত্যাশা করছেন, নদীটি খনন হলে তারা বন্যার প্রকোপ থেকে রক্ষা পাবেন এবং একে দখল করে গড়ে উঠা ভবন, মাছের ঘের, পুকুরসহ নানা স্থাপনাও এ সময় উচ্ছেদ করে নদীর স্বাভাবিক গতি-প্রবাহ ফিরিয়ে আনা হবে।
বেনাপোল পৌরসভার প্রকৌশলী আবু সাইদ বলেন, “পৌরবাসীর দীর্ঘ দিনের দাবির মুখে হাকর নদী খনন শুরু হয়েছে। কয়েকটি ধাপে খনন কাজ শেষ হবে। নদীর ধারে গাছ লাগানোসহ ওভারব্রিজ করার পরিকল্পনা রয়েছে। এতে সুন্দর ও মনোরম পরিবেশ ফিরে পাবে বন্দর নগরবাসী।”
অবশেষে সীমান্তের হাকর নদী খনন শুরু, উচ্ছ্বসিত বেনাপোলবাসী তিনি আরও বলেন, এখনও কোনো উচ্ছেদ কার্যক্রম চালানো হয়নি। খনন কাজের প্রয়োজনে তা চালানো হবে। অনেকেই জমি রেকর্ড করে নিয়েছেন। সেক্ষেত্রে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
যেহেতু নদীটি দখল করে অনেক প্রভাবশালী স্থাপনা তৈরি করেছেন ফলে খনন কাজের সময় তারা বাধা দিতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
তবে এখন পর্যন্ত কোনো বাধা আসেনি বলে জানিয়েছেন পাউবোর প্রকৌলশী সাইদুর রহমান। তিনি বলেন, আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী খনন কাজ চলছে। খনন শুরুর আগে রেকর্ড অনুসরণ করা হচ্ছে। এখনও তেমন কোনো বাধা আসেনি।
হাকর নদী দখলমুক্ত করা ও খননের উদ্যোগকে সাধুবাদ জানিয়েছেন বেনাপোল পৌর আওয়ামী লীগের সহসভাপতি আলী কদর সাগর ।
অবশেষে সীমান্তের হাকর নদী খনন শুরু, উচ্ছ্বসিত বেনাপোলবাসী তিনি গ্রামের সংবাদকে বলেন, “ভারতের পেট্রাপোলে বাংলাদেশে প্রবেশমুখে বেড়িবাঁধ দিয়ে নদীর পানি চলাচল নিয়ন্ত্রণে রাখা হয়েছে। কিন্তু প্রতি বছর বর্ষাকালে পানির চাপে বাঁধ খুলে দিলে বেনাপোল সীমান্তে বন্যার সৃষ্টি হয়। খনন হলে মানুষ বন্যা থেকে রক্ষা পাবে।”
বেনাপোল পৌর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সাদিপুর গ্রামের আরিফুজ্জামান ভাদু বলেন, আন্তঃসীমান্ত নদীটি দখলদারদের কারণে নাব্যতা হারিয়েছে। এতে পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থা না থাকায় প্রতিবছর শার্শা উপজেলার
বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হয়ে ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়।
“নদী দখলমুক্ত করতে বিভিন্ন সময় আমরা আন্দোলন-সংগ্রাম করেছি। সরকার খননের উদ্যোগ গ্রহণ করায় আমরা আনন্দিত।”
স্থানীয়রা জানান, ১৯৫৫ সালের পর থেকে হাকর নদী দুই তীরের প্রভাবশালীরা দখল শুরু করে। ভূমি কর্মকর্তাদের যোগসাজসে ১৯৬২ সালের পর নদী অধিকাংশই দখল হয়ে যায়। অনেক সময় চেষ্টা করেও সেটি দখলমুক্ত করা যায়নি।
ভারত সীমান্ত থেকে বেনাপোল পৌর ভবন পর্যন্ত হাকর নদীকে দখলমুক্ত করে পৌরবাসীর জন্য একটি সরোবর (লেক) তৈরির পরিকল্পনা করেছিলেন বেনাপোল পৌরসভার সদ্য সাবেক মেয়র আশরাফুল আলম লিটন।
তিনি সেসময় গ্রামের সংবাদকে বলেছিলেন, “হাকর নদী উন্মুক্তকরণের জন্য মন্ত্রণালয়ের আদেশের অপেক্ষায় আছি। বর্ষা মৌসুমে পানির চাপ বৃদ্ধি পেলে শার্শার বাহাদুরপুরের বিপরীতে ভারতের শুটিয়ায় ফারাক্কার আদলে একটি বাঁধ দিয়ে পানির প্রবাহে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করছে। অতিরিক্ত পানির চাপ এলেই ভারত সেই বাঁধ খুলে দেয়। এতে বর্ষা মৌসুমে শার্শার বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হয়।”