.. সঞ্জু রায় (দার্জিলিং থেকে ফিরে): ভ্রমণ পিপাসুদের কাছে প্রাকৃতির সৌন্দর্য্যের এক অপরুপ ক্ষেত্র হিসেবে ভারতের পশ্চিমবঙ্গের দার্জিলিং শহর বরাবরই সেরা। বিস্তৃর্ণ এলাকাজুড়ে চা বাগান, পাহাড় কেটে করা ভিন্ন ভিন্ন সাজে নির্মিত বাড়ি ও বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনায় রাতের আলোয় চোখধাঁধানো সৌন্দর্য্য, ইউনেস্কো হেরিটেজ খ্যাত হিমালয়ান রেললাইন আর শীতকালে মেঘের ভেলাকে ভেদ করে হিমালয়ের কাঞ্চনজঙ্ঘার সাদা শুভ্রতার এক অপরুপ সৌন্দর্য্যে যেন সেজে আছে এই শহর যা দেখতে বর্তমানে ভীড় জমিয়েছে দেশ ও বিদেশের হাজারো পর্যটক।
পাহাড়ের উঁচু নিচু পথে সৌন্দর্য্যমন্ডিত এই শহর যেন সারাবছর অপেক্ষায় থাকে পর্যটকদের বরণ করতে আর পর্যটকরাও আপন আনন্দে উপভোগ করেন দার্জিলিং শহরের সৌন্দর্য্যকে। হিমালয়ের শিবালিক পর্বতশ্রেণীতে সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ৬ হাজার ৭’শ ফুট উচ্চতায় অবস্থিত এই শহরটিতে কাঞ্চনজঙ্ঘা ছাড়াও রয়েছে বেশ কয়েকটি আকর্ষণীয় পর্যটন কেন্দ্র সেগুলো হলো, পদ্মজা নাইডু হিমালয়ান জুলজিকাল পার্ক, বেঙ্গল ন্যাচারাল হিস্টোরি মিউজিয়াম, ধীরধাম মন্দির, লাউডস্ বোটানিক্যাল গার্ডেন, লেবং রেস কোর্স, ঘুম বৌদ্ধ মনেস্ট্রি, বাতাসিয়া লুপ ইত্যাদি।
তবে দার্জিলিং গেলেই পর্যটকরা যে সুযোগ টা কখনোই মিস করেনা তা হলো টাইগার হিল থেকে পাহাড় চিড়ে সকালের সূর্যোদয় দেখা। সাথে সাথেই সূর্যের প্রথম কিরণ কাঞ্চনজঙ্ঘায় পড়ে যে অপরুপ আলোময় এক সৌন্দর্য্যের জন্ম দেয় তা যেন সৃষ্টির সকল সৌন্দর্য্যকে হার মানায়। আর টাইগার হিল থেকে সূর্যোদয় দেখা ও কাঞ্চনজঙ্ঘায় সূর্যের আলোর অপরুপ এই ঝলকানি দেখতে ভোর ৪ টা থেকে এই হিলে ভিড় জমায় হাজার হাজার দেশি বিদেশী পর্যটক অনেকে তো আবার রাত থেকেই অপেক্ষা করেন এখানে। আবহাওয়া অনুকুলে থাকলে আর পর্যটকদের ভাগ্য সহায় হলে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই টাইগার হিল থেকে দার্জিলিং ভ্রমনের সেরা অভিজ্ঞতা অর্জন এবং কাঞ্চনজঙ্ঘার অপরুপ শুভ্রতা দেখার সুযোগ পাওয়া যায়। প্রত্যক্ষ দর্শনে দেখা যায়, পাহাড় ও দার্জিলিং শহরের চারিদিকে লাল আভা ছড়িয়ে সকাল আনুমানিক ৫.৩০ টার দিকে মূহুর্তের মধ্যেই সূর্যোদয় হয়ে যায় টাইগার হিল থেকে যে দৃশ্য দেখে মনে হয় গোলাকার লাল কোন সৃষ্টিকে কেউ যেন নিজে হাতে উপরে তুলে দিচ্ছে। এদিকে পুরোপুরি সূর্যোদয়ের আগে থেকেই সূর্যের কিরণ সরাসরি গিয়ে প্রথমে পড়ে কাঞ্চনজঙ্ঘার শীর্ষে তখন বরফে ঢাকা হিমালয়ের এক অপরুপ সৌন্দর্য্য উপভোগ করতে পারে পর্যটকরা যে দৃশ্য মন কাড়ে সকলেরই।
এদিকে সন্ধ্যার পর দার্জিলিং শহর যেন সেজে উঠে তার নিজস্ব সাজে। রাস্তার দুইধারে বাহারি স্ট্রিট ফুডের সমারোহ, পাহাড়ি নিজস্ব পণ্যের দোকানসহ নানা দোকানের পশরা। আর পর্যটকরা বেশি ভীড় জমায় মল মার্কেট এলাকাতে আর রাস্তার ধারের দুই পাশের দোকানগুলোতেই। পাহাড়ি জনগোষ্ঠীদের নিজেদের হাতে তৈরি চাদরসহ শীতে টুপি, মাফলার, মোজা কিংবা গরম কাপড় সবকিছুই পাওয়া যায় হাতের নাগালেই তবে যেকোন জিনিসই একটু দামাদামি করে কেনাই বুদ্ধিমানের কাজ কারণ পর্যটক এলাকা হওয়ায় এখানে একদরের কোন দোকান নেই বললেই চলে। আবার দার্জিলিং এ খাবার নিয়ে বললে আপনি বাঙালি হলে চাইলেই এখানকার হোটেলে একদম শুদ্ধ বাংলা খাবার পেয়ে যাবেন খুব সহজেই। ভাত, ডাল, আলু ভাজি, ডিম অমলেট, মুরগির মাংস কিংবা সবজি সবদিয়ে পেটপুড়ে খেতে নিতে পারেন ভারতীয় রুপিতে ২’শ টাকা থেকে আড়াইশ টাকার মধ্যেই। তবে দার্জিলিং ঘুরতে এসে পর্যটকরা এখানে ফাস্টফুড বিভিন্ন আইটেম যেমন, চিকেন রোল, ভিন্ন ভিন্ন স্বাদের চপ, নুডুলস্ আর সবচেয়ে বেশি যেটি খায় তা হলো মমো।
তবে রাত ৯ টা থেকে ১০ টার পর দার্জিলিং যেন নিজেও ঘুমিয়ে যায় তখন বাহিরে কোন দোকানপাট খোলা না থাকলেও আপনি চাইলে নিজে নিশ্চিতে ঘুরতে পারেন এখানকার জিরো পয়েন্ট, ক্লক টাওয়ার এলাকা কিংবা মল মার্কেট এলাকায় যেখানে পর্যটকদের নিরাপত্তা নিশ্চিতে সর্বদা নিয়োজিত রয়েছে দার্জিলিং পুলিশের সদস্যরা। তবে এই শীতে পর্যটকরা রাতে নিজে থেকেই কোনভাবেই বাহিরে থাকতে চাইনা দিনে এবং সন্ধ্যায় শহরে ঘোরাঘুরি শেষে হোটেল রুমে কিছুটা বিশ্রাম নেয়াতেই স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন সকলে। সাজানো গোছানো এই শহরে স্বল্প খরচে ঘুরে আসা যায় খুব সহজেই তাইতো পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন শহরের বাসিন্দাসহ বাংলাদেশ থেকে প্রতিবছর হাজারো পর্যটক ঘুরতে আসে এই দার্জিলিং এ যেখানে পাহাড়ি জীবনযাত্রায় যেন পর্যটকরাও মিশে যায় এই শহরের নানা ঐতিহ্য ও সৌন্দর্য্যের মাঝে।