শীতে পাকা পেঁপের পানি ক্যানসারের ঝুঁকি কমায়

শীতে পেঁপে খাওয়া স্বাস্থ্যের জন্য খুবই উপকারী। বিশেষজ্ঞদের মতে, পেঁপের মধ্যে যে উষ্ণ প্রভাব রয়েছে তা ঠান্ডা আবহাওয়ায় শরীরকে ভিতর থেকে গরম করে। এছাড়াও রোগের বিরুদ্ধে লড়াই করার শক্তি দেয়।

পেঁপেতে রয়েছে কার্বোহাইড্রেট, প্রোটিন, ফাইবার বা আঁশ, পটাশিয়াম, ভিটামিন এ, ভিটামিন সি, ভিটামিন বি৯ এবং প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট। তা ছাড়া অল্প পরিমাণে রয়েছে ম্যাগনেশিয়াম, ক্যালসিয়াম, ভিটামিন ই, ভিটামিন কে এবং কয়েক ধরনের ভিটামিন বি। অসাধারণ পুষ্টিগুণ ও স্বাদের কারণে পেঁপে পৃথিবীজুড়ে বেশ জনপ্রিয়। পেঁপে একাধারে ফল ও সবজি হিসেবে খাওয়া হয়।

পেঁপে স্বাস্থ্যের জন্য সেরা বলে শীতে খাওয়ার পরামর্শ দেন বিশেষজ্ঞরা। আসলে এই ফলটির মধ্যে অনেক ওষধি গুণ ও পুষ্টিগুণ রয়েছে। তাই তো পুষ্টিবিদরা এই ফলটিকে ডায়েটে রাখার পরামর্শ দেন। বিশেষ করে শীতের মৌরসুমে পেঁপে খেলে আপনাকে অনেক রোগের হাত থেকে বাঁচা যায়। ঠিক তেমনই উপকারী পেঁপের পানি।

পুষ্টিবিদদের মতে, প্রতিদিন সকালে পাকা পেঁপের পানি খেলে আপনার শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বেড় যায়। এমনকি ক্যানসারের মতো জটিল রোগ প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে। পেঁপের স্বাস্থ্য উপকারিতা আমরা সকলেই জানি প্রায়, কিন্তু এর পানির উপকারিতার কথা কম মানুষই জানেন। পেঁপের পানি খেলে কী কী উপকার হয় জেনে নিন পুষ্টিবিদের থেকে।

​শরীরের ওজন কমায়

পেঁপেতে রয়েছে প্যাপেইন নামক এনজাইম, যা খাবারকে দ্রুত ভাঙতে সাহায্য করে। পেঁপেতে রয়েছে আরেকটি এনজাইম কাইমোপেইন। যা প্রদাহ কমায় এবং বিপাক ক্রিয়াকে উন্নত করতে সাহায্য করে। যার ফলে হজম দ্রুত হয়। নতুন বছরে যদি ওজন কমানোর সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকেন তাহলে রোজকার খাদ্যতালিকায় পেঁপের জল অন্তর্ভুক্ত করতে ভুলবেন না। ফাইবার সমৃদ্ধ এই জল আপনাকে দীর্ঘ সময়ের জন্য পূর্ণ রাখতে এবং অন্ত্রের গতিবিধি সহজ করতে সাহায্য করে।

ক্যানসার রোগের ঝুঁকি কমায়

পেঁপেতে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার রয়েছে যা পানিতে সিদ্ধ করলে তা থেকে লাইকোপিন পাওয়ায়। শরীরের জন্য খুবই উপকারী এবং ক্যানসার প্রতিরোধকারী এই জল। নিয়মিত পেঁপের পানি পান করলে স্তন, কোলন এবং প্রোস্টেট ক্যানসার থেকে প্রতিরোধ করা যায়।

রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়

পেঁপের পানিতে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি রয়েছে। এই ভিটামিন রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিকারী হিসাবে পরিচিত। খালি পেটে পেঁপের পানি খাওয়ার ফলে প্রতিদিনের ভিটামিন সি চাহিদার ২০০% শতাংশ পাওয়া যায়। এমন অবস্থায় শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা দ্রুত বৃদ্ধি পায়।

​ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখে

আপনি যদি ডায়াবেটিক রোগী হন এবং আপনার রক্তে শর্করা নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করেন, তাহলে পেঁপের পানি আপনার জন্য উপকারী হতে পারে। পেঁপের গ্লাইসেমিক ইনডেক্স স্কোর ৬০, তাই এটি রক্তে শর্করা না বাড়িয়ে শরীরে অনেক উপকার করে, যা সুগার নিয়ন্ত্রণে কাজ করে।

যেভাবে বানাবেন পাকা পেঁপের পানি

প্রথমে একটি পাকা পেঁপের খোসা ছাড়িয়ে নিন। ভিতরের বীজ কেটে ফেলে দিন। এ বার ছোট ছোট টুকরো করে নিন। বড় একটি পাত্রে পানি ফুটতে দিন। এর মধ্যে দিয়ে দিন কেটে রাখা পাকা পেঁপের টুকরোগুলো। আরও পাঁচ মিনিট ফোটান। পেঁপে কিছুটা সিদ্ধ হয়ে এলে গ্যাস বন্ধ করে দিন। স্বাভাবিক তাপমাত্রায় এলে সকালে খালি পেটে পান করুন। কাচের বোতলে ভরে ফ্রিজেও রাখতে পারেন।

যাদের জন্য পেঁপে খাওয়া ক্ষতিকর

অ্যালার্জির সমস্যা: অ্যালার্জিতে আক্রান্ত ব্যক্তিদেরও পেঁপে থেকে অ্যালার্জি হতে পারে। এটি ঘটে কারণ পেঁপেতে কাইটিনেস নামক এনজাইম থাকে। এনজাইম ল্যাটেক্স এবং এ জাতীয় খাবারের মধ্যে পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া ঘটাতে পারে। যার ফলে হাঁচি, শ্বাসকষ্ট, কাশি এবং চোখ পানি আসে। অনেকের আবার পেঁপের গন্ধেও সমস্যা হতে পারে।

কিডনিতে পাথর: পেঁপেতে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি রয়েছে। অ্যান্টি অক্সিডেন্ট রয়েছে পেঁপেতে। তবে ভিটামিন সি অধিক পরিমাণে গ্রহণ করলে কিডনিতে পাথর হওয়ার মতো সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে। ভিটামিন সি অত্যধিক গ্রহণের ফলে ক্যালসিয়াম অক্সালেট কিডনিতে পাথর তৈরি হতে পারে। এমনকি এটি পাথরের আকার বাড়িয়ে তুলতে পারে। আর এতে করে প্রসাবে সমস্যা তৈরি হয়।

হাইপোগ্লাইসেমিয়া আক্রান্ত: ডায়াবেটিসে আক্রান্তদের জন্য পেঁপে একটি উপযুক্ত ফল মনে করা হয় কারণ এটি রক্তে শর্করার পরিমাণ নিয়ন্ত্রণ করতে পারে। কিন্তু যারা এরইমধ্যে হাইপোগ্লাইসেমিয়ার সমস্যায় ভুগছেন তাদের জন্য এটি ক্ষতিকর হতে পারে। কারণ মিষ্টি জাতীয় ফলে অ্যান্টি-হাইপোগ্লাইসেমিক বা গ্লুকোজ-হ্রাসকারী প্রভাব রয়েছে। এটি হাইপোগ্লাইসেমিয়ায় আক্রান্ত ব্যক্তিদের রক্তের গ্লুকোজের মাত্রাকে বিপজ্জনক স্তরে নিয়ে যেতে পারে, যার ফলে বিভ্রান্তি, অস্থিরতা, এবং দ্রুত হৃদস্পন্দনের মতো সমস্যা দেখা দেয়।

শ্বাসকষ্টের সমস্যায়: শ্বাসকষ্টের সমস্যায় ভুলেও পেঁপে খাবেন না। এতে আছে অ্যালার্জেন। পেঁপে খেলে হাঁপানির রোগীদের সমস্যা জটিল হয়ে উঠতে পারে। তাই তাঁদের পেঁপে এড়িয়ে চলাই উচিত সুস্থ থাকতে গেলে।

যারা অন্তঃসত্ত্বা: যারা অন্তঃসত্ত্বা তারা ভুলেও পেঁপে খাবেন না। পেঁপের বীজ হোক বা পাতা কিংবা শিকড় ভ্রূণের মারাত্মক ক্ষতি করতে পারে। অন্যদিকে জরায়ু সংকোচন করতে পারে পেঁপে। ফলে ভুলেও এটি খাবেন না।

যাদের হার্টের সমস্যা: যাদের হার্টের সমস্যা আছে তারাও বুঝে এই ফল খান। মোদ্দা কথা, পেঁপে খেলেও সেটা একটা নির্দিষ্ট লিমিটে খান। বেশি খেলেই হতে পারে বিপদ।